টিসিবি পণ্যের জন্য ভোর থেকে লাইন, মিলছে না চাল

চট্টগ্রামের ২০টি পয়েন্টের প্রতিটিতে প্রতিদিন ৪০০ জনের কাছে পণ্য বিক্রি করা হয়, সে হিসেবে প্রতিদিন পণ্য কেনার সুযোগ পান ৮ হাজার মানুষ।
চট্টগ্রাম নগরীর ঝাউতলা এলাকার বাসিন্দা নাসিমা বেগম টিসিবির পণ্য কিনতে ট্রাকের সামনে সারিতে এসে দাঁড়িয়েছিলেন ফজরের নামাজের পর। সকাল ৭টারও অনেক পরে নিত্য প্রয়োজনীয় কয়েকটি পণ্য কিনতে পারলেও মেলেনি চাল।
সেখানকার একজন বিক্রয় কর্মীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “চাল নাই। তেল আর ডাল আছে। চাল আমাদের দেয় না। যা দেয়, তাই নিয়ে আসি। যতক্ষণ মাল থাকে, আমরা বেচি।”
নগরীর চেরাগী পাহাড়ের ঝাউতলার মত চট্টগ্রামের কয়েকটি পয়েন্টে ঘুরে দেখা গেছে, ভোর থেকে লাইনে দাঁড়াচ্ছেন বিভিন্ন বয়সী নারী ও পুরুষ। পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা আগে এসে লাইনে দাঁড়ান কেউ কেউ। তারপরও সবাই পণ্য কিনতে পারেন না। চলতি মাসের ১ তারিখ থেকে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবির ট্রাকে চাল বিক্রি হচ্ছে না।
টিসিবি চট্টগ্রাম অঞ্চলের যুগ্ম পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলছেন, তারা খাদ্য অধিদপ্তরের কাছ থেকে চাল নিয়ে তারপর বিক্রি করেন। চাল না পাওয়ায় বিক্রিও করতে পারছেন না।
তবে চট্টগ্রাম জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুমাইয়া নাজনীন বলছেন, চালোর ‘কোনো ঘাটতি নেই’। টিসিবির চাহিদপাত্র পেলে চাল সরবরাহ করতে তারা ‘প্রস্তুত’।
নগরীর চেরাগী পাহাড় এলাকায় টিসিবির পণ্য বিক্রি হয় সপ্তাহের দুদিন শনি ও মঙ্গলবার; জামালখান মোড়ে বিক্রি হয় সোম ও বৃহস্পতিবার। এরকম নগরীর মোট ২০টি পয়েন্টের প্রতিটিতে সপ্তাহে দুইদিন করে পণ্য বিক্রি করা হয়।
টিসিবি চট্টগ্রাম অঞ্চলের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল কুদ্দুছ জানিয়েছেন প্রতিটি পয়েন্টে প্রতিদিন ৪০০ জনের কাছে পণ্য বিক্রি করা হয়। সে হিসেবে প্রতিদিন পণ্য কেনার সুযোগ পান ৮ হাজার মানুষ।
আব্দুল কুদ্দুছ বলেন, “বেশি চাহিদার বিষয়টি বিবেচনায় রেখেই আগে নির্ধারিত প্রতি ট্রাকে ৩৫০ জন ক্রেতার থেকে সংখ্যা বাড়িয়ে এখন ৪০০ ক্রেতার কাছে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। কিন্তু এখন ডিমান্ড আরো বেশি।”
মঙ্গলবার সকালে ১১টায় নির্ধারিত সময়ে চেরাগী পাহাড়ে টিসিবির ট্রাক এসে দাঁড়ানোর পর বিক্রয় কর্মীরা প্রথমে ডাল প্যাকেট করতে শুরু করেন। এ কারণে পণ্য বিক্রি শুরু হয় আরো ৪০ মিনিট পর।
সেখানে সজীব দাশ নামের এক ক্রেতা বলেছেন, বাজারের চেয়ে ট্রাকে তেলের দাম ‘অনেক কম এবং ডালের মানও ভালো’।
“এজন্য চার-পাঁচ ঘণ্টা লাইনে ধরে হলেও মানুষ কিছু টাকা বাঁচানোর চেষ্টা করে। কিন্তু চাল দিচ্ছে না। চাল দিলে আরো ভালো হত।”
দীর্ঘ লাইনে দেখা যায়, নানা বয়সী মানুষ দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে কেউ কেউ ফুটপাতে বসে পড়েছেন। কেউ কেউ আবার তার জায়গায় পরিবারের অন্য কাউকে লাইনে দাঁড় করিয়ে রেখে বাসায় ফিরে যাচ্ছেন।
সোমবার জামালখান মোড়ে কথা হয় মো. সাইফুল আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, “আগে ফ্যামিলি কার্ড দেখে জিনিস বেচত। তখন কার্ড ছাড়া কেউ মাল কিনতে পারত না। এখন কার্ড লাগে না। এজন্য লাইন বেশি বড় হয়। তাই সবাই কিনতে পারে না। গাড়ি আসতে মাঝে মাঝে দেরি করে। অনেকে জানে না, কোন দিন গাড়ি আসবে। সেজন্য অন্যদিনও এসে ঘুরে যায়।”
দুটি পয়েন্টে সরেজমিনে দেখা গেছে, নিম্ন আয়ের মানুষ, গৃহকর্মী, রিকশা ও অটোরিকশা চালক, শ্রমিক, দিনমজুর, দোকানকর্মীর পাশাপাশি মধ্যবিত্ত পরিবারের কিছু বয়স্ক সদস্যও লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য কিনছেন।
চট্টগ্রামে ফ্যামিলি কার্ড ছাড়া টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু হয় ২৪ অক্টোবর থেকে। শুরুতে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত এই কার্যক্রমের সময় নির্ধারণ করা হয়। পরে ক্রেতা চাহিদা বিবেচনায় এই কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়
শুরু থেকে টিসিবির ট্রাক থেকে প্রত্যেক ক্রেতার কাছে ১০০ টাকা লিটার দরে দুই লিটার তেল, ৬০ টাকা কেজি দরে ২ কেজি মসুর ডাল এবং ৩০ টাকা কেজি দরে ৫ কেজি করে চাল বিক্রি করা হচ্ছিল বলে জানিয়েছেন টিসিবি চট্টগ্রাম অঞ্চলের সহকারী পরিচালক কুদ্দুছ।
তিনি বলেন, “কিন্তু ১ ডিসেম্বর থেকে টিসিবির ট্রাকে চাল বিক্রি বন্ধ আছে।”
টিসিবি চট্টগ্রাম অঞ্চলের যুগ্ম পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, “আমরা খাদ্য অধিপ্তর থেকে নিয়ে চাল দিই বিক্রির জন্য। চলতি মাসে খাদ্য অধিদপ্তর থেকে আমরা চাল পাইনি। ১০০০ টন চাল বরাদ্দ চেয়ে আমরা ইতোমধ্যে চিঠি দিয়েছি। এখনো চাল পাইনি।”
অন্যদিকে ‘চালের কোনো সংকট নেই’ দাবি করে চট্টগ্রাম জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুমাইয়া নাজনীন বলেন, “পর্যাপ্ত চাল মজুদ আছে। টিসিবির কাছ থেকে ডিও (চাহিদাপত্র) পেলে আমরা চাল সরবরাহ করব। কিন্তু এখনো চাহিদা পাইনি। কোথাও একটা মিস ইনফরমেশন হচ্ছে। চাহিদা দিলে আমরা অবশ্যই চাল সরবরাহ করব।”
চাহিদা অনুযায়ী ১০০০ হাজার টন চাল বরাদ্দ পেলে চট্টগ্রামের ২০টি পয়েন্টে প্রায় এক মাস চাল বিক্রি করা সম্ভব হবে বলে খাদ্য নিয়ন্ত্রকের ভাষ্য।

৭৭তম আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে আইএইচআরসিজি’র অনুষ্ঠানে-প্রফেসর নসরুল কদির মানবাধিকার রক্ষায় দেশী-বিদেশী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে গণমূখী কর্মকাণ্ড বাড়াতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর এস.এম. নসরুল কদির বলেছেন-বাংলাদেশ মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভ করেছে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের জনগণ স্বাধীনতা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পর এখনও পর্যন্ত মানুষ গণতান্ত্রিক অধিকার, বাক স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং মানবাধিকার রক্ষায় সংগ্রাম করে যাচ্ছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যে সরকার আসুক না কেন, তাদেরকে রাষ্ট্রীয় সংস্কারের দিকে অধিক মনোযোগী হতে হবে। এবং এ কাজে মানববাধিকার সংগঠনগুলোকে মানবাধিকার রক্ষায় দেশী-বিদেশী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে গণমূখী কর্মকাণ্ড বাড়াতে হবে। তিনি আজ সকাল ১০ ঘটিকায় ৭৭তম আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে আইএইচআরসিজি বাংলাদেশ’র উদ্যোগে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন সম্মেলন কক্ষে এক আলোচনা সভা ও সনদপত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে এ কথা বলেন। উক্ত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আইএইচআরসিজি বাংলাদেশ’র ভাইস প্রেসিডেন্ট মো: আমির হোসেন খাঁন। অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্যে আইএইচআরসিজি বাংলাদেশ’র জেনারেল সেক্রেটারী সৈয়দ মোস্তফা আলম বলেন, মানবাধিকার সংগঠনের নামে বাংলাদেশের কোন জায়গায় চাঁদাবাজী দখলবাজী, মামলা বাজী করে জনগণকে হয়রানী করা যাবে না। যারা এ কাজে জড়িত থাকবেন তাদেরকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দিতে হবে। এবং আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য জনমুখী এবং স্বাধীনতা রক্ষায় যে দল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে তাদেরকে নির্বাচিত করার আহ্বান জানান। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ আইএইচআরসিজি’র নির্বাহী পরিচালক নুরুল আবসার তৌহিদ বলেন, মানবাধিকার সংগঠনকে বাংলাদেশে প্রান্তিক জনগণের কাছে পৌছে দেওয়ার জন্য সকল জেলায় সৎ ও যোগ্য মানুষকে সংগঠনের নেতৃত্বে আসার আহ্বান জানান। আইএইচআরসিজি চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমন্বয়কারী মুহাম্মদ আওরঙ্গজেব খান সম্রাট, নেত্রী নাহিদা আক্তার নাজু ও চম্পা রানী নন্দীর যৌথ সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক মাঈন উদ্দীন আহমদ, সংঠনের নারী ও শিশু বিষয়ক সম্পাদিকা তাহেরা শারমীন, সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতা ইঞ্জিনিয়ার আবু তৈয়ব, সংগঠনের বিভাগীয় নেতা মোঃ আব্দুর রহিম, পটিয়া উপজেলার সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নারী নেত্রী আফরোজা বেগম জলি, অপকার নির্বাহী পরিচালক মোঃ আলমগীর, চট্টগ্রাম উত্তর জেলার সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইউনুচ তালুকদার, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ওহাব, চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির যুগ্ম সমন্বয়কারী ডা. জামাল উদ্দিন, আর্ন্তাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি মোঃ মোশারফ হোসেন, সীতাকুন্ড উপজেলার সভাপতি মোঃ মুসলিম উদ্দিন ভূইয়া, মহানগরের যুগ্ম সমন্বয়কারী জাবেদ চৌধুরী, সংগঠনের নারী নেত্রী জান্নাতুল মাওয়া মারুফা, শারমীন সরকার, জোহরা সেলিম, সীতাকুন্ড পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর মাসুদা বেগম, নারী উদ্যোক্তা মনিরা দিলশাদ তানসি, সংগঠনের নেতা যথাক্রমে-হাজী নুরুল ইসলাম, তাহেরা মহরম, ফাহমিনা আলম, ইঞ্জি: কাজী মিজান, এনাম হোসেন, মোঃ আলাউদ্দিন, আব্দুল কাদের চৌধুরী, মোঃ ইয়াছিন, মোঃ রাজু চৌধুরী, তৌহিদুল আলম তালুদার, মোঃ ইকরাম, ইব্রাহিম লালন, সঙ্গীত শিল্পী এস.বি সুমি, মোঃ ইমাম উদ্দিন, মোঃ আজহারুল ইসলাম তামিম, শান্ত দে, ফয়জুল হক, আসিফ রোহান, মোঃ ইয়াছিন প্রিন্স, তাহমিনা আক্তার প্রমুখ। ৭৭তম আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে কেক কেটে এবং অনুষ্ঠান শেষে বিগত কর্মকাণ্ডের উপর সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের কাছে সনদপত্র বিতরণ করা হয়।