
শামসুল আলম রানা
চট্টগ্রাম, ০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫: চট্টগ্রাম মহানগরীতে কিশোর গ্যাংয়ের (Kishor Gang) দৌরাত্ম্য উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠা সৃষ্টি হয়েছে। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় প্রায় প্রতিদিনই ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মারামারি, সংঘর্ষ এবং আধিপত্য বিস্তারের মতো ঘটনায় কিশোরদের সংশ্লিষ্টতা চোখে পড়ছে। এই পরিস্থিতি নগরীর নিরাপত্তা ও সামাজিক স্থিতিকে প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছে।
⚔️ বেপরোয়া কর্মকাণ্ড, দিনের আলোতেও সক্রিয় গ্যাং
আন্দরকিল্লা, পাহাড়তলী, দেওয়ানহাট, হালিশহর, চকবাজার, বহদ্দারহাট, আগ্রাবাদ, জিইসি, পাঁচলাইশ, ইপিজেড ও পতেঙ্গাসহ একাধিক এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের সক্রিয়তার অভিযোগ পাওয়া গেছে। রাতের অন্ধকারের পাশাপাশি দিনের বেলাতেও এদের বেপরোয়া চলাফেরা এখন দৃশ্যমান।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এসব কিশোরের হাতে প্রায়শই দেশীয় অস্ত্র, শিরস্ত্রাণ বা ধারালো অস্ত্র থাকে। তারা আধুনিক গ্যাজেট ব্যবহার করে সামাজিক মাধ্যমে নিজেদের প্রভাব দেখিয়ে ভিডিও আপলোড করে। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, ব্যক্তিগত বিরোধ, প্রেমঘটিত বিষয় এবং রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়া—বিভিন্ন কারণে এদের দৌরাত্ম্য বাড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
📢 ব্যবসায়ী ও পথচারীদের শঙ্কা: “সন্ধ্যার পর অনেক এলাকায় আতঙ্ক নিয়ে চলাফেরা করতে হয়। ছিনতাই, ইভটিজিং, তুলে নিয়ে যাওয়া, হুমকি দেওয়া—এসব কাজ কিশোর গ্যাং সদস্যরা অহরহ করছে। ফলে অভিভাবকরাও সন্তানদের নিয়ে চরম শঙ্কায় আছেন।”
👨👩👧👦 কারণ ও প্রভাব: কেন বাড়ছে কিশোর অপরাধ?
বিশেষজ্ঞ ও সমাজবিজ্ঞানীরা এই পরিস্থিতির জন্য বেশ কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করেছেন:
পারিবারিক ও সামাজিক অবক্ষয়: পরিবার থেকে বিচ্ছিন্নতা ও অবহেলা।
মাদকাসক্তি: মাদকাসক্ত গোষ্ঠীর টান এবং মাদকাসক্তি।
অস্ত্রের সহজলভ্যতা: সহজে দেশীয় অস্ত্র পাওয়া।
গ্যাং কালচার: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গ্যাং কালচারের প্রভাব।
নজরদারির অভাব: আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়মিত নজরদারির ঘাটতি।
কিশোর গ্যাংয়ের সহিংসতায় নগরীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভয় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে, যা শিক্ষার পরিবেশকে বিপন্ন করছে।
👮♂️ আইনি পদক্ষেপ ও সীমাবদ্ধতা
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) মাঝে মাঝে অভিযান চালিয়ে কিছু সদস্যকে আটক করলেও, টেকসই উদ্যোগের অভাবে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তারা আবারও মাঠে নেমে আসে। স্থানীয়দের অভিযোগ, মহল্লাভিত্তিক গ্যাং সদস্যদের তালিকা প্রণয়ন কিংবা স্কুল-কলেজ এলাকায় কার্যকর নজরদারি এখনো দৃশ্যমান নয়। উপরন্তু, অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়া ও প্রভাবশালী মহলের মদদে কিছু গ্যাং আরও সাহসী হয়ে উঠছে।
🤝 প্রয়োজন সম্মিলিত উদ্যোগ
নগরবাসীর দাবি, শুধু ধরপাকড় নয়, এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সমাজ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সম্মিলিত উদ্যোগ জরুরি