অভয়ারণ্যে সড়ক সম্প্রসারণ চায় সওজ, বন বিভাগের না

অভয়ারণ্যে সড়ক সম্প্রসারণ চায় সওজ, বন বিভাগের না

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়ক

অভয়ারণ্যে সড়ক সম্প্রসারণ চায় সওজ, বন বিভাগের না

 নাজিম মুহাম্মদ

 ১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ | ১১:৩৫ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়ক সম্প্রসারণ করা হলে চুনতি অভয়ারণ্য হারাবে ২৫০ একর বনভূমি। কাটা পড়বে কয়েক লাখ বনের গাছ। এর আগে ২০১৮ সালে ১২০ একর বনভূমি অধিগ্রহণ করে অভয়ারণ্যের বুক চিরে নির্মাণ করা হয়েছে রেলপথ। এতে কাটা পড়েছে বিভিন্ন প্রজাতির দুই লাখ ৩৯ হাজার গাছ। এ অবস্থায় বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল রক্ষায় ফাঁসিয়াখালীর নলবিলা ও চুনতি অভয়ারণ্য এলাকায় ফ্লাইওভার ও আন্ডারপাস নির্মাণের প্রস্তাবনা দিয়েছে বন বিভাগ। সড়ক বিভাগ জানিয়েছে তারাও বিষয়টি ‘বিবেচনা’ করছে

জানা যায়চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ছয়লেন করার উদ্যোগ নিয়েছে সওজ। জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকাঅর্থায়নে প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার হাইওয়ে ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট (ফেইজ-২)। প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে চুনতি অভয়ারণ্য ২৫০ একর বনভূমি হারাবে। বনবিভাগ চায় বনের জমি ক্ষতি না করে অভয়ারণ্য এলাকায় ফ্লাইওভার ও আন্ডারপাস নির্মাণের বিষয়টি প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করতে।

এ বিষয়ে সওজকে দুই দফায় চিঠি দিয়েছে বনবিভাগ। প্রথম দফায় বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ থেকে চলতি বছরের ১২ মে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, জাইকার কারিগরি সহায়তায় সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তর পরিচালিত সমীক্ষাধীন চট্টগ্রাম থেকে চকরিয়া পর্যন্ত জাতীয় মহাসড়কটি লোহাগাড়া ও চকরিয়া উপজেলার চুনতি অভয়ারণ্য (সড়কের পশ্চিম পাশে) এবং চুনতি সংরক্ষিত বন (সড়কের পূর্ব পাশে) সংলগ্ন। বিশ্বব্যাপী বিপন্ন ও বাংলাদেশে মহাবিপন্ন এশিয়ান হাতির অন্যতম প্রাকৃতিক আবাসস্থল ও প্রজননক্ষেত্র এ চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ও তদসংলগ্ন বনাঞ্চল। এখানে ৪৫টি হাতি বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে পুরো অভয়ারণ্য ও তদসংলগ্ন এলাকাজুড়ে বিচরণ করে। হাতি ছাড়াও এ অভয়ারণ্যে ৪০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৫৪ প্রজাতির সরীসৃপ, ২৬ প্রজাতির উভচর এবং ২৫২ প্রজাতির পাখির আবাসস্থল। এশিয়ান হাতিসহ উল্লেখিত বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী মহাসড়কের বিভিন্ন অংশ দিয়ে প্রায় সারাবছর অভয়ারণ্য ও সংরক্ষিত বনাঞ্চলে পারাপার করে থাকে। ফলে মহাসড়কে চলাচলরত যানবাহনের সঙ্গে প্রায় সময় বন্যপ্রাণীর সংঘর্ষ এমনকি মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে থাকে।

চিঠিতে বলা হয়, উক্ত এলাকায় জাইকা প্রকল্পের পরিবেশগত প্রভাব নিরূপন ও হাতি জরিপের কাজ করছে। মহাসড়কটি প্রশস্ত করা হলে হাতিসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর রাস্তা পারাপারের সময় আরো দীর্ঘায়িত হবে। ফলে চলাচলরত যানবাহনের সঙ্গে বন্যপ্রাণীর সংঘর্ষ ও মৃত্যুর ঘটনা বৃদ্ধি পাবে। ভবিষ্যতে বাড়তি যানবাহনের চাপ বন্যপ্রাণীর চলাচল বাধাগ্রস্ত করবে। পরিবেশ হতে হাতিসহ অন্যান্য সকল বন্যপ্রাণীর বিলুপ্তির ঝুঁকি বৃদ্ধি পাবে। চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের অভ্যন্তরে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন স্থাপনের কারণে সেখানে বসবাসরত এশিয়ান হাতিসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণী হুমকির সম্মুখীন। ফলে চুনতি অভয়ারণ্যে বন্যপ্রাণীদের চলাচল ও জীবনযাত্রায় যেন আর কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা না হয় সে বিষয়টি নিশ্চিত করা আবশ্যক।

ঢাকা আগারগাঁও বন ভবনের প্রধান বন সংরক্ষকের কার্যালয় থেকে সওজের চট্টগ্রাম সড়ক সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর কাছে আরও একটি চিঠি দেওয়া হয় গত ২৫ আগস্ট।

চিঠিতে একই বিষয়টি তুলে ধরা হয়। এছাড়া বলা হয় মহাসড়ক সম্প্রসারণে ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জের নলবিলা বনাঞ্চল সংলগ্ন অংশে আন্ডারপাস এবং ফ্লাইওভার নির্মাণ অত্যাবশ্যক। তাছাড়াও চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য সংলগ্ন এলাকায় ১০ কি.মি. অংশে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক সম্প্রসারণ পরিকল্পনায় ফ্লাইওভার ও প্রয়োজনে আন্ডারপাস নির্মাণের বিষয়টি প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় বন কর্মকর্তাগণও সওজের কাছে যে মতামত দিয়েছে তার সঙ্গে বন অধিদপ্তর একমত পোষণ করেছে।

জানতে চাইলে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের উপবন সংরক্ষক আবু নাছের মোহাম্মদ ইয়াছিন নেওয়াজ জানান, অভয়ারণ্য এলাকায় সড়ক সম্প্রসারণ করা হলে বিপন্ন এশিয়ান হাতি ও নানা বন্য পশুপাখির আবাস্থল বিলুপ্ত হয়ে যাবে। ঝুঁকিতে পড়বে বন্যপ্রাণী। এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা দিয়ে সওজের কাছে বনবিভাগ ইতিমধ্যে চিঠি দিয়েছে।

দোহাজারী সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা জানান, সড়ক সম্প্রসারণ করতে অভয়ারণ্যের কিছু জমি পড়বে। আমরা চেষ্টা করছি, অভয়ারণ্য এলাকায় ফ্লাইওভার নির্মাণ করতে। বনবিভাগও ফ্লাইওভার করার সুপারিশ জানিয়েছে।

উল্লেখ্য, দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০৩ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথের ২৭ কিলোমিটার গেছে সংরক্ষিত বনের ভেতর দিয়ে। লোহাগাড়ার চুনতি অভয়ারণ্য, ফাঁসিয়াখালী ও মেধাকচ্ছপিয়া সংরক্ষিত বনের ভেতর দিয়ে এ রেলপথ গেছে। রেললাইন নির্মাণ করার জন্য অভয়ারণ্যের ২০৭ কিলোমিটার সংরক্ষিত বন থেকে বাদ দেওয়া হয়। বিভিন্ন প্রজাতির দ্ইু লাখ ৩৯ হাজার গাছ কাটা হয়। কথা ছিল বরাদ্দ দেওয়া বনভূমিতে বিদ্যমান গাছপালার মূল্য বাবদ ১০ কোটি ৮৭ লাখ টাকা পরিশোধ করবে রেল। পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র্যের ক্ষতিপূরণের জন্য যে পরিমাণ গাছ ক্ষতি হবে রেললাইনের দুই পাশে তার তিনগুণ গাছ লাগাতে হবে বন অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে। আগামী ১০ বছর তা রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। বন্য হাতিসহ সব বন্যপ্রাণীর নিরাপদ চলাচলের জন্য আন্তর্জাতিক মানের ওভারপাস ও আন্ডারপাস নির্মাণ করতে হবে। রেল গাড়ির শব্দে বনাঞ্চলে থাকা বন্যপ্রাণীর যাতে কোন সমস্যা না হয় সেজন্য সংশ্লিষ্ট অংশ রেলওয়েকে সাউন্ড ব্যারিয়ার বা শব্দ প্রতিবন্ধকতা নির্মাণ করতে হবে। পরে দেখা গেছে বন্য হাতিসহ সব বন্যপ্রাণীর চলাচলের জন্য দুটি ওভারপাস ও আন্ডারপাস নির্মাণ করার কথা থাকলেও বাস্তবে একটি ওভারপাস নির্মাণ করা হয়েছে। দুটি আন্ডারপাস করা