আমার ওপর আস্থা রাখুন, গণতন্ত্রের পথ হবে আরও উজ্জ্বল: তারেক রহমান

রাজনীতি আমার ওপর আস্থা রাখুন, গণতন্ত্রের পথ হবে আরও উজ্জ্বল: তারেক রহমান

আমার ওপর আস্থা রাখুন, গণতন্ত্রের পথ হবে আরও উজ্জ্বল: তারেক রহমান

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেছেন, আমি যেমন আপনাদের প্রত্যেকের ওপর আস্থা রাখি, আপনারাও তেমনি আমার ওপর আস্থা রাখুন। তাহলেই গণতন্ত্রের পথ হবে আরও উজ্জ্বল। বৃহস্পতিবার নিজের ভেরিফাইড ফেইসবুকে তিনি এসব কথা বলেন।

 

তারেক রহমান বলেন, আসুন, আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকি, শৃঙ্খলাবদ্ধ থাকি, এবং জনগণের সেবায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকি। আমি যেমন আপনাদের প্রত্যেকের ওপর আস্থা রাখি, আপনারাও তেমনি আমার ওপর আস্থা রাখুন। তাহলেই গণতন্ত্রের পথ হবে আরও উজ্জ্বল। আমরা একসাথে প্রমাণ করবো যে, বাংলাদেশে একটি জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা, স্থিতিশীল প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো এবং গণআকাঙ্খিত ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা সম্ভব।

তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আমাদের অন্যতম দায়িত্ব হলো দেশের প্রতিটি ভোটারের আস্থা নিশ্চিত করা। সেই লক্ষ্যে, আজকের ও আগামী দিনের তরুণ প্রজন্মের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি ছুটে যাচ্ছে তৃণমূল থেকে শুরু করে সমাজের প্রতিটি শ্রেণি ও পেশার মানুষের কাছে; গ্রাম থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত দলের সাংগঠনিক কাঠামোকে আরও মজবুত করছে। এই সমন্বিত প্রয়াসের মাধ্যমে আমরা নিশ্চিত করতে চাই স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা।

সাংগঠনিক বিশৃঙ্খলায় দলীয় নেতাকর্মীদের ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে ৭,০০০-এরও বেশি দলীয় সদস্যের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও অসদাচরণের দায়ে কেউ পদচ্যুত হয়েছেন; আবার অনেকেই বহিষ্কৃত হয়েছেন। বহুমুখী অপপ্রচারের মাঝেও এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ ছিল না, তবে বাস্তবতার প্রেক্ষিতে এগুলো ছিল অপরিহার্য। শৃঙ্খলা কোনো দুর্বলতা নয়; বরং সেটিই আমাদের শক্তি। নিজেদের সদস্যদের দায়বদ্ধ করার মাধ্যমেই আবারও প্রমাণ হলো যে, বিএনপি সততার ব্যাপারে আন্তরিক, এবং আমরা ক্ষমতাসীনদের কাছে যেসব মানদণ্ড দাবি করি, নিজেদেরও ঠিক সেই একই মানদণ্ডে দাঁড় করাই। এভাবেই আমরা জনগণের আস্থা পুনর্গঠন করতে চাই — বিশেষত তরুণদের, যারা রাজনীতিকে কেবলমাত্র ক্ষমতার খেলা হিসেবে দেখতে চায় না; বরং দেখতে চায় সবার অংশগ্রহণে গড়ে ওঠা একটি মহৎ ক্ষেত্র হিসেবে।

তারেক রহমান বলেন, সময়ের চাহিদা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বিএনপি সব সময়ই নিজেকে আধুনিকায়ন করেছে। আমরা জনগণের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ ও যোগাযোগ আরও শক্তিশালী করছি। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, তরুণদের কর্মসংস্থান, জলবায়ু পরিবর্তন এবং ডিজিটাল উদ্ভাবনের প্রতিশ্রুতিসহ ৩১ দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে আমাদের নীতিমালা গড়ে উঠেছে। আমরা অন্তর্ভুক্তিকে অগ্রাধিকার দিয়ে আরও বেশি নারী, তরুণ নেতা ও পেশাজীবীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যাতে জাতি আরও এগিয়ে যায় এবং রাজনীতি মানুষের সেবায় নিয়োজিত থাকে। আমরা চাই, বিএনপির পরিচয় হোক, সেবা, ন্যায়বিচার ও দক্ষতার প্রতীক হিসেবে; বিভাজন কিংবা সুবিধাভোগের প্রতীক নয়।

 

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলো আলাদা, তাই আমাদের পদক্ষেপ গুলোকেও হতে হবে নতুনভাবে চিন্তা-নির্ভর। তবে আমরা ইতিহাসকে অস্বীকার করি না; বরং তার ভিত্তিতেই এগিয়ে যেতে চাই। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনে জনগণকে আশার আলো দেখিয়েছিলেন; জনগণের ক্ষমতায়নকে রাজনীতির কেন্দ্রে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। আর দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আপোষহীনভাবে গণতন্ত্র ও গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই করে গিয়েছিলেন। আজ আমরা তাঁদের সেই আকাঙ্ক্ষাকে সামনে রেখেই এগিয়ে চলেছি নতুন যুগে; যেখানে সততা, তরুণ নেতৃত্ব ও বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার সক্ষমতা হবে রাষ্ট্রগঠনের গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি

তরুণরা ফাঁকা বুলি শুনতে চায় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, নিজ ঐতিহ্যকে ধারণ করে, বিএনপি প্রাধান্য দিচ্ছে একটি শৃঙ্খলাবদ্ধ, ভবিষ্যতমুখী এবং আধুনিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথযাত্রা কে। আমরা জানি, তরুণরা চায় বাস্তব সুযোগ, তারা ফাঁকা বুলি চায় না। জনগণ চায় স্থিতিশীলতা, তারা বিশৃঙ্খলা চায় না। আর বিশ্ব চায়, বাংলাদেশ হোক একটি বিশ্বাসযোগ্য ও সম্মানিত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। এই প্রত্যাশাগুলো পূরণে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আগামী জাতীয় নির্বাচন বানচালে ভেতরের বা বাইরের যে কোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। গতকাল বুধবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি সংক্রান্ত এক উচ্চ পর্যায়ের সভায় তিনি একথা বলেন। বৈঠক শেষে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। খবর বাসসের। প্রেস সচিব জানান, বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, আগামী নির্বাচন সুন্দর ও উৎসবমুখর করতে হলে মানুষের কাছে পৌঁছতে হবে, নির্বাচনী নীতিমালা, ভোটকেন্দ্রের নিয়ম, কীভাবে ভোট প্রদান করতে হবে, কোথাও বিশৃঙ্খলা হলে কী করতে হবে এসব বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে হবে। তিনি বলেন, নির্বাচন বানচালের জন্য ভেতর থেকে, বাইরে থেকে অনেক শক্তি কাজ করবে। ছোটখাট না, বড় শক্তি নিয়ে বানচালের চেষ্টা করবে। হঠাৎ করে আক্রমণ চলে আসতে পারে। এই নির্বাচন চ্যালেঞ্জিং হবে। যত ঝড়ঝঞ্ঝাই আসুক আমাদের সেটা অতিক্রম করতে হবে। প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে মূলত চারটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়– নির্বাচনকালীন পদায়ন, ট্রেনিং, নিরাপত্তা ইস্যু এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় ডিসইনফরমেশন মনিটরিং। প্রেস সচিব জানান, নির্বাচনী দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের বদলি ও পদায়নের বিষয়ে এলাকার গুরুত্ব বিবেচনায় কর্মকর্তাদের দক্ষতা বিবেচনা করে বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় বদলি ও পদায়নের বিষয়ে ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাজ শুরু করেছে। এর পাশাপাশি নির্বাচন কমিশন নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করবে এমন কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ প্রদানও শুরু করেছে। কর্মকর্তাদের নিজ জেলা ও নিকটবর্তী জেলা এবং আত্মীয় পরিজনের কেউ প্রার্থী হলে সেসব নির্বাচনী এলাকায় দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রাখা হবে। আগের তিনটি নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করেছেন এমন কর্মকর্তাদের বিরত রাখা হবে। যত দ্রুত সম্ভব পোস্টিং দিয়ে দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে যাতে করে তারা পর্যাপ্ত সময় পায় প্রস্তুতি নেয়ার জন্য এবং প্রয়োজনীয় ট্রেনিং শুরু করা যায়। শফিকুল আলম জানান, আজকের বৈঠকে নির্বাচন নিয়ে সরকার, নির্বাচন কমিশন ও বিভিন্ন বাহিনীর মধ্যে সমন্বয়ের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। মিটিংয়ে এআই, ডিস–ইনফরমেশন, মিস–ইনফরমেশন নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, বৈঠকের একটা বড় কনসার্ন ছিল, সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনো অপপ্রচার ছড়িয়ে পড়লে সেটা কীভাবে দ্রুত ডিবাঙ্ক করা যাবে তা নিয়ে। অনেক সময় দেখা যায়, কোনো অপতথ্যকে আইডেন্টিফাই করে সেটা যে অপতথ্য এটা প্রচার করতে গিয়ে অনেক সময় লেগে যায়। সেই সময়ের মধ্যে অনেক ক্ষতিও হয়ে যায়। এজন্য একটি সেন্ট্রাল ডিস–ইনফরমেশন মনিটরিং সেল ও একটি সেন্ট্রাল কমিউকেশন সেল তৈরির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। শুধু শহর অঞ্চল বা জেলা পর্যায়ে না, গ্রাম পর্যায়েও মানুষের কাছে যেন ফ্যাক্টচেকিং তথ্যগুলো পৌঁছাতে পারে সে বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা গুরুত্ব দিয়েছেন। অধ্যাপক ইউনূসের বরাত দিয়ে প্রেস সচিব জানান, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় অপপ্রচার আসবে। নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য দেশের ভেতর থেকে বাইরে থেকে খুবই পরিকল্পিতভাবে নানারকম অপপ্রচার চালানো হবে। এআই দিয়ে ছবি–ভিডিও তৈরি করে ছেড়ে দেওয়া হবে। এটাকে সামাল দিতেই হবে। একটা অপপ্রচারের সূচনা হওয়া মাত্রই সেটা ঠেকাতে হবে যেন ছড়াতে না পারে। নির্বাচন–কেন্দ্রিক প্রচার–প্রচারণার জন্য তথ্য মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য মন্ত্রণালয় কাজ শুরু করেছে বলে জানান তিনি। বৈঠকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান, সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, প্রতিরক্ষা ও জাতীয় সংহতি বিষয়ক প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আব্দুল হাফিজ, আইসিটি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, মুখ্য সচিব মো. সিরাজ উদ্দিন মিয়া, নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ, স্বরাষ্ট্র সচিব নাসিমুল গণি, মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশিদ, পিএসও লে. জে. কামরুল হাসান, পুলিশের মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম, ডিজি র‌্যাব এ কে এম শহিদুর রহমান, ডিজি কোস্টগার্ড রিয়ার এডমিরাল জিয়াউল হক, ডিজি আনসার মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ এবং গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই, ডিজিএফআই ও এসবির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।