চট্টগ্রামে চালবোঝাই ট্রাকে ট্রেনের ধাক্কা, সিকিউরিটি গার্ড নিহত

চট্টগ্রামের সাগরিকা স্টেডিয়াম এলাকার রেল গেইটে চালবোঝাই একটি ট্রাকের সঙ্গে মালবাহী ট্রেনের সংঘর্ষে এক সিকিউরিটি গার্ডের মৃত্যু হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) ভোরে এ দুর্ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের পর ট্রেনের ইঞ্জিনসহ একটি কনটেইনার উল্টে যায় এবং পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে পড়ে। ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, ভোর ৪টা ১০ মিনিটে চিটাগং গুডস পোর্ট ইয়ার্ড থেকে ৩১টি কনটেইনার নিয়ে মালবাহী ট্রেনটি কমলাপুর ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোর (আইসিডি) উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। আট মিনিট পর, ভোর ৪টা ১৮ মিনিটে ট্রেনটি সাগরিকা স্টেডিয়ামসংলগ্ন রেলগেইটে পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা দ্রুতগতির চালবোঝাই ট্রাকটি ট্রেনটিকে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে দায়িত্বে থাকা সিকিউরিটি গার্ড শামসু মিয়া ট্রাকের চালের বস্তার নিচে চাপা পড়ে গুরুতর আহত হন। পরে তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

স্থানীয়রা জানান, নিহত শামসু মিয়া দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকায় সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। দুর্ঘটনার পর রেলগেইটে গেটম্যানের দায়িত্ব পালনে অবহেলা ছিল কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ঘটনাস্থলে ব্যারিয়ার ভাঙা অবস্থায় পাওয়া গেলেও গেটম্যান সিফাত দাবি করেছেন, তিনি নিয়ম অনুযায়ী গেট নামিয়েছিলেন। তার বক্তব্য অনুযায়ী, “ট্রাকটি অতিরিক্ত গতিতে আসায় সংঘর্ষটি ঘটে।”

রেলওয়ের কর্মকর্তারা মনে করছেন, ট্রাকচালকের অসতর্কতাই দুর্ঘটনার মূল কারণ। তবে কারও অবহেলা ছিল কিনা, তা তদন্ত শেষে নিশ্চিত করা হবে। বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বলেন, “গেটম্যানের অবহেলা অথবা ট্রাকের বেপরোয়া গতিই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী হতে পারে। উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে কাজ করছে, তদন্তের পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানার ওসি শহিদুল ইসলাম জানান, দুর্ঘটনার কারণে পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ আছে, তবে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলে কোনো প্রভাব পড়েনি।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আগামী জাতীয় নির্বাচন বানচালে ভেতরের বা বাইরের যে কোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। গতকাল বুধবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি সংক্রান্ত এক উচ্চ পর্যায়ের সভায় তিনি একথা বলেন। বৈঠক শেষে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। খবর বাসসের। প্রেস সচিব জানান, বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, আগামী নির্বাচন সুন্দর ও উৎসবমুখর করতে হলে মানুষের কাছে পৌঁছতে হবে, নির্বাচনী নীতিমালা, ভোটকেন্দ্রের নিয়ম, কীভাবে ভোট প্রদান করতে হবে, কোথাও বিশৃঙ্খলা হলে কী করতে হবে এসব বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে হবে। তিনি বলেন, নির্বাচন বানচালের জন্য ভেতর থেকে, বাইরে থেকে অনেক শক্তি কাজ করবে। ছোটখাট না, বড় শক্তি নিয়ে বানচালের চেষ্টা করবে। হঠাৎ করে আক্রমণ চলে আসতে পারে। এই নির্বাচন চ্যালেঞ্জিং হবে। যত ঝড়ঝঞ্ঝাই আসুক আমাদের সেটা অতিক্রম করতে হবে। প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে মূলত চারটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়– নির্বাচনকালীন পদায়ন, ট্রেনিং, নিরাপত্তা ইস্যু এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় ডিসইনফরমেশন মনিটরিং। প্রেস সচিব জানান, নির্বাচনী দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের বদলি ও পদায়নের বিষয়ে এলাকার গুরুত্ব বিবেচনায় কর্মকর্তাদের দক্ষতা বিবেচনা করে বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় বদলি ও পদায়নের বিষয়ে ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাজ শুরু করেছে। এর পাশাপাশি নির্বাচন কমিশন নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করবে এমন কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ প্রদানও শুরু করেছে। কর্মকর্তাদের নিজ জেলা ও নিকটবর্তী জেলা এবং আত্মীয় পরিজনের কেউ প্রার্থী হলে সেসব নির্বাচনী এলাকায় দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রাখা হবে। আগের তিনটি নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করেছেন এমন কর্মকর্তাদের বিরত রাখা হবে। যত দ্রুত সম্ভব পোস্টিং দিয়ে দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে যাতে করে তারা পর্যাপ্ত সময় পায় প্রস্তুতি নেয়ার জন্য এবং প্রয়োজনীয় ট্রেনিং শুরু করা যায়। শফিকুল আলম জানান, আজকের বৈঠকে নির্বাচন নিয়ে সরকার, নির্বাচন কমিশন ও বিভিন্ন বাহিনীর মধ্যে সমন্বয়ের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। মিটিংয়ে এআই, ডিস–ইনফরমেশন, মিস–ইনফরমেশন নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, বৈঠকের একটা বড় কনসার্ন ছিল, সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনো অপপ্রচার ছড়িয়ে পড়লে সেটা কীভাবে দ্রুত ডিবাঙ্ক করা যাবে তা নিয়ে। অনেক সময় দেখা যায়, কোনো অপতথ্যকে আইডেন্টিফাই করে সেটা যে অপতথ্য এটা প্রচার করতে গিয়ে অনেক সময় লেগে যায়। সেই সময়ের মধ্যে অনেক ক্ষতিও হয়ে যায়। এজন্য একটি সেন্ট্রাল ডিস–ইনফরমেশন মনিটরিং সেল ও একটি সেন্ট্রাল কমিউকেশন সেল তৈরির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। শুধু শহর অঞ্চল বা জেলা পর্যায়ে না, গ্রাম পর্যায়েও মানুষের কাছে যেন ফ্যাক্টচেকিং তথ্যগুলো পৌঁছাতে পারে সে বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা গুরুত্ব দিয়েছেন। অধ্যাপক ইউনূসের বরাত দিয়ে প্রেস সচিব জানান, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় অপপ্রচার আসবে। নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য দেশের ভেতর থেকে বাইরে থেকে খুবই পরিকল্পিতভাবে নানারকম অপপ্রচার চালানো হবে। এআই দিয়ে ছবি–ভিডিও তৈরি করে ছেড়ে দেওয়া হবে। এটাকে সামাল দিতেই হবে। একটা অপপ্রচারের সূচনা হওয়া মাত্রই সেটা ঠেকাতে হবে যেন ছড়াতে না পারে। নির্বাচন–কেন্দ্রিক প্রচার–প্রচারণার জন্য তথ্য মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য মন্ত্রণালয় কাজ শুরু করেছে বলে জানান তিনি। বৈঠকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান, সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, প্রতিরক্ষা ও জাতীয় সংহতি বিষয়ক প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আব্দুল হাফিজ, আইসিটি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, মুখ্য সচিব মো. সিরাজ উদ্দিন মিয়া, নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ, স্বরাষ্ট্র সচিব নাসিমুল গণি, মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশিদ, পিএসও লে. জে. কামরুল হাসান, পুলিশের মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম, ডিজি র‌্যাব এ কে এম শহিদুর রহমান, ডিজি কোস্টগার্ড রিয়ার এডমিরাল জিয়াউল হক, ডিজি আনসার মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ এবং গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই, ডিজিএফআই ও এসবির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।