চট্টগ্রামে দুই সপ্তাহে হাজার ছড়ালো চিকুনগুনিয়া রোগী

আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা বেশি বলছেন বিশেষজ্ঞরা । সরকারি হাসপাতালে পরীক্ষা ও কিট সরবরাহের অনুরোধ জানিয়ে সিভিল সার্জনের চিঠি । কিট পাওয়া গেলে ৩০০ টাকায় করা যাবে পরীক্ষা

চট্টগ্রামে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের হার বেড়েই চলেছে। গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে নগরীর বিভন্ন বেসরকারি ল্যাবের পরীক্ষায় এক হাজারের বেশি চিকুনগুনিয়া রোগী শনাক্ত হওয়ার তথ্য জানা গেছে। গতকাল পর্যন্ত চলতি বছর মোট চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে এক হজার ৯০০ জন। যদিও স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চিকুনগুনিয়ার পরীক্ষা ব্যয়বহুল হওয়ায় অধিকাংশ দরিদ্র ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণীর রোগী পরীক্ষা করাতে পারছেন ন। তাই প্রকৃত আক্রান্তের সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি হতে পারে।

এদিকে গত ২৮ জুলাই সরকারি হাসপাতালে চিকুনগুনিয়া পরীক্ষার ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চিঠি লিখেন চট্টগ্রাম জেলার সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম। চিঠিতে তিনি চিকুনগুনিয়া রোগ নির্ণয়ে রেপিড টেস্ট কিট সরবরাহের ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করেন। তবে এখন পর্যন্ত সেই চিঠির কোনো সাড়া মেলেনি। তাই চিকুনগুনিয়ার পরীক্ষায় বেসরকারি ল্যাবই একমাত্র ভরসা।

গতকাল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের মেডিসিন বহির্বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, চিকিৎসা নিতে আসা বেশিরভাগই জ্বরের রোগী। এদের মধ্যে কয়েকজন এসেছেন স্ট্রেচারে ভর করে। এদের একজন পটিয়ার বাসিন্দা আবুল হাশেম। জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত চারদিন ধরে তীব্র জ্বরে ভুগছেন, সাথে হাত পা ও শরীরে বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যথা। তাই ডাক্তারকে দেখাতে এসেছি। অপরদিকে নগরীর হালিশহর এলাকার বাসিন্দা ফৌজিয়া সুলতানা বলেন, ডেঙ্গু পরীক্ষা করিয়েছিলাম, সেখানে রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। এখন জ্বর নাই। কিন্তু শরীর ব্যথার কারণে রাতে ঘুমাতে পারছি না। এই রকম ব্যথা আর কখনো অনুভব করিনি। অনেকে বলেছেন–আমার চিকুনগুনিয়া হতে পারে। শুনেছি চিকুনগুনিয়া পরীক্ষা করাতে সাড়ে ৪ হাজার টাকা লাগবে। এখন এত টাকা দিয়ে পরীক্ষা করানোর মতো আর্থিক অবস্থা আমাদের নাই।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের জ্বর থাকলেও সর্দি কাশি থাকে না। রোগীদের গায়ে ব্যথা থাকে। গায়ে ফুসকুড়ি (র‌্যাশ) থাকতে পারে, নাও থাকতে পারে। শরীরে তীব্র ব্যথা থাকে। ব্যথার মাত্রা এত বেশি থাকে যে রোগী হাঁটতে পারেন না। চিকুনগুনিয়ায় মৃত্যুঝুঁকি কম, কষ্ট বেশি। চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ৭০ শতাংশ এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে সুস্থ হয়ে যান। ৩০ শতাংশ ক্ষেত্রে রোগী তিন মাস পর্যন্ত অসুস্থ থাকতে পারেন, গায়ে ব্যথা থাকতে পারে। ৫ থেকে ৭ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে সুস্থ হতে বছরের পর বছর লেগে যেতে পারে।

এদিকে চমেক হাসপাতালের কয়েকজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ বলছেন, তাদের কাছে যেসব রোগী আসছেন এর মধ্যে ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশই হচ্ছে জ্বরের রোগী। চিকুনগুনিয়া পরীক্ষা দেয়ার পরে অনেক রোগী শুধু টাকার জন্য পরীক্ষা করাতে পারছেন না। তাই সরকারি পর্যায়ে চিকুনগুনিয়া পরীক্ষা শুরু হলে রোগীরাও উপকৃত হতো।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, চট্টগ্রামে প্রতিনিয়ত চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের হার বাড়ছে। আমরা যখন ২৮ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চিকুনগুনিয়া পরীক্ষা ব্যবস্থা নিতে এবং রেপিড টেস্ট কিট সরবরাহের ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি লিখেছিলাম তখন আক্রান্ত চট্টগ্রামে আক্রান্ত ছিল ৮০৩ জন। আজকে (গতকাল) সেটি এক হাজার ৯০০ জন হয়ে গেছে। আমরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে এখন পর্যন্ত আশানুরূপ সাড়া পাইনি। তবে শুনেছি এখন পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কিট কিনতে পারেনি। কিট পাওয়া গেলে ৩০০ টাকা চিকুনগুনিয়ার পরীক্ষা করা যেত। এতে রোগীরা উপকৃত হতো।

উল্লেখ্য, রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে চট্টগ্রাম নগরীর ছয়টি এলাকায় মশা চিহ্নিতকরণে চালানো জরিপের ফলাফল প্রকাশ করে। এই এলাকাগুলো হলোু চট্টেশ্বরী রোড (ওয়ার্ড ১৫), ও আর নিজাম রোড (ওয়ার্ড ১৫), আগ্রাবাদ (ওয়ার্ড ২৭), পাহাড়তলী (ওয়ার্ড ৯), হালিশহর (ওয়ার্ড ২৬), এবং ঝাউতলা (ওয়ার্ড ১৩)। জরিপকালে মোট ১২৮টি বাড়ি পরিদর্শন করা হয়, যার মধ্যে ৬২টি বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, নগরীর এসব এলাকা ডেঙ্গু চিকুনগুনিয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। এছাড়া প্রতিবেদনে তিনটি সুপারিশ করা হয়।

সেগুলো হলো, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর লক্ষণ বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান করা। কীটতাত্ত্বিক জরিপের ফলাফলের ভিত্তিতে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাসমূহে অনতিবিলম্বে মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনা করা এবং পর্যায়ক্রমে সিটি কর্পোরেশনের অন্যান্য ওয়ার্ডসমূহকে উক্ত কার্যক্রমের আওতায় আনা এবং মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে জনগণের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করা।

৭৭তম আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে আইএইচআরসিজি’র অনুষ্ঠানে-প্রফেসর নসরুল কদির মানবাধিকার রক্ষায় দেশী-বিদেশী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে গণমূখী কর্মকাণ্ড বাড়াতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর এস.এম. নসরুল কদির বলেছেন-বাংলাদেশ মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভ করেছে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের জনগণ স্বাধীনতা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পর এখনও পর্যন্ত মানুষ গণতান্ত্রিক অধিকার, বাক স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং মানবাধিকার রক্ষায় সংগ্রাম করে যাচ্ছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যে সরকার আসুক না কেন, তাদেরকে রাষ্ট্রীয় সংস্কারের দিকে অধিক মনোযোগী হতে হবে। এবং এ কাজে মানববাধিকার সংগঠনগুলোকে মানবাধিকার রক্ষায় দেশী-বিদেশী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে গণমূখী কর্মকাণ্ড বাড়াতে হবে। তিনি আজ সকাল ১০ ঘটিকায় ৭৭তম আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে আইএইচআরসিজি বাংলাদেশ’র উদ্যোগে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন সম্মেলন কক্ষে এক আলোচনা সভা ও সনদপত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে এ কথা বলেন। উক্ত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আইএইচআরসিজি বাংলাদেশ’র ভাইস প্রেসিডেন্ট মো: আমির হোসেন খাঁন। অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্যে আইএইচআরসিজি বাংলাদেশ’র জেনারেল সেক্রেটারী সৈয়দ মোস্তফা আলম বলেন, মানবাধিকার সংগঠনের নামে বাংলাদেশের কোন জায়গায় চাঁদাবাজী দখলবাজী, মামলা বাজী করে জনগণকে হয়রানী করা যাবে না। যারা এ কাজে জড়িত থাকবেন তাদেরকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দিতে হবে। এবং আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য জনমুখী এবং স্বাধীনতা রক্ষায় যে দল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে তাদেরকে নির্বাচিত করার আহ্বান জানান। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ আইএইচআরসিজি’র নির্বাহী পরিচালক নুরুল আবসার তৌহিদ বলেন, মানবাধিকার সংগঠনকে বাংলাদেশে প্রান্তিক জনগণের কাছে পৌছে দেওয়ার জন্য সকল জেলায় সৎ ও যোগ্য মানুষকে সংগঠনের নেতৃত্বে আসার আহ্বান জানান। আইএইচআরসিজি চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমন্বয়কারী মুহাম্মদ আওরঙ্গজেব খান সম্রাট, নেত্রী নাহিদা আক্তার নাজু ও চম্পা রানী নন্দীর যৌথ সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক মাঈন উদ্দীন আহমদ, সংঠনের নারী ও শিশু বিষয়ক সম্পাদিকা তাহেরা শারমীন, সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতা ইঞ্জিনিয়ার আবু তৈয়ব, সংগঠনের বিভাগীয় নেতা মোঃ আব্দুর রহিম, পটিয়া উপজেলার সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নারী নেত্রী আফরোজা বেগম জলি, অপকার নির্বাহী পরিচালক মোঃ আলমগীর, চট্টগ্রাম উত্তর জেলার সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইউনুচ তালুকদার, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ওহাব, চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির যুগ্ম সমন্বয়কারী ডা. জামাল উদ্দিন, আর্ন্তাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি মোঃ মোশারফ হোসেন, সীতাকুন্ড উপজেলার সভাপতি মোঃ মুসলিম উদ্দিন ভূইয়া, মহানগরের যুগ্ম সমন্বয়কারী জাবেদ চৌধুরী, সংগঠনের নারী নেত্রী জান্নাতুল মাওয়া মারুফা, শারমীন সরকার, জোহরা সেলিম, সীতাকুন্ড পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর মাসুদা বেগম, নারী উদ্যোক্তা মনিরা দিলশাদ তানসি, সংগঠনের নেতা যথাক্রমে-হাজী নুরুল ইসলাম, তাহেরা মহরম, ফাহমিনা আলম, ইঞ্জি: কাজী মিজান, এনাম হোসেন, মোঃ আলাউদ্দিন, আব্দুল কাদের চৌধুরী, মোঃ ইয়াছিন, মোঃ রাজু চৌধুরী, তৌহিদুল আলম তালুদার, মোঃ ইকরাম, ইব্রাহিম লালন, সঙ্গীত শিল্পী এস.বি সুমি, মোঃ ইমাম উদ্দিন, মোঃ আজহারুল ইসলাম তামিম, শান্ত দে, ফয়জুল হক, আসিফ রোহান, মোঃ ইয়াছিন প্রিন্স, তাহমিনা আক্তার প্রমুখ। ৭৭তম আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে কেক কেটে এবং অনুষ্ঠান শেষে বিগত কর্মকাণ্ডের উপর সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের কাছে সনদপত্র বিতরণ করা হয়।