জনবল সংকট কাটাতে সাড়ে ৩ হাজার ডাক্তার ও সাড়ে ৩ হাজার নার্স নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। তিনি বলেছেন, শুধু সরকারি পর্যায়ে ১০ হাজার ডাক্তারের সংকট রয়েছে। নার্সের সংকট রয়েছে ১২ হাজার। সরকারি হাসপাতালে সেবার পাশাপাশি কিছু কিছু ওষুধ ফ্রি দেওয়া হলেও অনেক ওষুধ ও ল্যাব সুবিধা আমরা রোগীদের এখনো বিনামূল্যে দিতে পারছি না। এটা লজ্জার ব্যাপার।
গতকাল শুক্রবার নগরীর চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে কনফারেন্স রুমে কার্যনির্বাহী কমিটি, হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকা, ডাক্তার, নার্স, কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম বলেন, আমাদের চাওয়া হচ্ছে সাধারণ মানুষ যেন মানসম্মত চিকিৎসা পায়। আর মানসম্মত ডাক্তাররাই পারেন মানসম্মত চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে। তাই আমাদের কোয়ালিটি ডাক্তার তৈরির পাশাপাশি মানবিক ডাক্তার তৈরি করতে হবে। তাহলেও ভালো সেবা পাওয়া যাবে।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম মেডিকেল, জেনারেল হাসপাতালসহ দেশের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে ডাক্তার, নার্স, চিকিৎসা যন্ত্রপাতি ও আধুনিক ল্যাবের অভাব রয়েছে। সুযোগ সুবিধা অপর্যাপ্ত। স্বাধীনতার এতো বছর পরেও ঢাকার বাইরে বড় কোনো বিশেষায়িত হাসপাতাল গড়ে উঠেনি। চক্ষু, নিউরো, আর্থোপেডিক সবকিছুই ঢাকাকেন্দ্রিক। অথচ বড় শহর হিসেবে চট্টগ্রামে এসব জাতীয় প্রতিষ্ঠান হওয়ার কথা।
উপদেষ্টা বলেন, কিছুদিন পূর্বে জাপানের একটি টিম আমার কাছে এসেছিলো। তারা আমাদের কাছ থেকে নার্স ও কেয়ারগিভার নিতে চায়। এজন্য তারা আমাদের হাসপাতালে এসব বিষয়ে টেকনিক্যাল প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করবে। এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি, তারা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব দেবে। পুরুষ ও মহিলা কেয়ারগিভার ভাগাভাগি করে নেবে। কিন্তু এই নিয়োগে বড় বাধা হচ্ছে ভাষা। তাই নার্সদের ইংরেজি ভাষা ভালোভাবে শেখানো হবে। পাশাপাশি জাপানি ভাষাও শেখানো হবে।
তিনি বলেন, আমাদের সরকারি পর্যায়ে ৩৭টি ও বেসরকারি পর্যায়ে ৬৭টি মেডিকেল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে। তবে অনেক প্রতিষ্ঠান মানসম্মত নয়। তাদের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, ল্যাব ও মানসম্মত শিক্ষক নেই। তাই এসব প্রতিষ্ঠান থেকে দক্ষ ডাক্তার বের হচ্ছে না। কিন্তু সরকার কোয়ালিটির ব্যাপারে কোনো আপোষ করবে না। তাই আমরা সরকারি-বেসরকারি এসব প্রতিষ্ঠান নিয়ে একটি ম্যাট্রিক্স করছি।
যেসব প্রতিষ্ঠান ম্যাট্রিক্সের নিচে পড়ে যাবে সেগুলোর ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ করা হবে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, শিক্ষার্থীদের অন্য প্রতিষ্ঠানে মার্জ করা হবে। কার্যক্রম বন্ধের পরও যদি তারা কোয়ালিটি অর্জন করতে না পারে- তাহলে স্থায়ীভাবে বন্ধ করার ব্যবস্থা করা হবে। কেননা আমরা কোনো অবস্থাতেই চিকিৎসা সেবায় কোয়ালিটির ব্যাপারে আপোষ করবো না।
চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালকে অনেক পুরনো হাসপাতাল উল্লেখ করে তিনি বলেন, এতোদিনেরও এ প্রতিষ্ঠান আর্থিক সক্ষমতা অর্জন করতে না পারার বিষয়টি সুখকর নয়। যেকোন প্রতিষ্ঠানকে অবশ্যই নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। অন্যের উপর নির্ভরশীল হলে চলে না। উপদেষ্টা এ প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক সক্ষমতা অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেন।
চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল পরিচালনা পর্ষদ সভাপতি সৈয়দ মোর্শেদ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অন্যান্যের মধ্যে মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব ড. মঞ্জুরুল ইসলাম, বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচারক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি, সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম, হাসপাতাল পরিচালনা পর্ষদের সহ-সভাপতি ডা. কামরুন নাহার দস্তগীর, আবদুল মান্নান রানা, যুগ্ম সম্পাদক জাহেদুল হাসান, দাতা সদস্য প্রকৌশলী জাবেদ আফসার চৌধুরীসহ সকল বিভাগরে বিভাগীয় প্রধানগণ উপস্থিত ছিলেন।