চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে সহ-সভাপতির ঘুষিতে প্রকৌশলী জখম, আতঙ্কে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা

চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে সহকারী প্রকৌশলী নুরুল মোস্তফার ওপর হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটির সহ-সভাপতি আবদুল মান্নান রানার শারীরিক নির্যাতন, অশালীন গালাগাল ও প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার পর থেকে হাসপাতালের কর্মচারী, কর্মকর্তা ও প্রকৌশল বিভাগে তীব্র ক্ষোভ ও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। অনেকেই বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে মন্তব্য না করলেও অভ্যন্তরীণভাবে পুরো হাসপাতালজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে।

কণ্ঠশিল্পী হিসেবে পরিচিত আবদুল মান্নান রানা বিএনপির সাংস্কৃতিক সংগঠন জাসাসের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য এবং চট্টগ্রাম নগর শাখার সাবেক সভাপতি।

ঘটনার বিস্তারিত বিবরণসহ শনিবার (১৮ অক্টোবর) তিনি হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটির কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন। অভিযোগপত্রের অনুলিপি হাসপাতালের পরিচালক ও সাধারণ সম্পাদককেও দেওয়া হয়েছে।

লিখিত অভিযোগে নুরুল মোস্তফা উল্লেখ করেন, গত বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) দুপুর ১টা ১৫ মিনিটের দিকে হাসপাতালে কর্মরত অবস্থায় আমাকে রুমে যেতে বলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট আবদুল মান্নান রানা। রুমে যাওয়ার পর উনি হাসপাতালের প্রধান প্রকৌশলী অনুরুপ চৌধুরীর একটি নোটের বিষয়ে অর্থাৎ ফায়ার ফাইটিং রিলেটেড সিনিংয়ের বিষয়ে জানতে চান। প্রতি উত্তরে আমি ওনাকে জানাই, এ বিষয়টি আমার নিয়ন্ত্রণাধীন নয়। এইটা সিভিল সেকশনের কাজ। তৎপরবর্তী তিনি ফায়ার ফাইটিং এর ২টি বিল বের করে আমাকে বিলগুলোর বিষয়ে বিভিন্ন রকম প্রশ্ন করতে থাকেন। আমি মৌখিকভাবে কিছু প্রশ্নের উত্তর দিয়ে ওনাকে বুঝিয়ে দিই। আমি তাকে বিনয়ের সঙ্গে বলি, স্যার আপনি যদি আমাকে ব্যক্তিগতভাবে বা অফিসিয়ালভাবে কোন্ কোন্ জায়গায় সমস্যা আছে সেই বিষয়ে লিখিতভাবে দিলে আমার পক্ষে বিষয়টি আপনাকে সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দিতে সুবিধা হয়। এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে উনি আমাকে মা বাবা তুলে অশালীন ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন। একপর্যায়ে তিনি ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রেসিডেন্ট, জেনারেল সেক্রেটারি, ট্রেজারার, উপ-পরিচালক (প্রশাসন), প্রধান প্রকৌশলীর প্রসঙ্গ টেনে তাদেরকেও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।’

নুরুল মোস্তফা আরও উল্লেখ করে বলেন, ‘উত্তেজিত হয়ে আবদুল মান্নান রানা বলেন পাঁচজনই চোর। আর তুই এই চোরদের বস। এসব বলতে বলতে তিনি আবারও আমার মা বাবা তুলে অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করলে আমি প্রতিবাদ করি। তখন তিনি অতর্কিতভাবে আমাকে বুকে ঘুষি মারেন এবং ধাক্কা দেন। সেসময় অন্য টেবিলে বসা অর্গানাইজিং সেক্রেটারি এসে আমাদের দুজনকে দুই দিকে সরাইয়া দেন। তখনও তিনি আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন এবং এই মর্মে হুমকি দেন যে, তোকে মেরে হাত পা ভেঙ্গে দিয়ে হাসপাতাল থেকে বের করে দেব।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিকেল পৌনে চারটার দিকে নির্বাহী প্রকৌশলী নাছির উদ্দিন ফোন করে পরিচালক আমাকে ভাইস প্রেসিডেন্টের রুমে যেতে বলেন। রুমে গিয়ে দেখি সেখানে পরিচালক, ভাইস প্রেসিডেন্ট ও নির্বাহী প্রকৌশলী উপস্থিত। তখন ভাইস প্রেসিডেন্ট আমাকে বলেন আমি যেন পাঁচজনের বিরুদ্ধে রাজসাক্ষী হই, ওনার পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করি—এমন প্রস্তাব দেন। তাহলে আমার কোন সমস্যা হবে না। রাজসাক্ষী না হলে আমাকে জেলে যেতে হবেও বলেন তিনি। তখন নির্বাহী প্রকৌশলী আমাকে বলেন, স্যার যেভাবে বলেন সেভাবেই রাজি হও, নাহলে তোমার সমস্যা হবে। আমি রাজি না হওয়ায় তিনি আবারও অশালীন ভাষায় উচ্চবাচ্য করতে থাকেন।’

নুরুল মোস্তফা অভিযোগ করে বলেন, ‘পরের দিন সকালে চমেক হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে গেলে, চিকিৎসক ওষুধ দিয়ে তিনদিন বিশ্রামে থাকতে বলেন। বুকে ব্যথা, বমি হলে, শ্বাস নিতে কষ্ট হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে বলেন। ভাইস প্রেসিডেন্ট আমাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে, হুমকি প্রদান করায় আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমাকে অন্যায়ভাবে মারার বিচার চাই।’

ভুক্তভোগী নুরুল মোস্তফা চিকিৎসা সনদপত্রের ফটোকপিসহ চিঠির অনুলিপি, হাসপাতালের সেক্রেটারি ও পরিচালককে দিয়েছেন ভুক্তভোগী। ২০১৩ সালের পহেলা জানুয়ারি থেকে হাসপাতালে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত থাকার কথা উল্লেখ করেন মো. নুরুল মোস্তফা।

এ বিষয়ে কথা বলতে ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ মোরশেদ হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ রেজাউল করিম আজাদের মোবাইলে একাধিকবার ফোন দিলেও তারা সাড়া দেননি।

হাসপাতালের পরিচালক (প্রশাসন) নুরুল হককে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘ভাই আমি এসব বিষয়ে কথা বলতে চাইছি না। এগুলো উপরের বিষয়।’