বাঁশখালীতে চাল বিতরণে অনিয়ম, চেয়ারম্যানের নামে মামলা

নিউজ ডেস্ক :

চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে জেলেদের জন্য বরাদ্দ করা চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ এনে এক চেয়ারম্যান ও মেম্বারের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
রোববার (২৩ জুন) দুপুরে সাংসদ মুজিবুর রহমান সিআইপির ব্যক্তিগত সহকারী মীর মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম (৫১) বাদী হয়ে বাঁশখালী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি করেন। আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) চট্টগ্রাম ইউনিটকে মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

 

 

মামলায় খানখানাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান জসীম উদ্দিন হায়দার ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য এবং প্যানেল চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম সিকদার ছাড়াও চাল বিতরণে দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীসহ অজ্ঞাত ১০/১২ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার অভিযোগে চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন হায়দারকে সরকারি চাল চোর চক্রের সদস্য হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। এই ঘটনায় বাঁশখালীতে তোলপাড় ও চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।

 

 

 

 

 

 

মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, খানখানাবাদ ইউনিয়নের এক হাজার জেলের জন্য মাথাপিছু ৫৬ কেজি করে ৫৬ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয় সরকার। ১১ জুন রাতে সাংসদ মুজিবুর রহমানের কাছে গোপন সূত্রে খবর আসে, চাঁনপুর খাদ্য গোদাম থেকে উত্তোলন করা জেলেদের জন্য বরাদ্দকৃত ৫৬ টন চালের মধ্যে কিছু চাল আসামিদের যোগসাজশে আত্মসাতের উদ্দেশ্যে ইউনিয়ন পরিষদের নির্ধারিত খাদ্য গোদামে না রেখে বেআইনিভাবে বিক্রি করে বিক্রিত টাকা আত্মসাৎ করার জন্য অন্যত্র সরিয়ে রাখে।

 

 

পরদিন ১২ জুন সকাল ৮টায় সাংসদ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আসামিদের নিয়োগকৃত শ্রমিকরা চাল বিতরণের জন্য প্রস্তুত হন। উপকারভোগী জেলেরাও চাল নেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়ানো ছিল। এসময় সাংসদ উপস্থিত হয়ে শ্রমিক ও জসীম উদ্দিন হায়দারকে কত টন চাল আছে জিজ্ঞেস করলে ৫৬ টন চাল আছে বলে জানান। তখন সাংসদ মুজিবুর স্তুপকৃত চাল ওজন করে দেখাতে বললে জসীম হায়দার বলেন, ‘আপনি দু’তলায় গিয়ে বিশ্রাম নিন। আমরা ওজন করে দেখছি।’ জবাবে সাংসদ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘আমি ওপরে যাবো না, আমার উপস্থিতিতে ওজন করতে হবে।’
এসময় জসীম উদ্দিন হায়দার ও শহীদুল ইসলামের অনিচ্ছা দেখতে পেয়ে ১০ জন লোককে জনপ্রতি ১ হাজার পারিশ্রমিকের বিনিময়ে তাদের মাধ্যমে আসামি, সাক্ষী ও স্থানীয় জনসাধারণের উপস্থিতিতে উক্ত চাল ওজন করেন। ওজন করার পর দেখা যায়, ইউনিয়ন পরিষদের গুদামে ৪০ টন চাল রয়েছে। অবশিষ্ট ১৬ টন পাওয়া যায়নি। এসময় সাংসদ মুজিবুর রহমান ইউপি সচিব মোহাম্মদ জালাল মিয়ার কাছ থেকে চালানের কপি দেখতে চাইলে তিনি চালানের কপি না পাওয়ার বিষয়টি লিখিতভাবে জানান।
পরবর্তীতে চেয়ারম্যান জসীম উদ্দিন হায়দার ও শহীদুল ইসলাম ইউনিয়ন পরিষদে স্তুপকৃত চাল কম বলে স্বীকার করে নেন। এসময় চেয়ারম্যানের দুর্নীতি প্রত্যক্ষ করার পর স্থানীয় জনতা উত্তেজিত হয়ে পড়লে সাংসদ মুজিবুর রহমান তাৎক্ষণিক সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে আসামিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়ায় আসামি জসীম ও শহীদুল সাংসদকে দেখে নেওয়ার হুমকি এবং উপস্থিত লোকজনকে বেশি বাড়াবাড়ি করলে হাত-পা ভেঙে দেওয়ার হুমকি দেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
সূত্র: একুশে পত্রিকা

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আগামী জাতীয় নির্বাচন বানচালে ভেতরের বা বাইরের যে কোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। গতকাল বুধবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি সংক্রান্ত এক উচ্চ পর্যায়ের সভায় তিনি একথা বলেন। বৈঠক শেষে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। খবর বাসসের। প্রেস সচিব জানান, বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, আগামী নির্বাচন সুন্দর ও উৎসবমুখর করতে হলে মানুষের কাছে পৌঁছতে হবে, নির্বাচনী নীতিমালা, ভোটকেন্দ্রের নিয়ম, কীভাবে ভোট প্রদান করতে হবে, কোথাও বিশৃঙ্খলা হলে কী করতে হবে এসব বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে হবে। তিনি বলেন, নির্বাচন বানচালের জন্য ভেতর থেকে, বাইরে থেকে অনেক শক্তি কাজ করবে। ছোটখাট না, বড় শক্তি নিয়ে বানচালের চেষ্টা করবে। হঠাৎ করে আক্রমণ চলে আসতে পারে। এই নির্বাচন চ্যালেঞ্জিং হবে। যত ঝড়ঝঞ্ঝাই আসুক আমাদের সেটা অতিক্রম করতে হবে। প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে মূলত চারটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়– নির্বাচনকালীন পদায়ন, ট্রেনিং, নিরাপত্তা ইস্যু এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় ডিসইনফরমেশন মনিটরিং। প্রেস সচিব জানান, নির্বাচনী দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের বদলি ও পদায়নের বিষয়ে এলাকার গুরুত্ব বিবেচনায় কর্মকর্তাদের দক্ষতা বিবেচনা করে বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় বদলি ও পদায়নের বিষয়ে ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাজ শুরু করেছে। এর পাশাপাশি নির্বাচন কমিশন নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করবে এমন কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ প্রদানও শুরু করেছে। কর্মকর্তাদের নিজ জেলা ও নিকটবর্তী জেলা এবং আত্মীয় পরিজনের কেউ প্রার্থী হলে সেসব নির্বাচনী এলাকায় দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রাখা হবে। আগের তিনটি নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করেছেন এমন কর্মকর্তাদের বিরত রাখা হবে। যত দ্রুত সম্ভব পোস্টিং দিয়ে দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে যাতে করে তারা পর্যাপ্ত সময় পায় প্রস্তুতি নেয়ার জন্য এবং প্রয়োজনীয় ট্রেনিং শুরু করা যায়। শফিকুল আলম জানান, আজকের বৈঠকে নির্বাচন নিয়ে সরকার, নির্বাচন কমিশন ও বিভিন্ন বাহিনীর মধ্যে সমন্বয়ের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। মিটিংয়ে এআই, ডিস–ইনফরমেশন, মিস–ইনফরমেশন নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, বৈঠকের একটা বড় কনসার্ন ছিল, সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনো অপপ্রচার ছড়িয়ে পড়লে সেটা কীভাবে দ্রুত ডিবাঙ্ক করা যাবে তা নিয়ে। অনেক সময় দেখা যায়, কোনো অপতথ্যকে আইডেন্টিফাই করে সেটা যে অপতথ্য এটা প্রচার করতে গিয়ে অনেক সময় লেগে যায়। সেই সময়ের মধ্যে অনেক ক্ষতিও হয়ে যায়। এজন্য একটি সেন্ট্রাল ডিস–ইনফরমেশন মনিটরিং সেল ও একটি সেন্ট্রাল কমিউকেশন সেল তৈরির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। শুধু শহর অঞ্চল বা জেলা পর্যায়ে না, গ্রাম পর্যায়েও মানুষের কাছে যেন ফ্যাক্টচেকিং তথ্যগুলো পৌঁছাতে পারে সে বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা গুরুত্ব দিয়েছেন। অধ্যাপক ইউনূসের বরাত দিয়ে প্রেস সচিব জানান, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় অপপ্রচার আসবে। নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য দেশের ভেতর থেকে বাইরে থেকে খুবই পরিকল্পিতভাবে নানারকম অপপ্রচার চালানো হবে। এআই দিয়ে ছবি–ভিডিও তৈরি করে ছেড়ে দেওয়া হবে। এটাকে সামাল দিতেই হবে। একটা অপপ্রচারের সূচনা হওয়া মাত্রই সেটা ঠেকাতে হবে যেন ছড়াতে না পারে। নির্বাচন–কেন্দ্রিক প্রচার–প্রচারণার জন্য তথ্য মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য মন্ত্রণালয় কাজ শুরু করেছে বলে জানান তিনি। বৈঠকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান, সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, প্রতিরক্ষা ও জাতীয় সংহতি বিষয়ক প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আব্দুল হাফিজ, আইসিটি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, মুখ্য সচিব মো. সিরাজ উদ্দিন মিয়া, নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ, স্বরাষ্ট্র সচিব নাসিমুল গণি, মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশিদ, পিএসও লে. জে. কামরুল হাসান, পুলিশের মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম, ডিজি র‌্যাব এ কে এম শহিদুর রহমান, ডিজি কোস্টগার্ড রিয়ার এডমিরাল জিয়াউল হক, ডিজি আনসার মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ এবং গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই, ডিজিএফআই ও এসবির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।