কুড়িগ্রামের রৌমারীতে ইউরিয়া, টিএসপি ও ডিএপি সারের সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। এ নিয়ে দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও ডিলার ও উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে রাখেন কৃষকরা। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে হাতাহাতিসহ তুমুল হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। অপরদিকে পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল শনিবার সকাল ১১টার দিকে কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলার রৌমারী বাজার ও বড়াইকান্দি বাজারে।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর আমন মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯ হাজার ৭৭৫ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হচ্ছে। ওই জমির অনুকূলে সার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে টিএসপি ৪৯.২০, ইউরিয়া ৩৮৫ ও ডিএপি ১০৯.২০ মে.টন।
উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারের সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বিএডিসি সার ডিলার সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক সারের ব্যবসা পরিচালনা করছেন না। ডিলাররা সেপ্টেম্বর মাসের (টিএসপি, এমওপি ও ডিএপি) উত্তোলন করে সার কৃষক পর্যায়ে বিক্রয় না করে অবৈধভাবে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রয় করেছেন। এছাড়াও ডিলারদের সার উত্তোলন, মজুত ও বিতরণের বিষয়টি যথাযথভাবে মনিটরিং করছে না কৃষি বিভাগ। কিছু ক্ষেত্রে কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশে নানা অনিয়ম করছেন ডিলাররা। প্রত্যেক ডিলারকে ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ বাজারের নিজস্ব ঘর থেকে কৃষকদের কাছে সার বিক্রি না করে তাদের পছন্দের ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দেন। তারা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চড়া দামে বিক্রি করছে। এ অপরাধে রৌমারী বাজারে কয়েকজন খুচরা ব্যবসায়ীদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করা হয়েছে।
উপজেলার রৌমারী ইউনিয়নের কৃষক মজনু মিয়া বলেন, ডিএপি সার ১০৫০ থেকে ১৩৫০, টিএসপি তিউনিসিয়া ১৩৫০ থেকে ২৪০০, ইউরিয়া ১৩৫০ থেকে ১৬০০ টাকা করে কিনতে হচ্ছে। মেমো চাইলে বলে, সার নাই। ডিলারদের কারসাজির কারণে এ ধরনের দামে বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে।
মিলছে না সরকার নির্ধারিত দামে সার। অতিরিক্ত টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে ইউরিয়া, ডিএপি, এমওপি, টিএসপি সার। ডিলারদের কারসাজির কারণেই কৃষকদের বাড়তি এ অর্থ গুনতে হচ্ছে। প্রায় সব দোকানেই সাইনবোর্ড নাই, বিক্রয় রেজিস্টার নেই, ক্যাশ মেমো ব্যবহার করা হয় না, কৃষকদের মোবাইল নম্বর লেখা হয় না।
খাটিয়ামারী গ্রামের কৃষক আফতারুল ইসলাম বলেন, আমন ধানের চারা রোপণ করবো। এতে টিএসপি সার লাগবে। সার ব্যবসায়ী মিনুর দোকানে গেলে টিএসপি বাংলা, তিউনিসিয়া সার পাওয়া যাচ্ছে না। সে জন্য আর সার নেওয়া হয় নাই। কৃষি অফিসারের কাছে গেলে তিনি বলেন, সার আছে, পাবেন। অথচ আমরা সার পাচ্ছি না। সার ব্যবসায়ীদের কাছে কোনো রেজিস্টারে হিসাব নাই। ক্যাশ মেমো দেয় না, রেজিস্টার নাই এবং কৃষকদের মোবাইল নম্বর তারা রাখে না।
বিসিআইসি সার ডিলার মজাহার আলী বলেন, বরাদ্দ কম, চাহিদা বেশি। বাংলা টিএসপি, তিউনিসিয়া টিএসপি ছাড়া অন্য কোনো সার সংকট নাই। এসময় তিনি আরও বলেন, বরাদ্দ কম, চাহিদা বেশি। তাই কৃষকদের চাহিদা অনুযায়ী সার দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ এ ব্যাপারে তৎপর রয়েছে। চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ কম পাওয়ায় এ সংকট সৃষ্টি হয়েছে। খুব শিগগিরই এ সমস্যা সমাধান হবে। এ উপজেলায় বিসিআইসি ১৪, বিএডিসি ২০ এবং খুচরা ১০ জন ডিলার নিয়োগ দেওয়া রয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করা হয়েছে। মনিটরিং অব্যাহত আছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার উজ্জল কুমার হালদার বলেন, সার নিয়ে বিভিন্ন স্থানে কিছু সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি শান্ত করে ও অবরুদ্ধদের উদ্ধার করা হয়েছে। সার সংকটের ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।