শরীয়তপুরে রাতে সড়ক অবরোধের চেষ্টা ছাত্রলীগের, ধাওয়া দিলেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা

ঢাকা-শরীয়তপুর সড়কের নশাসন মাঝিরহাট এলাকায় গাছ ফেলে ও আগুন জ্বেলে গতকাল শনিবার দিবাগত রাত পৌনে ১২টার দিকে অবরোধের চেষ্টা হয়েছে। এ সময় ২০ থেকে ২৫ জনের একটি দল নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের পক্ষে এবং হরতাল সফল করার জন্য বিভিন্ন স্লোগান দেয়।

এদিকে ওই ঘটনার খবর পেয়ে স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীরা ওই দলকে ধাওয়া করে সড়ক থেকে সরিয়ে দেন। পরে শরীয়তপুর জেলা ছাত্রলীগ ও বাংলাদেশ স্টুডেন্টস লীগের ফেসবুক পেজ থেকে আগুন জ্বেলে ও গাছ ফেলে সড়ক অবরোধ করার একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। এর মধ্যে বাংলাদেশ স্টুডেন্টস লীগের ফেসবুক পেজ ভেরিফায়েড।

বিএনপি নেতারা জানান, গত বছর ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকার পতনের পর জাজিরায় সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোবারক আলী সিকদারের নেতৃত্বে ১৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের প্রকাশ্যে কর্মসূচি পালন করা হয়। এরপর সংগঠনটি আর প্রকাশ্যে কোনো কর্মসূচি পালন করেনি। কিন্ত রাতের আঁধারে বিভিন্ন সময় জেলার বিভিন্ন স্থানে মশালমিছিল, পোস্টার সাঁটানো ও বিক্ষোভ মিছিল করা হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল রাতে ঢাকা-শরীয়তপুর সড়কের নড়িয়া উপজেলার নশাসন মাঝিরহাট এলাকায় ১০ থেকে ১২টি মোটরসাইকেল নিয়ে মহড়া দেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। তাঁরা গাছ ফেলে সড়কের যানবাহন চলাচলে বাধা দেন। এ সময় তাঁরা সেখানে গাছ, পাটকাঠি ও টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে দেন। তাঁরা শেখ হাসিনা, শেখ মুজিবুর রহমান, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগকে নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন। তাঁরা স্লোগান দিয়ে হরতাল সফল করার আহ্বান জানান।

এ খবর ছড়িয়ে পড়লে রাত ১২টার দিকে মাঝিরহাট এলাকা থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীরা ছাত্রলীগের ওই দলকে ধাওয়া করেন। তাঁরা সড়ক থেকে গাছগুলো সরিয়ে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করেন। খবর পেয়ে নড়িয়া ও সদরের পালং মডেল থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে।

ওই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বাদশা হাওলাদার নামের এক ব্যক্তি প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাত ১১টা ৪৫ মিনিটের সময় গাড়ি নিয়ে এই এলাকা দিয়ে যাচ্ছিলাম। কিছু লোক আগুন জেলে ও গাছ ফেলে সড়ক অবরোধ করছিল। আমাকে ভয় দেখিয়ে এখান থেকে সরে যেতে বলে। কিছু দূর গিয়ে আমি পুলিশকে ফোন করে জানাই।’

নড়িয়ার নশাসন ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি নুরুজ্জামান হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, রাতের আঁধারে হঠাৎ একটি দুর্বৃত্ত চক্র সড়কে গাছ ফেলে, আগুন জ্বেলে অবরোধের চেষ্টা করে। আমরা বিএনপির নেতা-কর্মীদের ও স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে তাদের ধাওয়া করি। এরপর সড়ক থেকে গাছ সরিয়ে দিই।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শরীয়তপুর জেলা কমিটির আহ্বায়ক ইমরান আল নাজির প্রথম আলোকে বলেন, পলাতক ও নিষিদ্ধ সংগঠনের কিছু নেতা-কর্মী ও সমর্থক রাতের আঁধারে ঝটিকা মিছিল, সড়কে গাছ ফেলে প্রতিবন্ধকতা করছে। অনেক দিন থেকেই তারা বিভিন্ন সময় এ কাজগুলো করছে। কিন্তু পুলিশ ও প্রশাসনের লোকজন তা বন্ধে তেমন কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন না। আমরা ছাত্র-জনতা মিলে নিষিদ্ধ সংগঠনের সব অনৈতিক ও জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে—এমন কার্যক্রম প্রতিহত করব।’

নড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম উদ্দিন মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাতের আঁধারে নিষিদ্ধ একটি সংগঠনের পক্ষে স্লোগান দিয়ে কিছু লোক সড়কে গাছ ফেলে অবরোধের চেষ্টা করেছিলেন। স্থানীয় লোকজন তাঁদের ধাওয়া করেছেন। আমরা গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেছি। কারা ওই ঘটনা ঘটিয়েছেন, তা শনাক্তে কাজ করছে পুলিশ। তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’