সরকারি অর্থবরাদ্দের বিনিময়ে শিক্ষা ব্যবস্থায় আধিপত্য ও নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এমন অভিযোগে ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলো হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি। শিক্ষা-গবেষণায় কয়েকশ’ কোটি ডলারের তহবিল বন্ধের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে এ আইনি ব্যবস্থা হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষের।
ইহুদিবিদ্বেষ আর মতাদর্শগত পক্ষপাতিত্ব নির্মূলের দোহাই দিয়ে গবেষণায় বরাদ্দ বাতিলের মাধ্যমে বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর আঘাত হানছে ট্রাম্প প্রশাসন। ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভের জেরে বাতিল করেছে কলাম্বিয়া, প্রিন্সটন, কর্নেল, ব্রাউন, নর্থওয়েস্টার্নসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল।
তবে সরকারি হস্তক্ষেপ মানতে রাজি না হওয়ায় ট্রাম্প প্রশাসনের সবচেয়ে বড় খড়গ পড়ে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির ওপর। বিশ্ববিদ্যালয়টির ২৩০ কোটি ডলারের তহবিল আটকে দেয়া এবং করমুক্তি সুবিধা বাতিলের হুমকির ঘটনায় ক্ষোভ ছড়ায় সারা দেশে। অবশেষে এ বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নিল হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ। বস্টনের আদালতে দায়েরকৃত মামলায় অভিযোগ, সরকারি অর্থ বরাদ্দের বিনিময়ে শিক্ষা ব্যবস্থায় আধিপত্য ও নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা করছে ট্রাম্প প্রশাসন।
আমেরিকান ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক জন ব্র্যাশট বলেন, ‘হার্ভার্ড, কলাম্বিয়া ও আইভি লিগের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের অবস্থা একটা সাবধানবাণী। ট্রাম্প প্রশাসনের কৌশল এটা। মার্চের শুরুতে বিচার বিভাগের চিঠিতে যে ৬০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্য করা হয়েছিল, আমেরিকান ইউনিভার্সিটিও তার মধ্যে আছে।’
ট্রাম্প প্রশাসনের দমননীতির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হার্ভার্ড। অভিযোগপত্রে নাম উল্লেখ করা হয়েছে মানবসম্পদ, স্বাস্থ্য, জ্বালানি ও শিক্ষাসহ সরকারের বেশ কিছু মন্ত্রণালয় ও সংস্থার কর্মকর্তাদের।
স্থানীয় সময় সোমবার (২১ এপ্রিল) রাতে দায়েরকৃত মামলায় বলা হয়, তহবিল আটকে দেয়ায় শিশুদের ক্যানসার, আলঝেইমার ও পারকিনসন্সসহ বিভিন্ন রোগ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা ব্যাহত হবে। ইহুদি ও মুসলিমবিদ্বেষ ঠেকাতে কাজ চলছে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ।
আমেরিকান ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এলিজাবেথ শ্যাকম্যান হার্ড বলেন, ‘হার্ভার্ড রুখে দাঁড়িয়েছে। এমআইটি, স্ট্যানফোর্ডের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোও শক্ত অবস্থান নিচ্ছে। আমার মনে হয় যে স্রোত উল্টো দিকে ঘুরতে শুরু করেছে। উচ্চশিক্ষার ওপর যে আঘাত আসছে, সেসব যে মানুষ মেনে নেবে না, সে বিষয়ে ইতিবাচক লক্ষণ আমরা এখনই দেখছি।’
বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন তালিকায় এক থেকে চারের মধ্যে অবস্থান হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির। ১৬৩৬ সালে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টি যুক্তরাষ্ট্রের প্রাচীনতম উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ঔষধশাস্ত্র ও চিকিৎসা, জেনেটিক্স, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসহ সমগ্র প্রযুক্তি খাত থেকে শুরু করে নবায়নযোগ্য জ্বালানি পর্যন্ত হার্ভার্ডের গবেষণা কার্যক্রম, উদ্ভাবন আর জনকল্যাণমূলক সম্পৃক্ততার সুফল ভোগ করছে সারা বিশ্বের সর্বস্তরের মানুষ।