চট্টগ্রামের পটিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনের মিছিলে হামলার ঘটনায় ১১ মাস পর মামলা দায়ের করেছে এক শ্রমিক দল কর্মী। এতে ৭১ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরও ১৫০-২০০ থেকে জনকে আসামি করা হয়েছে।
এছাড়া মামলায় আসামির তালিকায় আছেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পটিয়ার সাবেক এমপি, সাবেক সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান, আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
গত ২৬ জুন (বৃহস্পতিবার) সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত পটিয়ায় মামলা দায়ের করা হয়। তবে বিচারক বেগম তাররাহুম আহমেদ মামলাটি আমলে নিয়ে আগামী এক মাসের মধ্যে (২৭ জুলাই) পটিয়া থানার ওসিকে ঘটনা তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেন।
উপজেলার কাশিয়াইশ ইউনিয়নের বুধপুরা গ্রামের বাসিন্দা ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদল কর্মী মো. শফিউল আলম (৪২) বাদি হয়ে মামলাটি করেন।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হলে গত বছরের ৪ আগস্ট সকালে শান্তিপূর্ণ মিছিল নিয়ে আন্দোলনকারীরা পটিয়া পৌর সদর হয়ে ইন্দ্রপুল বাইপাস চট্টগ্রাম কক্সবাজার মহাসড়কে পৌঁছালে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিকলীগ ও তাদের অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা শান্তিপূর্ণ মিছিলে ককটেল নিক্ষেপ, লাঠিচার্জ ও গুলি ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এসময় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা রামদা, চাপাতি, লোহার রড দিয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করে। হামলায় আন্দোলনকারীদের অনেকেই আহত হন। তাদের মধ্যে অনেকের চোখ হারিয়েছেন। আওয়ামী লীগের ক্ষমতার দাপটে তারা এ ধরনের পূর্বপরিকল্পিতভাবে ছাত্র-জনতার মিছিলে হামলা চালায়।
মামলার আসামিদের তালিকায় চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পটিয়ার সাবেক সংসদ সদস্য মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সেলিম নবী, সাবেক সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য চেমন আরা তৈয়ব, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগ নেতা দিদারুল আলম, আওয়ামী লীগ নেতা ডিএম জমির উদ্দিন, জসিম উদ্দিন, নুর উর রশিদ চৌধুরী এজাজ ওরফে ইয়াবা এজাজ, জঙ্গলখাইন ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সবুজ, আওয়ামী লীগ নেতা দেবব্রত দাশ দেবু, আবদুল্লাহ আল হারুন, যুবলীগ নেতা কোরবান আলী, আওয়ামী লীগ নেতা হাজী মোহাম্মদ আলম মেম্বার, আওয়ামী লীগ নেত্রী রোকেয়া খানম, কুসুমপুরা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ইব্রাহিম বাচ্চু, আওয়ামী লীগ নেতা এমএ রহিম, আবুল কালাম বাবুল ওরফে স্ক্রাপ বাবুলসহ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের নাম উল্লেখ রয়েছে।
মামলার নথির বরাত দিয়ে বাদি পক্ষের আইনজীবী নাজমুল হোমেন বলেন, জুলাই বিপ্লবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গত ৪ আগস্ট পটিয়া পৌর সদরে আন্দোলনকারীদের ওপর আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের হামলার ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় জুলাই আগস্টে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন আন্দোলনের এক শ্রমিকদল নেতা পটিয়া সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাসিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি করেন। মামলায় ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক দুই এমপি, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানসহ ৭১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। বিচারক মামলাটি গ্রহণ করে আগামী ২৭ জুলাইয়ের মধ্যে পটিয়া থানার ওসিকে ঘটনা তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
পটিয়া থানার ওসি আবু জায়েদ মো. নাজমুন নুর বলেন, আদালতের একটি মামলার আদেশের কপি হাতে পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।