আবারও ডুবলো চট্টগ্রাম, উন্নয়নকাজের পরও ‘জলজট’

১৪ হাজার ৩৪৯ কোটি টাকা ব্যয়ে জলাবদ্ধতা নিরসনে ৪ প্রকল্প । চট্টগ্রামে বর্ষা মানেই যেন দুর্ভোগের মৌসুম শুরু। টানা বৃষ্টি হলেই নালা-খাল উপচে পানিতে তলিয়ে যায় নগরী। কোথাও এক হাঁটু তো, কোথাও এক কোমর পানি। কর্মজীবী থেকে শুরু করে স্কুলগামী ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের পড়তে হয় জল-দুর্বিপাকে। অথচ জলাবদ্ধতা নিরসনে চার প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪ হাজার ৩৪৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে দুই তৃতীয়াংশ টাকা খরচও হয়ে গেছে।রাতভর টানা বৃষ্টিতে সোমবার (২৮ জুলাই) সকালেই চিরচেনা দৃশ্য—ডুবেছে নগরীর বহু সড়ক, থেমে গেছে গাড়ি চলাচল, থমকে গেছে জনজীবন।

সরেজমিন দেখা গেছে, বহদ্দারহাট, আগ্রাবাদ, চকবাজার, হালিশহর, কাপাসগোলা কিংবা পাঁচলাইশ—শহরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও জনবহুল এলাকাগুলো দেখে মনে হচ্ছে যেন জলপথ। কোথাও হাঁটুসমান, কোথাও কোমরসমান পানি। রাস্তায় নেই স্বাভাবিক গাড়ি চলাচল, কোথাও রিকশা ঠেলছেন চালক, কোথাও যাত্রীরা জুতা হাতে হেঁটে চলেছেন গন্তব্যের দিকে।

সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে অ্যাম্বুলেন্স, স্কুল বাস ও অফিসগামী মানুষ। সকাল থেকে নগরীর বিভিন্ন মোড়ে দীর্ঘ যানজট, রাস্তায় আটকে পড়া অসহায় যাত্রীরা রীতিমতো ধৈর্যের পরীক্ষা দিচ্ছেন।

চকবাজারের এক পথচারী টিপু বলেন, ‘প্রতি বর্ষায় এই দুর্ভোগ আমাদের সহ্য করতে হয়। সরকার শুধু আশ্বাস দেয়, কিন্তু বাস্তবে আমরা পানি ভেঙেই পথ চলি।’

রাজিব দাশ নামে আরেক পথচারী বলেন, ‘আমাদের উন্নয়নের জন্য প্রকল্পে হাজার হাজার কোটি টাকা শুনি কিন্তু বাস্তবে উন্নয়ন দেখিনা। বৃষ্টি হলেই জলে ডুবে পুরো শহর। কে দেখবে এসব। নগর পিতা নগরে, জলে ডুবে শহরে।’

চট্টগ্রাম নগরীতে জলাবদ্ধতার নতুন নতুন চিত্র যুক্ত হচ্ছে। পাঁচলাইশের কাতালগঞ্জ, জিইসি, চকবাজার, আগ্রাবাদ কমার্স কলেজ এলাকা, ইপিজেড ও হালিশহরে হাঁটু থেকে কোমরসমান পানি জমেছে। এই পানির স্রোতে কোথাও ছোট গাড়ি বন্ধ হয়ে পড়েছে, কোথাও পথচারীরা ভারসাম্য হারিয়ে পড়ে যাচ্ছেন।

এদিকে জেলার রাউজান, বাঁশখালী, পটিয়া ও আনোয়ারাসহ বিভিন্ন উপজেলায় অতিবৃষ্টিতে নদী-খাল উপচে পড়ায় দেখা দিয়েছে প্লাবন। নিচু এলাকা ডুবে গেছে।

‘সিটি কর্পোরেশন খাল ও ড্রেন নিয়মিত পরিষ্কার না করায় জলাবদ্ধতা ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। খালে ময়লা জমে আছে, পানি নামার পথ নেই—তাই একটু বৃষ্টি হলেই এ দশা’, এমন মন্তব্য এক দোকানদারের।

তবে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম দাবি করেন, ‘আগের মতো স্থায়ী জলাবদ্ধতা আর হচ্ছে না। পানি ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই নামছে। চারটি প্রকল্পের আওতায় প্রায় ১৪ হাজার ৩৯ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ চলছে। কাজ শেষ হলে নগরী জলাবদ্ধতামুক্ত হবে।’

তবে ময়লা-আবর্জনায় আটকে থাকা ড্রেনেজ ব্যবস্থা আর অসমাপ্ত উন্নয়ন কাজের বাস্তবতা কিছুটা ভিন্ন চিত্রই তুলে ধরছে।

চট্টগ্রাম পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা মাহমুদুল আলম জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ৫৬ দশমিক ০৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। বৃষ্টিপাত আরও দুই-তিন দিন অব্যাহত থাকতে পারে। ফলে পাহাড়ধসের আশঙ্কাও রয়েছে বলে তিনি সতর্ক করেছেন।

জলাবদ্ধতার এই চক্রবদ্ধ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি কবে মিলবে? কাজ চলছে, প্রকল্প আছে, বাজেট বরাদ্দও আছে; তবুও নাগরিক দুর্ভোগ কেন কাটছে না, সে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে জলের মতোই।