যেকোনো জাতির জীবনে স্বাধীনতাসংগ্রাম সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ও গৌরবময় ঘটনা। উনবিংশ শতাব্দীতে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে আমরা বহু জাতিরাষ্ট্রের উত্থান দেখতে পাই। জাতীয়তাবাদ এক প্রচণ্ড শক্তি হিসেবে এর পেছনে কাজ করে। বস্তুত প্রতিটি জাতির রয়েছে তার স্বাধীনতাসংগ্রামের সুদীর্ঘ ইতিহাস। বিংশ শতাব্দীতেও এই ধারা অব্যাহত থাকে। বিশেষ করে এশিয়া, আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে ঔপনিবেশিক শাসন এবং শোষণ থেকে মুক্তির লক্ষ্যে স্বাধীনতাসংগ্রাম সংঘটিত হয়। জাতীয়তাবাদী শক্তিতে উদ্বুদ্ধ মুক্তিপাগল মানুষের কাছে হার মানতে বাধ্য হয় উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ। উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে ভারতবর্ষের স্বাধীনতাসংগ্রামের সফলতা কিংবা মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের কবল থেকে ভিয়েতনামের জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের বিরাট সাফল্য। এ ছাড়া বর্তমান শতাব্দীতে এশিয়া, আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে আরো অনেক জাতিরাষ্ট্রের অভ্যুত্থান ঘটে। ফরাসি দার্শনিক রুশো তার ‘The Social Contract’ গ্রন্থে উল্লেখ করেন যে ‘Man is born free and he is everywhere in chains’ অর্থাৎ মানুষ স্বাধীন হয়ে জন্মগ্রহণ করে, কিন্তু সর্বত্রই সে শৃঙ্খলিত। মহান ফরাসি বিপ্লবের উদগাতা ও প্রেরণা জোগানকারী এই দার্শনিক অষ্টাদশ শতাব্দীতে পরাধীন মানুষের, বিশেষ করে ফরাসি দেশের শোষিত, নির্যাতিত এবং শৃঙ্খলিত মানুষের স্বাধীনতার জয়গান গেয়েছিলেন। যেহেতু স্বাধীনতা মানুষের জন্মগত অধিকার, তাই রুশো তার গ্রন্থে পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে স্বাধীনতা অর্জনের দিকে পথনির্দেশ করেন।