Search
Close this search box.

আল্লামা মুহাম্মদ সুলতান যওক নদভীর মৃত্যুতে শোক জানালেন বিশ্ববরেণ্য আলেমরা

দেশের শীর্ষ আলেম, মাদরাসা শিক্ষা সংস্কারের পুরোধা ব্যক্তিত্ব, জামেয়া দারুল মা’আরিফ আল-ইসলামিয়া, চট্টগ্রামের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক আল্লামা মুহাম্মদ সুলতান যওক নদভী ইন্তেকালে শোক জানিয়েছেন দেশ-বিদেশের বরেণ্য ইসলামী ব্যক্তিত্ব ও আলেমরা।

তিনি গত শুক্রবার (২ মে) দিবাগত রাত ১টার দিকে চট্টগ্রামের এভারকেয়ার হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। পরদিন শনিবার জামেয়া দারুল মা’আরিফ আল-ইসলামিয়া প্রাঙ্গণে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হয় এবং মাদরাসার কবরস্থানে তাঁর লাশ দাফন করা হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স ছিল ৮৬ বছর।

তিনি দুই ছেলে, পাঁচ মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
আল্লামা মুহাম্মদ সুলতান যওক নদভীর মৃত্যুতে যারা শোক জানিয়েছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর মুসলিম স্কলার্স-এর প্রধান ড. আলি কারাহদাগি, ইন্টারন্যাশনাল লিগ অব ইসলামিক লিটারেচারের প্রধান ড. হাসান আল-আমরানি, লন্ডনের কেমব্রিজ ইসলামিক কলেজের ডিন ড. মুহাম্মাদ আকরাম নদভী, ব্রিটেনের ইসলামী ব্যক্তিত্ব মুফতি শাব্বির আহমেদ, লন্ডনপ্রবাসী প্রখ্যাত ইসলামী দাঈ আল্লামা ড. মাহমুদুল হাসান, প্রখ্যাত ভারতীয় আলেম ড. সাইয়েদ আবদুল মাজিদ আল-ঘুরি প্রমুখ। নিম্নে তাঁদের বিবৃতির কিছু অংশ কালের কণ্ঠের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর মুসলিম স্কলার্স এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘ভারত উপমহাদেশের প্রখ্যাত ইসলামী ব্যক্তিত্ব বরেণ্য সাহিত্যিক আল্লামা শায়খ মুহাম্মদ সুলতান যওক নদভীর ইন্তেকালে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন গভীর শোক জানাচ্ছে।

তিনি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়নের একজন সম্মানিত সদস্য ছিলেন। অসংখ্য ছাত্র ও শুভাকাঙ্ক্ষী রেখে গেছেন। মহান আল্লাহ তাঁকে অনুগ্রহ করুন এবং তাঁর সুপ্রশস্ত জান্নাতে তাঁকে স্থান দান করুন, আখিরাতে তাঁকে সুউচ্চ মর্যাদা উন্নীত করুন। এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবার, সন্তান ও ছাত্রদের ধৈর্যশক্তি ও পুণ্য দান করুন।

ইন্টারন্যাশনাল লিগ অব ইসলামিক লিটারেচারের প্রধান ড. হাসান আল-আমরানি এক বিবৃতিতে শোক জানিয়ে লিখেছেন, “ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক লিটারেচার (রাবেতাতুল আদব আল-ইসলামী আল-আলামিয়্যাহ) প্রধান কার্যালয় ও বাংলাদেশ কার্যালয়ের পক্ষ থেকে এর আঞ্চলিক প্রধান, জামেয়া দারুল মা’আরিফ আল-ইসলামিয়ার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক শায়খ মুহাম্মদ সুলতান যওক নদভীর মৃত্যুতে গভীর জানাচ্ছে। তিনি গত শনিবার ৫ জিলহজ মোতাবেক ৩ মে রাতে ইন্তেকাল করেছেন। তিনি রাবেতার ট্রাস্টি বোর্ডের একজন সম্মানিত সদস্য এবং রাবেতা প্রতিষ্ঠার পর থেকে বোর্ডের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক ও সেমিনারে তিনি উপস্থিত থাকতেন। রাবেতার বাংলাদেশ আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে আরবি ও বাংলাং দুটি মাসিক ‘আল-হক’ ও ‘মানারুশ শারক’ পত্রিকা প্রকাশিত হয়। তা ইসলামী সাহিত্য ও দাওয়ার প্রচার-প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

আমরা রাবেতার ট্রাস্টি বোর্ড ও বাংলাদেশ শাখার সদস্য, আরবি ভাষা ও ইসলামী সাহিত্যের প্রেমিক সবাই গভীরভাকে শোক জ্ঞাপন করছি। শায়খ মুহাম্মদ সুলতান যওক নদভী সত্যিকারভাবে আজীবন ইসলাম ও আরবি ভাষার জন্য কাজ করেছেন। তিনি আরবি ভাষার একজন প্রাজ্ঞ কবি ছিলেন। মহান আল্লাহ তাঁর ওপর রহমের বারিধারা বর্ষণ করুন।”

ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর মুসলিম স্কলার্স-এর সাবেক সভাপতি শায়খ ড. আহমদ রাইসুনি এক বিবৃতিতে লিখেছেন, বাংলাদেশের শায়খ আল্লামা মুহাম্মদ সুলতান যওক নদভী ইন্তেকাল করেছেন। তিনি গত ২ মে চট্টগ্রামের এভারকেয়ার হাসপাতালে প্রায় ৯০ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেছেন। তাঁর অসংখ্য ছাত্র ও শুভানুধ্যায়ী রয়েছে। মহান আল্লাহ তাঁকে তাঁর সুবিস্তৃত অনুগ্রহের চাদরে আবৃত করুন এবং জান্নাতে সুউচ্চ স্থান দান করুন। এবং শোকাহত তার পরিবার, ছাত্র ও শুভানুধ্যায়ীদের ধৈর্যশক্তি দান করুন।

লন্ডনের কেমব্রিজ ইসলামিক কলেজের ডিন ড. মুহাম্মাদ আকরাম নদভী এক বিবৃতি লিখেছেন, ‘আজ শনিবার ৫ জিলকদ ১৪৪৬ হিজরি রাতে দৃঢ়চেতা আলেম, প্রখর প্রতিভাধর সাহিত্যিক ও ইসলামী গবেষক শায়খ মুহাম্মদ সুলতান যওক নদভীর মৃত্যুর খবরে আমি খুবই শোকাহত হয়েছি। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজিউন। তিনি বাংলাদেশের আরবি ভাষা শিক্ষার সুদৃঢ় স্তম্ভ, জ্ঞান ও সাহিত্যের সমন্বয়ক, নিজস্ব মতামত ও অবস্থানে সংযম ও ভারসাম্যের অধিকারী এবং কোমল হৃদয় অধিকারী একজন সজ্জন ব্যক্তিত্ব। তিনি ১৯৩৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন। শিক্ষা অর্জনের এক পর্যায়ে তিনি দারুল উলুম নদওয়াতুল উলামার সান্নিধ্যে আসেন এবং আরবি ভাষায় কথন ও লিখন উভয়ক্ষেত্রেই দক্ষতা অর্জন করেন। তিনি ওই প্রতিষ্ঠান থেকে সনদ লাভ করেন এবং ‘নদভী’ উপাধি অর্জন করেন। তাঁকে নদওয়াতুল উলামার আলেমরা, বিশেষত শায়খ আবুল হাসান আলী নদভী, সাইয়েদ মুহাম্মদ রাবি হাসানী নদভী এবং সাইয়েদ মুহাম্মদ ওয়াজিহ রশীদ নদভী (রহ.) অত্যন্ত স্নেহ করতেন। তাঁরা তাঁর মধ্যে গভীর জ্ঞান, মহৎ চরিত্র, উচ্চাকাঙ্ক্ষা, দুনিয়া বিমুখতা এবং কল্যাণের প্রতি গভীর আগ্রহ দেখেছিলেন। তাঁকে ইজাজত দিয়েছেন, দারুল উলুম দেওবন্দের রঈসুল মুদাররিসিন শায়খ ফখরুল হাসান, শায়খ আবদুল ওয়াদুদ সিন্ধী, শায়খ মুহাম্মদ ইউসুফ বান্নুরি, শায়খ মুহাম্মদ জাকারিয়া কান্ধলভি, আল্লামা কারি মুহাম্মদ তৈয়্যব, হাফিজুল হাদিস আবদুল্লাহ দরখাস্তি, শায়খ মুহাম্মদ মানযুর নুমানি, শায়খ মিরাজুল হক, মুফতি মাহমুদ হাসান গঙ্গোহি, এবং আমাদের শায়খ আবুল হাসান আলী নদভী, আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ, উবাইদুল্লাহ আমৃতসারী, মুহাম্মদ আশিক ইলাহী বারনহী প্রমুখ। তিনি বাংলাদেশে আরবি ভাষা ও ইসলামী শিক্ষা প্রসারে আত্মনিয়োগ করেন এবং চট্টগ্রামে জামিয়া দারুল মা’আরিফ আল-ইসলামিয়া প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি শিক্ষা ও চিন্তাধারায় নদওয়াতুল উলামার পন্থা অবলম্বন করেন—যা ছিল মধ্যপন্থা ও ভারসাম্যমূলক।’

“আমি তাঁর কাছ থেকে ‘মুসালসাল বিল আওয়ালিয়া’ ও ‘মাহাব্বাহ’ এবং হাদিসের ইজাজাহ লাভ করেছি। আমি তাঁর সঙ্গে অনেক বার নদওয়াতুল উলামায় দেখা করেছি এবং ১৪৪৪ হিজরি সনের ৫ রবিউস সানি তারিখে চট্টগ্রামের জামিয়া দারুল মা’আরিফে একদল আলেম ও গবেষকদের সঙ্গে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করি। সেদিন মাদরাসায় আমাদের সম্মানে একটি সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে আমি বক্তৃতা প্রদান করি। এই সফরের কথা আমি বাংলাদেশ ভ্রমণের লেখায় লিখেছি। মরহুম ছিলেন একজন বরকতময় মনীষী, জ্ঞানের ঝাণ্ডবাহক, শিক্ষার্থীদের অতি কাছের প্রিয়জন। আরবি ভাষার প্রতি তাঁর এত বেশি প্রেম ছিল যার দৃষ্টান্ত বিরল। পরিস্থিতি তাঁর অনুকূলে থাকলে তিনি পুরো বাংলাদেশকে আরবি দেশে পরিণত করতেন। তিনি আরবি ভাষার সুযোগ্য লেখক ছিলেন। পরিশীলিত রীতি অনুসরণ করতেন। তিনি ছিলেন গাম্ভীর্যের অধিকারী, অল্পভাষী, শান্ত স্বভাবের অধিকারী একজন ব্যক্তিত্ব। তিনি দুনিয়া ও এর চাকচিক্য থেকে বিমুখ ও সম্পদের মোহমুক্ত ছিলেন। নিজেকে এমন কাজ ও সাধনায় ব্যস্ত রেখেছিলেন যা স্থায়ী ও চিরন্তন কল্যাণ বয়ে আনে। আহ! তাঁর জন্য জ্ঞান ও সাহিত্য কাঁদছে। সভা-সমাবেশ শোকাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে। পৃথিবীর সব প্রান্তে তাঁর মৃত্যুসংবাদ ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের পুরো অঞ্চল যেন এক শোকে মুহ্যমান এক প্রাঙ্গণে পরিণত হয়েছে। মাহন আল্লাহ তাঁর ওপর অনুগ্রহ করুন, উত্তম প্রতিদান দিন। ঠিক সেই অনুপাতে যতটা তিনি দ্বিন, কোরআনের ভাষা ও ইসলামী জ্ঞানের সেবা করেছেন।’

ব্রিটেনের প্রখ্যাত ইসলামী ব্যক্তিত্ব মুফতি শাব্বির আহমেদ শোক জানিয়ে স্মৃতিচারণ করে লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের চট্টগ্রামের শায়খ মুহাম্মদ সুলতান যওক নদভীর ইন্তেকালের খবর শুনে আমি মর্মাহত। ২০২২ সালের নভেম্বরে তার বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সৌভাগ্য হয়েছিল। তখন আমি আমার ভ্রমণকাহিনীতে নিম্নে কথাগুলো লিখেছিলাম। আল্লাহ তাআলা তাঁকে জান্নাতুল ফেরদাউসে দান করুন। আমিন।’
‘ওইদিন রাত সাড়ে ৮টায় আমরা শহরের বহদ্দারহাট এলাকায় শায়খ আবু আল-হাসান আলী নদভী (মৃত্যু : ১৪২০/১৯৯৯)-এর শিষ্য ৮৪ বছর বয়সী শায়খ মুহাম্মদ সুলতান যওক নদভীর বাসভবনে পৌঁছাই। শায়খ আবু আল-হাসান আলী নদভীর নির্দেশে তিনি জামেয়া দারুল মা’আরিফ আল-ইসলামিয়া প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলাদেশ সফরের পর তিনি তাকে লিখেছিলেন, নদওয়াতুল উলামার আদলে ধর্মীয় ও আধুনিক জ্ঞানের সমন্বয়ে একটি প্রতিষ্ঠান স্থাপন করতে, যাতে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জগুলো যথাযথভাবে মোকাবেলা করা যায়। এই প্রতিষ্ঠানটি ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং বর্তমানে তাতে ১৬০০ শিক্ষার্থী রয়েছে। এই মাদরাসার অনেক সাবেক শিক্ষার্থী বিভিন্ন দেশ থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেছেন। শায়খ মুহাম্মদ সুলতান যওক নদভী সর্বমহলে একজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব। তিনি আমাদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান এবং আমাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করেন। তিনি আমাদের প্রিয় আবদুর রশিদ ভাই গেলুকে যুক্তরাজ্য সফরের সময় সহায়তার জন্য এবং দেশের শত শত দারুল উলুমকে তার সহায়তার জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি আমাকে তার জীবনের অন্তর্দৃষ্টি প্রদানকারী একটি উর্দু বই উপহার দেন। আমি তাঁকে আমার বই পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দেই।’

‘অতঃপর আমি শায়খকে হাদিসে ইজাজার জন্য অনুরোধ করি। শায়খ মুসাসাল বিল আউলিয়াহ, মুসাসাল বিল মাহাব্বাহ এবং মুসাসাল বিল মুসাফাহা পাঠ করেন। অতঃপর তিনি একটি লিখিত ইজাজাও প্রদান করেন। শায়খ অনেক বড় বড় ব্যক্তিদের কাছ থেকে ইজাজা নিয়েছেন। যার মধ্যে রয়েছেন শায়খুল হাদিস মাওলানা মুহাম্মাদ জাকারিয়া (মৃত্যু ১৪০২/১৯৮২), হাফিজুল হাদিস মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ দারখাস্তি (১৪১৫/১৯৯৪), আবদুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ (মৃত্যু. ১৪১৭/১৯৯৭) এবং কারি মুহাম্মাদ তায়েব (মৃত্যু ১৪০৩/১৯৮৩)। তবে তার সংক্ষিপ্ততম সনদ শায়খ উবায়দুল্লাহ অমৃতসরীর মাধ্যমে, যিনি হাকিমুল উম্মাহ মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (মৃত্যু ১৩৬২/১৯৪৩) থেকে বর্ণনা করেছেন, যিনি মাওলানা ফজলুর রহমান গঞ্জমুরাদাবাদী (মৃত্যু ১৩১৩/১৮৯৫) থেকে বর্ণনা করেছেন, যিনি শাহ আবদুল আজিজ (মৃত্যু ১২৩৯/১৮২৪) থেকে বর্ণনা করেছেন। এই সুযোগের জন্য আমি মহান আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ এবং তারপরে লন্ডনে আমার বন্ধু মাওলানা মাহফুজ আহমেদ সিলেটির কাছে, যিনি আমাকে তার সাথে দেখা করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। যাওয়ার আগে আমি শায়খের কাছে কিছু পরামর্শ চাই। তিনি বলেন, ‘হাজী ইমদাদুল্লাহ বলেছেন, আল্লাহর কাছে পৌঁছার সবচেয়ে কাছের পথ হলো, তাঁর সৃষ্টিকে ধর্মীয়ভাবে কল্যাণ প্রদান করা।’ আল্লাহ শায়খের জীবন দীর্ঘ করুন এবং তাকে আফিয়াহ দান করুন।’

লন্ডনপ্রবাসী প্রখ্যাত ইসলামী দাঈ আল্লামা ড. মাহমুদুল হাসান লিখেছেন, ‘আমাদের হৃদয়ের সম্রাট আল্লাহর সান্নিধ্যে…আল্লামা মুহাম্মদ সুলতান যওক নদভী (রহ.)— তিনি ছিলেন আমাদের হৃদয়ের সম্রাট, একজন পরিশীলিত আলেম, ইলম-আমল ও আখলাক এবং রূহানিয়াত ও বিশুদ্ধ রুচির এক জীবন্ত আলোকস্তম্ভ। গভীর ভাবগাম্ভীর্য ও নিপুণ আভিজাত্যের বিচ্ছুরিত প্রতীক। আজ তিনি এই নশ্বর পৃথিবীর বন্ধন ছিন্ন করে মহান আল্লাহ তাআলা ও তাঁর প্রিয় হাবিব মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সান্নিধ্যের পথে যাত্রা করেছেন। আমাদের বিশ্বাস, আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাকে প্রিয় নবির পাশে স্থান দেবেন। তিনি ছিলেন এমন একজন আলেম— যাঁর কণ্ঠে ছিল দরদ, চিন্তায় ছিল ওমরী হিম্মত, আর কাজে ছিল দীপ্ত ইসলামি দাওয়াতের ছাপ ও নববী আখলাকের রৌশনি। তাঁর চলে যাওয়া নিঃসন্দেহে এক অপূরণীয় ক্ষতি। হে আল্লাহ, আপনি তাঁকে ক্ষমা করুন, তাঁর ওপর অনুগ্রহ করুন এবং জান্নাতকে তাঁর আশ্রয়স্থল করুন। আখিরাতে আপনি তাঁর মর্যাদা বৃদ্ধি করুন। আপনি তাঁকে কিয়ামতের দিন নবী, সিদ্দিক, শহিদ ও সালিহিনদের সঙ্গে একত্রিত করুন।’

প্রখ্যাত ভারতীয় আলেম ড. সাইয়েদ আবদুল মাজিদ আল-ঘুরি লিখেছেন, ‘অত্যন্ত দুঃখ-ভারাক্রান্ত মনে ও আল্লাহর ফায়সালার ওপর বিশ্বাসী অন্তর দিয়ে জানাচ্ছি, একটু আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সূত্রে আমি জানতে পেরেছি, প্রখ্যাত আলেম, বিশিষ্ট কবি, সুদক্ষ লেখক, অনেক গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থের রচয়িতা, বাংলাদেশে আরবি ভাষা শিক্ষা আন্দোলনের অগ্রসেনা, জামেয়া দারুল মাআরিফ আল-ইসলামিয়া চট্টগ্রামের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও শাইখুল হাদিস, আন্তর্জাতিক ইসলামী সাহিত্য সংস্থার ট্রাস্টি বোর্ড সদস্য, আল্লামা আবুল হাসান আলী নদভী (রহ.)-এর মেধাবী ছাত্র, দারুল উলুম নদওয়াতুল উলামার অন্যতম গর্ব : শায়খ মুহাম্মদ সুলতান যওক নদভীর মৃত্যুর কথা জানতে পেরেছি; যিনি ‘বাংলাদেশের আলেমদের সুলতান’ নামে অভিহিত হওয়ার উপযুক্ত কারণ তাঁর হাতে বিপুল সংখ্যক যোগ্যতাসম্পন্ন ছাত্র ও নিষ্ঠাবান আলেম তৈরি হয়েছে যারা দেশের আনাচে-কানাচে শরিয়াহ ও আরবি ভাষার জ্ঞান ছড়িয়ে দিতে ব্যাপক অবদান রেখেছেন এবং দেশের বাইরে শিক্ষাক্ষেত্রে জ্ঞান বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।’

‘১৯৯৭ সালে দারুল উলুম নদওয়াতুল উলামায় তাঁর সঙ্গে আমার প্রথম সাক্ষাৎ হয়। তখন আমি লিস্যান্স (স্নাতক)-এর দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলাম। তখন তিনি আমাকে তাঁর কিছু আরবি বই উপহার দিয়েছিলেন। এবং আমাকে অত্যন্ত স্নেহ ও মমতার সঙ্গে আরবি ভাষায় লেখালেখি অব্যাহত রাখার উপদেশ দিয়েছিলেন। কারণ তিনি জানতে পেরেছেন, আমার একটি প্রবন্ধ ‘আল-রায়িদ’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। এরপর থেকে তাঁর সঙ্গে আমি জ্ঞানার্জনের লক্ষ্যে যোগাযোগ অব্যাহত রাখি। মহান আল্লাহ তাঁকে বিস্তৃত পরিসরে অনুগ্রহ করুন এবং তাঁকে পরিপূর্ণভাবে ক্ষমা করুন। মহান আল্লাহ তাঁকে প্রশস্ত জান্নাতে আবাসন দান করুন এবং এই বিপদের মুহূর্তে তাঁর পরিবার ও ছাত্রদের উত্তম ধৈর্যশক্তি দান করুন।’