ঋণ নিয়ে পাচার, সাবেক ভূমিমন্ত্রী জাবেদসহ ৩১ জনের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামে মামলা

আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ও তার স্ত্রীসহ ৩১ জনের বিরুদ্ধে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবিএল) ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে পাচারের অভিযোগে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

দুদক বলছে, সাইফুজ্জামান ও তার স্বজনরা মিলে নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের নামে ভূয়া প্রতিষ্ঠান খুলে গম-ছোলা আমদানির নামে তাদের পারিবারিক মালিকানায় থাকা ইউসিবিএল ব্যাংক থেকে ‘টাইম লোন’ নিয়ে সেই টাকা পাচার করেন।

বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-১ এ মামলাটি করেন দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. মশিউর রহমান।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদকের চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক সুবেল আহমেদ।

মামলায় আসামিরা হলেন- সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ (৫৬), তার স্ত্রী ইউসিবিএল ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান রুকমীলা জামান (৪৬), সাবেক পরিচালক জাবদের ভাই আসিফুজ্জামান চৌধুরী (৪৬) ও বোন রোকসানা জামান চৌধুরী (৫৬)।

সাবেক পরিচালকদের মধ্যে আরও আছেন- বশির আহমেদ (৫৫), আফরোজা জামান (৪৮), সৈয়দ কামরুজ্জামান (৬১), মো. শাহ আলম (৬২), মো. জোনাইদ শফিক (৬৪), অপরূপ চৌধুরী (৬৫), তৌহিদ সিপার রফিকুজ্জামান (৬৬), ইউনুছ আহমদ (৭৯), হাজী আবু কালাম (৭৯), নুরুল ইসলাম চৌধুরী (৬২) এবং সাবেক চেয়ারম্যান এম এ সবুর (৭৭) ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ কাদরী (৬৪)।

ব্যাংকটির সাবেক কর্মকর্তাদের মধ্যে আছেন- মোহাম্মদ একরাম উল্লাহ (৫১), আবদুল হামিদ চৌধুরী (৫০), আবদুর রউফ চৌধুরী, জিয়াউল করিম খান (৪৬), মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল (৫৮), মীর মেসবাহ উদ্দীন হোসাইন (৬২) ও বজল আহমেদ বাবুল (৫৬)।

জাবেদের পারিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আরামিট গ্রুপের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে যাদের আসামি করা হয়েছে- তারা হলেন, মোহাম্মদ ফরমান উল্লাহ চৌধুরী (৫১), কাজী মোহাম্মদ দিলদার আলম (৬৬), মোহাম্মদ মিছাবাহুল আলম (৫০), আব্দুল আজিজ (৩৯), মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম (৫৪), মেহাম্মদ হোছাইন চৌধুরী (৪৮), ইয়াছিনুর রহমান (৪৩), ইউছুফ চৌধুরী (৪৫) ও সাইফুল ইসলাম (৪৫)।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আরামিট গ্রুপের এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীর নামে পাঁচটি নামসর্বস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা হয়েছিল। এগুলো হলো- ভিশন ট্রেডিং, আলফা ট্রেডার্স, ক্ল্যাসিক ট্রেডিং, মডেল ট্রেডিং ও ইম্পেরিয়াল ট্রেডিং।

২০১৯ সালের ১৩ অক্টোবর ইউসিবিএল ব্যাংকের চট্টগ্রাম বন্দর শাখায় ভিশন ট্রেডিংয়ের পক্ষ থেকে একটি হিসেব খোলা হয়। ২০২০ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ওই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ২৫ কোটি টাকা ঋণের আবেদন করা হয়। গম, ছোলা, হলুদ ও মটর আমদানির নামে ১৮০ দিনের মধ্যে ফেরতযোগ্য ‘টাইম লোন’ হিসেবে ঋণ মঞ্জুরের প্রস্তাব করা হয়েছিল।

ইউসিবিএল ব্যাংকের ‘করপোরেট ব্যাংকিং ডিভিশন ও ক্রেডিট রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ডিভিশন’র কর্মকর্তাগদের সমন্বয়ে গঠিত প্রধান কার্যালয়ের ক্রেডিট কমিটি ওই ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে ১৭টি নেতিবাচক পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছিল। কিন্তু ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদ কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই না করে ২০২০ সালের ৮ মার্চ ২৫ কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুর করে।

দুদকের অভিযোগ, সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার পরিবারের লোকজন এবং অন্য আসামিরা পরস্পরের যোগসাজশে প্রথমে একটি নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান খুলে ভূয়া নথিপত্র দিয়ে একটি ঋণ আবেদন করেন। তারাই আবার সেটি পরিচালনা পরিষদের ৪৪৮তম সভায় অনুমোদন দেন।

এরপর সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের পারিবারিক মালিকানাধীন আরামিট গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীকে মালিক সাজিয়ে নামসর্বস্ব চারটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা হয়। সেই প্রতিষ্ঠানগুলোর নামে ইউসিবিএল ব্যাংকেই আলাদা- আলাদা হিসেব খোলা হয়। এরপর ঋণের ২৫ কোটি টাকা বিভিন্নভাগে চারটি হিসেব নম্বরে স্থানান্তর করে সেগুলো পাচার করেন।

মামলার এজাহারে আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৬, ৪০৯, ৪২০, ৪৭১ ও ১০৯ এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ও মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে অভিযোগ করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগ নেতা সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ২০১৪ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এবং ২০১৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত একই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।