Search
Close this search box.

খুলনার দারুল উলুম মসজিদে একটি বিকেল

পরীক্ষা খারাপ হওয়ায় মন ভালো ছিল না। মন ভালো করার জন্য ছয় বন্ধু মিলে ঠিক করলাম ঘুরতে যাবো। ঘোরাঘুরির দ্বিতীয় দিন মুসলমানপাড়ার মসজিদ দেখতে যাবো বলে পরিকল্পনা করলাম। এই মসজিদটি সবার কাছে দারুল উলুম মসজিদ নামেই পরিচিত।

সেদিন আমাদের বাসা থেকে বের হতেই বিকেল হয়ে গিয়েছিল। সবাই একসঙ্গে মিলিত হলাম দৌলতপুরে। দারুল উলুম মসজিদ খুলনা শহরের সবচেয়ে বড় মিনারবিশিষ্ট। মসজিদ দেখতে হলে আমাদের প্রথমেই যেতে হবে সাত রাস্তার মোড়। দৌলতপুর থেকে সেখানে যেতে ভাড়া লাগবে ২৫ টাকা। আমরা সবাই উঠে পড়লাম অটোয়।

প্রায় ৩০ মিনিট পর সাতরাস্তা পৌঁছালাম। খুলনার মধ্যে সাতরাস্তা নিয়ে প্রতিটি মানুষের জীবনে কিছু না কিছু গল্প থাকে। এখানে খুব সুন্দর মটকা চা পাওয়া যায়, আবার পাশেই রয়েছে জাতিসংঘ শিশু পার্ক, আরও রয়েছে বাঘের প্রতিকৃতি, যা সুন্দরবনের পরিচয় বহন করে। এরই একটু সামনে গলদা চিংড়ির ভাস্কর্য।

আমরা সাতরাস্তা থেকে মুসলমানপাড়ার দিকে পা বাড়ালাম। রাস্তার যা অবস্থা তাতে হেঁটেই ভিতরের গলির দিকে যেতে হবে। এক দোকান থেকে চিপস কিনলাম কারণ এখানে বান্ধবী নুসরাতের বাসা। ওকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার ইচ্ছে আমাদের। মিনিট দশেক হেঁটে ওর বাসায় পৌঁছালাম। এরপর নুসরাতকে নিয়ে মসজিদের দিকে গেলাম। প্রতিবার ঘুরতে যাওয়ার সময় আয়েশা গাইড দেয় কিন্তু এবার আমাদের নতুন গাইড নুসরাত।

নুসরাতের হাত ধরে দুই মিনিটের মধ্যে আমরা মসজিদের প্রথম প্রান্ত পেয়ে গেলাম। সাদা দেওয়ালে লম্বা মিনার আর পাশ ঘেঁষে ঝাউগাছগুলো দেওয়ালকে ঢেকে রয়েছে। ঝাউগাছের প্রান্ত শেষ হতেই মসজিদের প্রধান ফটকের কাছে চলে এলাম। নীল আকাশজুড়ে মস্ত সাদা মিনারটা চোখে পড়ার মতো। এই মসজিদ দেখে যে কারও চোখ জুড়িয়ে যায়। কারুকার্য খচিত চমৎকার সৌন্দর্যমণ্ডিত সাদা রঙের এই মসজিদের আরেক নাম ‘তালাবওয়ালা জামে মসজিদ’।

মসজিদটি ১৯৬৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। মসজিদের মিনারটির উচ্চতা ২২৬ ফুট। প্রধান ফটক থেকে ভিতরে চোখ পড়ে খেলাধুলায় মেতে থাকা মাদরাসার ছোট শিশুদের ওপর। মসজিদের বাইরে রয়েছে কয়েকপ্রকার খাবারের দোকান। প্রতিদিন অসংখ্য দর্শনার্থী আসেন দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদের সৌন্দর্য অবলোকন করতে। আমরা প্রধন ফটক পার হয়ে পেছনের ফটক থেকে ভেতরে যাওয়ার অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করলাম।

ভেতরে ঢুকতেই বড় বড় ক্যাকটাস গাছ চোখে পড়লো। এই ক্যাকটাসগুলো নাকি ভারত থেকে আনা হয়েছে। বাহির থেকে মসজিদের ভেতরে উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করলাম। যেটুকু চোখে পড়ছে ভেতরে সাদা টাইলস দিয়ে বাঁধানো আর সোনালি অক্ষরে আরবি লেখা। মসজিদে চারটি গম্বুজ রয়েছে। আরও শুনলাম এখানে নাকি মিম্বরে থাকা ইমাম সাহেবের জায়নামাজের নিছে রয়েছে বাঘের চামড়া। হরিণের চামড়া দিয়ে তৈরি ওয়ালমেট শোভা ছড়াচ্ছে মসজিদের দেওয়ালজুড়ে।

মসজিদের সামনের খোলা জায়গায় সিঁড়ি দিয়ে নামতেই বাগানবিলাস, লম্বা সব নারকেল গাছ ও সুপারি গাছ চোখে পড়ে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের অর্কিডজাতীয় গাছ রয়েছে সেখানে। বাইরের তুলনায় ভেতর থেকে মসজিদের সৌন্দর্য আরও কয়েকগুণ বেশি উপভোগ করলাম আমরা। এই মসজিদে প্রায় দুই হাজার মুসল্লির নামাজ পড়ার ব্যবস্থা রয়েছে। মসজিদের চারপাশ ঘিরে অনেকগুলো মিনার রয়েছে তবে সর্ববৃহৎ মিনারটি আব্দুল জব্বার মিনার নামে পরিচিত।

এখানেই রয়েছে জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া দারুল উলুম মাদরাসা। উর্দু, আরবি ও ফার্সি ভাষা শেখার ব্যবস্থা রয়েছে এই মাদরাসায়। দুই হাজারের বেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে এখানে। আমরা মসজিদ প্রাঙ্গণ থেকে বের হয়ে নুসরাতের পিছু হাঁটতে লাগলাম। মসজিদের পেছন দিকেও কয়েক প্রকারের ক্যাকটাস গাছ। তারপর একটু দূরে মসজিদের দেওয়ালের আদলে অল্প একটু জায়গা একই নকশায় বানানো। নুসরাতকে জিজ্ঞেস করলে ও বললো এটা কবরস্থান হতে পারে।

যাই হোক মসজিদ দেখার পর্ব শেষ করে আমরা দ্রুত অন্য কোথাও যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হয়ে পড়লাম। মসজিদটি দেখার পর একটুকু বলতে পারি খুলনায় যারা দেখার মতো জায়গা খোঁজেন অবশ্যই এই মসজিদটি দেখতে আসবেন।