নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে গাজী টায়ার কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার ৫ মাস পর ১৮২ জন নিখোঁজ নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন তাদের স্বজনরা। স্বজনদের দাবি, নিখোঁজরা সবাই এখনো বেঁচে আছেন। অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তি ফোন করে নিখোঁজদের সবাই বেঁচে আছেন বলে জানিয়েছেন এবং খুব দ্রুত তারা ফিরে আসবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
স্বজনদের ফিরে পাওয়ার দাবিতে রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভও হয়েছে। ক্ষোভ প্রকাশ করে নিখোঁজ রাকিবের বাবা ও মাসুদের চাচা মজিবুর রহমান বলেন, গাজী কারখানার নিরাপত্তাকর্মীসহ আরও অনেকে আমাদের জানিয়েছে, একটি বাহিনীর লোকজন হাসপাতালে নেওয়ার কথা বলে তাদের নিয়ে গেছে। পাঁচ মাস ধরে তাদের সন্ধান পাচ্ছি না। এ ঘটনায় খানায় গেলেও পুলিশ জিডি নেয়নি। সম্প্রতি অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তি ফোন করে আমাদের জানিয়েছেন, নিখোঁজ সবাই জীবিত আছেন। এ ছাড়া নানা তথ্য দিয়েছেন।
নিখোঁজ আমানুল্লাহর মা রাশিদা বেগম বলেন, আমার ছেলে তার বন্ধু নাহিদকে নিয়ে ওইদিন গাজী কারখানা দেখতে গিয়েছিল। আর ফিরে আসেনি। তবে আমার ছেলেসহ নিখোঁজ সবাই বেঁচে আছে। ফোন করে এক ব্যক্তি সে তথ্য জানিয়েছে। আমার ছেলের আকার ও গায়ের রং বলেছে। ফোনে আমার ছেলের কান্নার শব্দ পেয়েছি। কোনো একটি বাহিনীর লোকজন তাদের আটকে রেখেছে। তবে কেন এবং কোথায় তাদের রাখা হয়েছে, তা জানা নেই। পুলিশ এখন সেই ফোন নম্বর ট্র্যাক করলেই আসল তথ্য বেরিয়ে আসবে। এ বিষয়ে পুলিশ প্রশাসনকে জানিয়েছি। ছেলের সন্ধান পেতে পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগও করেছি।
অগ্নিকাণ্ডের রাতের ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, অগ্নিকাণ্ডের রাতে একটি গাড়িতে করে অনেক লোকজনকে অসুস্থতার কথা বলে কিছু লোক নিয়ে গেছে। তবে বিভিন্ন হাসপাতালে গিয়ে কারও সন্ধান পাইনি। ধারণা করছি, সেই গাড়িতে করে আমার সন্তানসহ সন্তানসহ নিখোঁজদের অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’
অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির ফোন আসে নিখোঁজ শাহাদাত শিকদার ও সাব্বির শিকদারের বোন সিনথিয়া আক্তারের কাছেও। তিনি বলেন, ঘটনার পর থেকে প্রায় দুই মাস পর্যন্ত আমার বড় ভাই শাহাদাত শিকদারের ফোন নম্বরের রিং বেজেছে। নিখোঁজ হওয়ার ৮ দিন পরে থেকে একটি নম্বর থেকে আমার কাছে ফোন আসে। ফোনের ওই ব্যক্তি জানিয়েছেন, আগামী রমজানের আগে সবাইকে ছেড়ে দেওয়া হবে। একটি বাহিনীর লোকজন গাজী কারখানার পেছনের গেট দিয়ে তাদের কোনো এক স্থানে নিয়ে গেছে। ফোনের ওই ব্যক্তি সব সময় আমাদের বলে আসছেন, আপনারা চিন্তা কইরেন না। তারা সবাই চলে আসবেন। ২২২ জন লোক তাদের হেফাজতে রয়েছে বলে ওই ব্যক্তি জানিয়েছেন। তবে ওই ব্যক্তি তার নাম-পরিচয় দেননি।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আলমগীর হুসাইন বলেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদনে ১৮২ জন নিখোঁজের তালিকা করা হয়েছে। এ ছাড়া একটি নম্বর থেকে নিখোঁজের স্বজনদের কাছে ফোন এসেছে। স্বজনদের বক্তব্য রেকর্ড করে রেখেছি। এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপারকে জানানো হয়েছে।
জেলা পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত কাজ চলমান রয়েছে। আর অজ্ঞাত নম্বরে ফোন আসার বিষয়ে প্রযুক্তি ব্যবহার করে জানতে পেরেছি ওই নম্বরটি বন্ধ রয়েছে। নিখোঁজের স্বজনদের দাবি অনুযায়ী পুলিশ তদন্ত করবে। আর সে তদন্ত অনুযায়ী গুম করার সংশ্লিষ্টতা পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত বছরের ২৫ আগস্ট রূপগঞ্জে গাজী টায়ার কারখানায় অগ্নিকাণ্ড ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। ভবনটিতে ২১ ঘণ্টা ধরে আগুন জ্বলার ফলে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ফলে ভবনের ভেতরে উদ্ধার অভিযান চালায়নি কর্তৃপক্ষ। তবে ১৫ খণ্ড হাড় পাওয়া গেছে। এই ঘটনায় গত ১২ সেপ্টেম্বর গাজী টায়ার কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছে ৮ সদস্যের তদন্ত কমিটি।