চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন কলোনির পরিত্যক্ত বাসাবাড়ি ঘিরে চলছে দখল বাণিজ্য। কলোনিতে অবৈধভাবে বসানো হয়েছে বাজার ও দোকানপাট। পরিত্যক্ত বাসা দখলে নিয়ে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। প্রতিদিন এখান থেকে তোলা হয় টাকা। অনেকের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে এককালীন বড় অঙ্কের টাকাও। এছাড়া এসব বাসা ও দোকানে দেওয়া হয়েছে অবৈধ বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ। সন্ধ্যা নামতেই এলাকায় বসতে শুরু করে মাদক ও জুয়ার হাট।
অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় দুই বিএনপি নেতা রয়েছেন দখল বাণিজ্যের নেপথ্যে। আগে আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও এখন বিএনপি নেতারাই এখানকার সর্বেসর্বা।
সোমবার (৪ আগস্ট) সরেজমিন দেখা গেছে, রেলওয়ে স্টেশন কলোনির ২ ও ৩ নম্বর লেনে চলছে দখল বাণিজ্য। সারি সারি ভাবে বিভিন্ন জায়গায় গড়ে উঠেছে দোকান, বাজারসহ বিভিন্ন স্থাপনা। দৈনিক ভাড়া তোলা হয় এখান থেকে। এছাড়া অনেকের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে এককালীন টাকা। স্টাফ কোয়ার্টারের পরিত্যক্ত বাসা নম্বর টি ২৩/ডি, এস টাইপ, টি ২৩/ডি হাফ টাইপ, এল ১৩/বি, এল ১৩/ই, এল ১৩/এফ ভাড়া দেওয়া হয়েছে। তিন রাস্তার মোড়ে বসানো হয়েছে বাজার। এছাড়া এসব বাসা ও দোকানে দেওয়া হয়েছে অবৈধ বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বাজারের প্রতি দোকান থেকে ৩ হাজার টাকা, প্রতি বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে অগ্রিম ১ হাজার ও মাসে ৭০০ টাকা ভাড়া নেওয়া হয়। ওয়াসার পানির অবৈধ সংযোগ দেওয়া হয়েছে প্রায় ৫০টিরও বেশি। মাসে ১০ হাজার টাকা ভাড়া আদায় করা হয় পরিত্যক্ত বাসার ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে। একইসঙ্গে এসব বাসা ভাড়া দেওয়ার আগে অগ্রিম ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়ে থাকে।
আরও জানা গেছে, বিগত সরকারের আমলে যুবলীগ নেতা মনসুর আলী রেলওয়ের এসব পরিত্যক্ত জায়গা দখল করে নিজের সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন। সেখানে অবৈধ দোকান, বাসা ভাড়া, অবৈধ বিদ্যুৎ-পানির সংযোগের ব্যবসা করতেন তিনি।
কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পর এসব দখল বাণিজ্য বিএনপির সদরঘাট থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কাউছার হোসেন বাবু এবং ৩০ নম্বর মাদারবাড়ি ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য সচিব সৈয়দ তসলিমুর রহমান বাগিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কাউছার হোসেন বাবু অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘কেউ আমার নাম বিক্রি করে রেলের ভূমি দখল করে থাকলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা গ্রহণ করুক।’
তবে সৈয়দ তসলিমুর রহমানের মন্তব্য জানতে তার মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা মাহবুব উল আলম বলেন, ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে উচ্ছেদ অভিযানে ধীরগতি রয়েছে। তবে দ্রুত এসব অবৈধ বাজার, বাসা থেকে ভাড়াটিয়া উচ্ছেদে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
প্লাটফর্মে মাদক বিক্রি
চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের ভেতরে প্ল্যাটফর্মেই চলে মাদক বিক্রি। এছাড়া স্টেশনের বাইরে প্রতিদিন বসে জুয়ার আসর।
সম্প্রতি পাহাড়তলীর ইস্পাহানি রেল গেট থেকে ৫৬ পিস ইয়াবা ও ২শ গ্রাম গাঁজাসহ সোহেল নামে এক মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তার করে এবিপিএন। পরে তাকে রেল পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এছাড়া জুলাই মাসে ৩০০ পিস ইয়াবাসহ চট্টগ্রাম রেল স্টেশন থেকে গ্রেপ্তার করা হয় এক মাদক কারবারিকে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জিআরপি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল্লাহ জানান, গত দুই মাসে ১৭টি ও আগস্টের শুরুতে ৪টি মাদক মামলা দায়ের করা হয়েছে। মাদক মামলার আসামিদেরও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।