চট্টগ্রামে সাত আসন ঘিরে আলোচনা তুঙ্গে

চট্টগ্রামে সাত আসন ঘিরে আলোচনা তুঙ্গে
ফাইল ছবি

রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার তুঙ্গে চট্টগ্রামের ৭টি সংসদীয় আসন। এর মধ্যে ৬টি আসনে গত ৩ নভেম্বর প্রথম দফায় মনোনয়ন দেয়নি বিএনপি। শেষ পর্যন্ত এসব আসনে কার ভাগ্যে ‘শিকে ছিঁড়ে’ সেটিই এখন দেখার বিষয়। এ নিয়ে মহা টেনশনে মনোনয়নপ্রত্যাশীর অনুসারীরা।

চট্টগ্রামের ১৬ সংসদীয় আসনের মধ্যে প্রথম দফায় ১০ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে বিএনপি। এর মধ্যে চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনটিও রয়েছে। ওই আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পান কাজী মো. সালাউদ্দিন। তিনি উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম-আহ্বায়ক ছিলেন। তবে আসনটিতে লায়ন আসলাম চৌধুরী মনোনয়ন না পাওয়ায় বিস্মিত তার অনুসারীরা।

তৃণমূল থেকে উঠে আসা কাজী মো. সালাউদ্দিন এর আগে ধারাবাহিকভাবে সীতাকুণ্ড উপজেলা ছাত্রদল, যুবদল ও বিএনপির সাথে সক্রিয় ছিলেন। বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা লায়ন আসলাম চৌধুরীর অনুসারী হিসেবেও তার বেশ পরিচিতি রয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করে সীতাকুণ্ড আসনে তার নাম চলে আসায় বিএনপির অনেকে বিস্মিত হয়েছেন।

স্বাভাবিকভাবে অনেক আগে থেকে চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে বিএনপির একক প্রার্থী ছিলেন লায়ন আসলাম চৌধুরী এফসিএ। কিন্তু গত সপ্তাহখানেক ধরে এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশীর তালিকায় উঠে আসে কাজী মো. সালাউদ্দিনের নাম। সর্বশেষ গত ২৬ অক্টোবর ঢাকার গুলশানের বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ের সভায় ডাকা হয় তাকে। এরপর থেকে সীতাকুণ্ড আসনে বিএনপির প্রার্থী নিয়ে নতুন হিসেব শুরু হয়। সর্বশেষ গত ৩ নভেম্বর চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে বিএনপি কাজী মো. সালাউদ্দিনের নাম ঘোষণা করলে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন লায়ন আসলাম চৌধুরীর অনুসারীরা। প্রতিবাদে তারা ওইদিন রাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কেও ব্যারিকেড দেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক নেতা বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার ছিলেন আসলাম চৌধুরী। এ কারণে তাকে সবচেয়ে বেশি মামলা, জেল-জুলুমের শিকার হতে হয়। তাছাড়া ধ্বংস করে দেওয়া হয় তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানও। বিএনপির রাজনীতিতে বেশি সক্রিয় থাকার কারণে তাকে চার দফায় প্রায় ১১ বছর জেল খাটতে হয়। সর্বশেষ তিনি জেলে যান ২০১৬ সালে। ওই সময়ে টানা আট বছর তিন মাস পাঁচদিন জেল খাটার পর ২০২৪ সালের ২১ আগস্ট তিনি মুক্তি পান। কিন্তু মুক্তিলাভের পর বিক্ষিপ্ত কয়েকটি ঘটনায় কেন্দ্রের সাথে তার দূরত্ব সৃষ্টি হয়। তিনিও অনেকটা অভিমান করে সীতাকুণ্ডে বিএনপির কার্যক্রমে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেন। উপজেলার বাইরে বিএনপির কার্যক্রমে তেমন একটা সক্রিয় ছিলেন না। বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি কেন্দ্র। এ কারণে শেষ পর্যন্ত তাকে মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত করা হয়।

চট্টগ্রামের আরেক আলোচিত আসন চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া)। ৩ নভেম্বর কেন্দ্র থেকে এ আসনে নাম ঘোষণা করা হয় বিএনপি নেতা আবু সুফিয়ানের। কিন্তু কয়েক মিনিট পর তা স্থগিত করা হয়। এ নিয়ে আলোচনার শেষ হচ্ছে না রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের মধ্যে। এ বিষয়ে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া) আসনে ছয় মনোনয়নপ্রত্যাশীর মধ্যে এগিয়ে আছেন নগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবু সফিয়ান। আবার এ দু’জনের পক্ষে কেন্দ্রে তৎপর আছেন দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতা। এ দুই মনোনয়নপ্রত্যাশীকে ঘিরে দলের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাও অনেকটা বিভক্ত হয়ে পড়েন। তাই ৩ নভেম্বর ঢাকার গুলশান অফিসের সংবাদ সম্মেলনে আবু সুফিয়ানের নাম ঘোষণার পরপরই প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন আবুল হাশেম বক্করের পক্ষে থাকা বিএনপি নেতারা। এ কারণে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাৎক্ষণিকভাবে এটি স্থগিত করতে বাধ্য হন। বিএনপি সূত্র জানায়, বর্তমানে আবু সুফিয়ান ও আবুল হাশেম বক্কর মনোনয়ন পেতে তৎপর রয়েছেন। শেষ পর্যন্ত কার ভাগ্যে মনোনয়ন জুটে সেটিই এখন দেখার বিষয়।

চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনও চট্টগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ। এ আসনেও বিএনপি প্রথম দফায় মনোনয়ন ঘোষণা করেনি। এ আসনে দুই মনোনয়নপ্রত্যাশী হলেন- বিএনপির সাবেক কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী ও দলের চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার। এ দুই হেভিওয়েট প্রার্থীর পক্ষে বর্তমানে দুই ভাগে বিভক্ত উপজেলা বিএনপি। তাই এখন শুধু রাউজান নয়, এই আসনে শেষ পর্যন্ত বিএনপি থেকে কে মনোনয়ন পাচ্ছেন- সেদিকে দৃষ্টি সারাদেশের মানুষের।

চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসনেও প্রথম দফায় মনোনয়ন ঘোষণা করতে পারেনি বিএনপি। এ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছেন সাতজন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এত প্রার্থীর ভিড়ে একজনকে পছন্দ করতে পারেনি দলটি মনোনয়ন বোর্ড। বিএনপির একটি সূত্র জানায়, সন্দ্বীপ আসনটি দাবি করেছে এলডিপি। এলডিপি এ আসনে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. জেনারেল (অব.) সরোয়ার্দ্দী বীর বিক্রমকে প্রার্থী করতে চাচ্ছে। এখন বিএনপি আসনটিতে নিজেদের প্রার্থী দেবে, নাকি জোটকে ছেড়ে দেবে- এ প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে।

তাছাড়া চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া আংশিক) আসনটি বিএনপির শরিক এলডিপিকে ছেড়ে দিতে পারে বলে জানা গেছে। এদিকে, চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে প্রার্থী ঘোষণা না করায় মনোনয়নপ্রত্যাশী ও তাদের অনুসারীদের অপেক্ষার পালা আরও বেড়েছে। এ নিয়ে টেনশনে আছেন সবাই।

অন্যদিকে, চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর, পতেঙ্গা, ডবলমুরিং, ইপিজেড ও সদরঘাট) আসনটিতে বিগত সময়ে নির্বাচন করেছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। এবারও তিনি এটিসহ দুটি আসনে দল থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু দল তাকে চট্টগ্রাম-১০ আসনে প্রার্থী করলেও চট্টগ্রাম-১১ আসনে প্রার্থী ঘোষণা দেয়নি। ফলে শেষ পর্যন্ত এ আসনে বিএনপি থেকে কে প্রার্থী হচ্ছেন- এ প্রশ্ন বারবার উঠে আসছে দলের নেতাকর্মীদের মনে।