চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির আসন্ন নির্বাচনে অযোগ্য ও অকার্যকর ট্রেড গ্রæপ ও টাউন এসোসিয়েশনগুলোকে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দায়ের করা এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট রুল জারি করেছেন। একই সঙ্গে এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জারি করা একটি সরকারি আদেশের কার্যকারিতা ছয় মাসের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। ফলে আসন্ন ১ নভেম্বরের নির্বাচনে ট্রেড গ্রুপ ও টাউন এসোসিয়েশনগুলো নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।
গতকাল বুধবার (২২ অক্টোবর) বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি এম. আশিফ হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদালতের আদেশ অনুযায়ী, চট্টগ্রাম চেম্বারের নির্বাচনী কার্যক্রম চলতে পারবে, তবে যেসব ট্রেড গ্রুপ ও এসোসিয়েশন ‘নিষ্ক্রিয়’ বা অযোগ্য হিসেবে সরকার নিয়োগকৃত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে চিহ্নিত হয়েছে, তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।
রিটটি দায়ের করেছেন মোহাম্মদ বেলাল নামে এক ব্যবসায়ী, যিনি হারবিস কনভার্টিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। রিটে তিনি বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠন বিভাগ গত ৪ সেপ্টেম্বর একটি আদেশ জারি করে কিছু অকার্যকর ও নিষ্ক্রিয় ট্রেড সংগঠন এবং টাউন এসোসিয়েশনকে চট্টগ্রাম চেম্বার নির্বাচনে অংশগ্রহণের অনুমতি দেয়। অথচ চলতি বছরের ১৫ জুলাই প্রকাশিত তদন্ত প্রতিবেদনে এবং গত ২০ আগস্ট মন্ত্রণালয়ের আগের নির্দেশনায় এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে অযোগ্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল।
আবেদনকারী দাবি করেন, ওই সিদ্ধান্ত আইনের পরিপন্থী এবং কার্যত একটি অযোগ্য গোষ্ঠীকে নির্বাচনে সুবিধা দেওয়ার সমান। এতে ব্যবসায়ী সমাজের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে এবং নির্বাচনকে বিতর্কিত করার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
আদালত রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে রুল জারি করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাণিজ্য সংগঠন শাখার উপসচিব, চট্টগ্রাম চেম্বারের প্রশাসক এবং নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন- কেন তাদের সিদ্ধান্তকে বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা ৪ সপ্তাহের মধ্যে জানাতে।
একই সঙ্গে আদালত অস্থায়ীভাবে উক্ত সরকারি মেমোর কার্যকারিতা স্থগিত করেছেন এবং স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন- নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে অযোগ্য বা নিষ্ক্রিয় ট্রেড সংগঠনগুলো কোনোভাবেই অংশ নিতে পারবে না।
এই আদেশের ফলে চট্টগ্রাম চেম্বারের নির্বাচন কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে, তবে কেবলমাত্র কার্যকর, নিবন্ধিত ও সক্রিয় সদস্য সংগঠনগুলোই ভোটার ও প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে।
চট্টগ্রামে সচেতন ব্যবসায়ী সমাজের আহ্বায়ক এস এম নুরুল হক এই রায়কে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, আদালতের এই সিদ্ধান্ত নির্বাচনে স্বচ্ছতা, ন্যায্যতা ও সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করবে। আমরা চট্টগ্রাম চেম্বারের সংস্কারের শুরু থেকে দাবি তুলেছিলাম প্রকৃত ভোটার ও সংগঠনই যেন চট্টগ্রাম চেম্বারের থাকে। ভুয়া অযোগ্য কেউ যেন ব্যবসায়ী নেতৃত্বে না আসে। আমাদের সেই আন্দোলনের ফল এসেছে। এতে আমরা আনন্দিত।
আইনজীবীর সার্টিফিকেট অনুযায়ী, মামলাটি পরিচালনা করেছেন দেশের প্রখ্যাত আইনজীবী ড. কামাল হোসেন এন্ড এসোসিয়েটস চেম্বার। সার্টিফিকেটটি জারি করেছেন ব্যারিস্টার রামজান আলী সিকদার।
চট্টগ্রাম চেম্বার নির্বাচনের পূর্ব মুহূর্তে হাইকোর্টের এই নির্দেশনা নির্বাচনী অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেক ব্যবসায়ী নেতার মতে, এ রায় বাস্তবায়িত হলে দীর্ঘদিন ধরে নিষ্ক্রিয় থাকা ও শুধু ভোটের সময় সক্রিয় হয়ে ওঠা কিছু সংগঠনের আধিপত্য কমে যাবে এবং প্রকৃত ব্যবসায়ী প্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ তৈরি হবে।