এবারের ঈদে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে ছয়টি সিনেমা। এর মধ্যে একটি হচ্ছে— ‘জংলি’। ঢালিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা সিয়াম আহমেদ অভিনীত এ সিনেমাটি দর্শকদের চোখে কান্না ঝরিয়েছে, যেখানে উঠে এসেছে বাবা-মেয়ের গল্প। এক যুবক কীভাবে বাবা হয়ে উঠলেন সেই গল্প নিয়েই ‘জংলি’ সিনেমা।
এ সিনেমায় অভিনেতা সিয়াম আহমেদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অভিনয় করে গেছে ছোট্ট নৈঋতা। পাখি নামের ছোট্ট মেয়ের চরিত্রে সে ছিল খুবই সাবলীল। রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে খাবার কুড়িয়ে খাওয়া, জংলির ঘরে গিয়ে বারবার প্রত্যাখ্যাত হয়ে ফিরে আসা। এরপর সিয়াম সত্যিই সত্যিই সেই পাখি নামের ছোট্ট মেয়েটির বাবা হয়ে উঠেন।
পর্দায় সিয়াম-নৈঋতার অভিনয় দর্শকদের হৃদয়ে নাড়া দিয়েছে। বিশেষ করে তাদের এই গল্প যেন ঢাকার চাকরিজীবী এক দম্পতিকে বেশিই ছুঁয়ে গেছে। সিয়ামের সিনেমা দেখেই সন্তান দত্তক নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।
সিয়াম আহমেদের জনি থেকে জংলি হয়ে ওঠা চরিত্র তাদের বেশ আকর্ষণ করেছে। তাদের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। সিনেমার প্রথমার্ধে সিয়ামকে সেই চিরায়ত ‘চকলেট বয়’ লুকে দেখা গেলেও পরে তার লুক ও অভিনয় ছিল আগের কাজগুলোর চেয়ে একেবারেই ভিন্ন। পর্দায় এবার তিনি পাশের বাড়ির ছেলে নন; বরং বখে যাওয়া এক জংলি। পর্দায় তিনি সত্যিই সত্যিই জংলি হয়ে উঠেছিলেন।
অদিতি ও আবির— দুজনই চাকরিজীবী। বিয়ের পর কেটে গেছে অনেক বছর। কিন্তু জীবনে ঘর আলো করার মতো সংসারে এখনো কেউ আসেনি। তারা এখনো সন্তানের মুখ দেখেননি। তারা দুজনে মিলেই প্রেক্ষাগৃহে হাজির হয়েছিলেন সিয়াম আহমেদের ‘জংলি’ সিনেমা দেখার জন্য। সেই সিনেমা দেখার পরই তারা সিদ্ধান্ত নিলেন, সন্তান দত্তক নেবেন। এ বিষয়ে আবির নামে ওই যুবক বলেন, আমরা স্বামী-স্ত্রী দুজনই দ্বিতীয়বার জংলি দেখলাম এবং উপলব্ধি করলাম শুধু জন্ম দিলেই বাবা-মা হওয়া যায় না। জন্ম না দিয়েও আদর্শ বাবা-মা হওয়া সম্ভব। সেটা জংলি সিনেমায় পরিচালক দারুণভাবে উপলব্ধি করাতে পেরেছেন।
তিনি বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরেই সন্তান দত্তক নেওয়ার পরিকল্পনা করছিলাম। কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না। নানাবিধ প্রতিকূলতা। সেটি সামাজিক কারণেও বলতে পারেন। কিন্তু এ সিনেমা দেখার পর আমরা উভয় সিদ্ধান্ত নিই। সমাজে কে কি বলল, সেটি ভাবার দরকার নেই। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, দৃঢ়ভাবেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি— আমরা সন্তান দত্তক নেব। ইতোমধ্যে একটি আশ্রমের সঙ্গে কথাও হয়েছে বলে জানান আবির।
আবিরের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা স্ত্রী অদিতি বললেন, এমন সিনেমা সমাজের সব বাবা-মায়ের দেখা উচিত। যারা বাবা-মা হননি, তাদের আরও বেশি দেখা দরকার। সন্তান জন্ম দিলেই বাবা হওয়া যায় না। বাবা হওয়ার দারুণ এক লেসন রয়েছে জংলি সিনেমায়।
তিনি বলেন, আমরা যারা মেয়ে, তারা বাবার কাছে রাজকন্যা। সেই রাজকন্যার প্রতি বাবার ভালোবাসা কতটা থাকে, তা এই সিনেমায় সিয়াম জন্মদাতা বাবা না হয়েও সেটি দেখিয়েছেন।
অদিতি আরও বলেন, সিনেমাটি দেখার পর আমরা জীবনের বড় একটি সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছি। ব্যাড প্যারেন্টিং, শিশুদের জন্য গুড টাচ, ব্যাড টাচের মতো বিষয়গুলো দেখানোর জন্য ‘জংলি’ টিমের সবাইকে ধন্যবাদ।
এ দম্পতি আরও বলেন, আমাদের সমাজে সন্তানদের নিয়ে কত কিছু ঘটে। অনেকে সন্তান জন্ম দিয়ে রাস্তায়ও ফেলে দিয়ে যান। তারা কীভাবে বড় হয়, সেটি খুবই অমানবিক। এ সিনেমায় সেটিও দেখানো হয়েছে। আমরা আহ্বান রাখব— এমন সিনেমা আরও নির্মাণ হোক। মারামারির বাইরেও এমন সিনেমা নির্মাণ হলে কিছু মানুষের মাঝেও তো প্রভাব পড়বে। যে প্রভাব আমাদের সমাজ ও সমাজের মানুষের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে।
উল্লেখ্য, সিয়াম আহমেদ ছাড়াও এ সিনেমায় আছেন চিত্রনায়িকা শবনম বুবলী ও দীঘি, দিলারা জামান, শহীদুজ্জামান সেলিম, রাশেদ মামুন অপু প্রমুখ।