জুলাই সনদের আগে নির্বাচন না: নাহিদ ইসলাম

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে দলের পক্ষ থেকে তারা জানিয়েছেন যে, জুলাই সনদ কার্যকরের আগে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা ঠিক হবে না।

সোমবার (২ জুন) সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন তিনি।

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘বৈঠকে আমরা জাতীয় নাগরিক পার্টির পক্ষ থেকে স্পেসিফিকভাবে তিনটি বিষয় নিয়ে কথা বলেছি। আমরা সরকারের যে প্রতিশ্রুত সময়ে জুলাই ঘোষণাপত্র দেওয়ার কথা ছিল, সেটির অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছি এবং ৩০ কার্যদিবসের মধ্যেই যাতে জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করা হয় সে বিষয়ে আমরা জোর আহ্বান জানিয়েছি।’

‘আমরা এর আগেও দেখেছিলাম জানুয়ারি মাসে একটা তারিখ দেওয়া হয়েছিল সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এবার আরেকটি প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, এবার যাতে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ না হয়,’ বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘দ্বিতীয়ত আমরা বলেছি যে জুলাই মাস আসছে, এক বছর পূর্তি হবে গণঅভ্যুত্থানের। ৫ আগস্টের আগেই এই জুলাই মাসের মধ্যেই যেন জুলাই সনদটি কার্যকর করা হয়। সকলের স্বাক্ষর নিয়ে আমরা যেন জুলাই সনদ করতে পারি।’

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আরও বলেছি জুলাই সনদ কার্যকর হওয়ার আগে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা ঠিক হবে না। কারণ জুলাই সনদ ঘোষণার আগেই যদি নির্বাচনের তারিখ ঘোষিত হয় তাহলে সংস্কার প্রক্রিয়া ব্যহত হতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘তাই আমরা আহ্বান জানিয়েছি যে ১৬ বছর আমরা অপেক্ষা করেছি, ১০ মাস অপেক্ষা করেছি। আমরা আরও ২ মাস অপেক্ষা করতে চাই এবং সরকারকে সময় দিতে চাই সকল রাজনৈতিক দল মিলে। এই দুই মাসের মধ্যে আমাদের জুলাই সনদ, যেখানে জনগণ তার ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের রূপরেখা শাসন ব্যবস্থা পরিবর্তনের মৌলিক সংস্কারের রূপরেখা দেখতে পারবে, সেই জুলাই সনদ হওয়ার পরে নির্বাচনের তারিখটি যেন সরকার ঘোষণা করে। জুলাই সনদ হওয়ার পরে আমরা আমাদের দলীয় মন্তব্য জানাব, যে কোন সময়ে নির্বাচন আমরা চাচ্ছি।’

‘সর্বশেষ আমরা নির্বাচন কমিশনের কথা বলেছি। আমরা এর আগেও বলেছি যে আমাদের একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার, নির্বাচন নিয়ে যত আইন আছে, সেই আইনগুলো সংস্কার করে এই নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করা,’ বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন এখন যে প্রক্রিয়া চলছে সেখানে আমরা আস্থা রাখতে পারছি না, নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। এটি যেন সরকার বিবেচনায় নেয়। উচ্চ আদালত থেকেও আমরা দেখেছি নির্বাচন কমিশন নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। সার্বিক বিবেচনায় নির্বাচন কমিশন যেন পুনর্গঠন করা হয়। আমরা এই তিনটি বিষয়ে মূলত আলোচনা করেছি।’

এক প্রশ্নের জবাবে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘জুলাই ঘোষণাপত্র হচ্ছে, এই জুলাই গণভুত্থানের ইতিহাস, কোন প্রেক্ষাপটে জুলাই গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল, জুলাই গণভু্থানের অঙ্গীকারনামা এবং আকাঙ্ক্ষার একটা ঐকমত্যের দলিল, যেটা মূলত ইতিহাস বিকৃতি ঠেকাবে, জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও শহীদ আহতদের একটা সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেবে। কারণ এই ঘোষণাপত্রই পরবর্তী সংবিধানে সংযুক্ত হবে।’

‘আর জুলাই সনদ হচ্ছে আমাদের রাষ্ট্র কাঠামোর সংস্কার, যে কোথায় কোথায় আমরা সংস্কারগুলো করব এবং সেই সংস্কার যেন পরবর্তীতে অব্যাহত থাকে, বিচারের বিষয়টা যেন অব্যাহত থাকে—সেই বিষয়ের একটা ঐকমত্যের দলিল,’ যোগ করেন তিনি।