ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর ঢাকার দুই সিটিসহ দেশের ১২টি সিটি করপোরেশনের মেয়রদের অপসারণ করে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে পুরনো মামলার রায়ে গত ১ অক্টোবর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে শাহাদাত হোসেন এবং ২৭ মার্চ ঢাকা দক্ষিণের মেয়র হিসেবে ইশরাক হোসেনকে বিজয়ী ঘোষণা করে আদালত।
অবিভক্ত ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক হোসেনের নামে গেজেটও প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে এখনো তার শপথগ্রহণ হয়নি। যদিও হিসেব অনুযায়ী, শপথ নিলে আজ রোববার (১ জুন) হতো তার একমাত্র কর্মদিবস, কারণ ওই গেজেট অনুসারে ডিএসসিসির বর্তমান মেয়াদ শেষ হচ্ছে এদিন।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, সিটি করপোরেশন আইন অনুযায়ী, করপোরেশনের মেয়াদ ধরা হয় প্রথম বোর্ড সভা থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর। ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ডিএসসিসি নির্বাচন হয়, এবং ফল গেজেট আকারে প্রকাশ পায় ২ ফেব্রুয়ারি। তাতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস বিজয়ী হন এবং ২ জুন প্রথম বোর্ড সভার মধ্য দিয়ে তার মেয়াদ গণনা শুরু হয়।
তাপসের বিজয়ের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ফল বাতিল চেয়ে ২০২০ সালের ৩ মার্চ নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন বিএনপি প্রার্থী ইশরাক হোসেন। দীর্ঘ প্রক্রিয়ার পর ২০২৫ সালের ২৭ মার্চ ট্রাইব্যুনাল সেই ফলাফল বাতিল করে তাকে বিজয়ী ঘোষণা করে। এরপর ২৭ এপ্রিল তাপসের নাম বাদ দিয়ে ইশরাকের নামে সংশোধিত গেজেট প্রকাশ করে ইসি। তবে ইশরাকের নামে নতুন গেজেট না হওয়ায় এবং মেয়াদের সময়সীমা আগের মতই ধরে নেওয়ায়, আজ ১ জুনই শেষ হয়ে যাচ্ছে ডিএসসিসির কার্যকাল।
তবে এই সময়েই ইশরাকের শপথ গ্রহণে আইনি জটিলতা তৈরি হয়। ১৪ মে হাইকোর্টে তার শপথ ঠেকাতে রিট আবেদন করেন ডিএসসিসির বাসিন্দা ও আইনজীবী মো. মামুনুর রশিদ। এদিকে, ইশরাকের শপথ দাবিতে তার সমর্থকেরা নগর ভবনে অবস্থান কর্মসূচি পালন শুরু করলে কার্যত অচল হয়ে পড়ে সেখানকার কার্যক্রম।
অন্যদিকে, ২৯ মে আপিল বিভাগ ওই গেজেট স্থগিত চেয়ে করা লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি করে পর্যবেক্ষণসহ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার দেয় নির্বাচন কমিশনের ওপর।
তবে আদালতের আদেশ না পাওয়ায় শপথ অনুষ্ঠান করেনি ইসি। এ নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন জানিয়েছেন, রায় এখনো আমরা পাইনি। রায়ের কপি পাওয়ার পর আসলে কী, কী ধরনের সিদ্ধান্ত আসে, আইনি দিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আমাদের যা করণীয় আমরা সেটা করবো।
ফলে, ইসি যদি ওই দিনেই ইশরাকের পক্ষে সিদ্ধান্ত দিত এবং ছুটির দিনেও শপথ অনুষ্ঠান হতো, তবুও তার মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনের সুযোগ থাকত মাত্র একদিন—আজ, ১ জুন।