
ওরা দুই সহোদর। শহীদুল ইসলাম বুইস্যা ও আয়ুব আলী। দু’জনের কেউ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরোয়নি। তবে মাদক বিক্রি করে তাদের প্রতিদিনের রোজগার ১০ লাখ টাকার কাছাকাছি। মাদক-অস্ত্র বেঁচাকেনা-চাঁদাবাজি সবই করেন। টাকা গণনা করতে রীতিমতো মেশিন ব্যবহার করেন তারা। পুলিশের গতিবিধি নজরে রাখতে আস্তানার আশে পাশে লাগিয়েছেন ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা।
সম্প্রতি শহীদুলের আস্তানায় অভিযান চালিয়ে চান্দগাঁও থানা পুলিশ ইতালির তৈরি পিস্তলসহ বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার করেন। চান্দগাঁও থানা পুলিশ ইতিমধ্যে শহীদুলের ৩৩ সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে। ২১ মামলার আসামি শহীদুল ধরা না পড়লেও শহীদুলের ভাই ২০ মামলার আসামি আয়ুব আলী গতকাল রবিবার দুপুরে বহদ্দারহাট ফরিদার পাড়া থেকে অস্ত্রসহ পুলিশের হাতে ধরা পড়ে।
স্থানীয় লোকজন জানান, দুই সহোদর শহীদুুল ও আয়ুব ভোলা জেলার দৌলতখান গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে। পাঁচলাইশ থানার বদিউল আলম গলির হিরু বিল্ডিংয়ে ভাড়ায় থাকেন। শহীদুল ইয়াবা-অস্ত্র বেচাকেনা থেকে চাঁদাবাজি সবই করেন। তার ভাই আয়ুব আলী মাদক বিক্রির স্পট, টাকা পয়সার হিসাব দেখভাল করেন। বহদ্দারহাট কাঁচাবাজারের পশ্চিম পাশে পাঁচলাইশ থানা এলাকায় প্রতিদিন সন্ধ্যায় ইয়াবা বেচাকেনা করে শহীদুলের লোকজন। সেবনকারীর সেখানে লাইনে ধরে ইয়াবা কিনতে। প্রতিদিন অন্তত ১০ লাখ টাকা ইয়াবা বেচাকেনা হয় সেখানে। পুলিশের গতিবিধি নজরে রাখতে সেখানে লাগানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা।
গত ৯ অক্টোবর বেলা ১২টা থেকে পরদিন (১০ আগস্ট) বিকেল চারটা পর্যন্ত চান্দগাঁও থানার বহদ্দারহাট কাঁচা বাজারের পেছনে মাছ বাজারের তৃতীয় তলা ও পাঁচলাইশ শুলকবহর জনৈক আয়ুব আলী সওদাগরের ভবনে অভিযান চালায় চান্দগাঁও থানা পুলিশ। সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গোলাবারুদ, ইয়াবা ও টাকা গণনার মেশিন উদ্ধার করা হয়। সেখান থেকে সন্ত্রাসী শহীদুলের সহযোগী মো. বেলাল, হৃদয় বড়ুয়া ও মো. আজাদ নামে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারের পর পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আজাদ জানান, শহীদুল ইসলাম বুইস্যা চাঁদাবাজি, মাদক ও অস্ত্র বেচাকেনা করলেও সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে তার ভাই আয়ুব আলী। আজাদসহ সাতজন মাদক বেচাকেনার স্পট দেখাশোনা করতেন। সন্ধ্যা হলেই সেবনকারীর ইয়াবা কিনতে ভিড় করে। প্রতি পিস ইয়াবা বিক্রি করা হয় ২২০ টাকায়। যে সাতজন মাদকের স্পট দেখাশোনা করেন তাদের প্রত্যেককে দৈনিক এক হাজার টাকা বেতন দেয়া হয়। মাদকের স্পট নিয়ন্ত্রণে রাখতে অস্ত্র সংগ্রহ করে শহীদুল। মাদক স্পটে যারা ডিউটি করে তাদের কাছে অস্ত্র থাকতো। মাদকের স্পট নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মাঝে মাঝে আরেক সন্ত্রাসী ইসমাইল হোসেন টেম্পুর সাথে গোলাগুলি হতো।
টাকা গণনার মেশিন রাখা প্রসঙ্গে আজাদ জানান, প্রতিদিন প্রায় ১০ লাখ টাকার ইয়াবা বেঁচাকেনা হয়। দ্রুত টাকা গণনা করতে মেশিনটি কিনেছিল শহীদুল।
চান্দগাঁও থানার ওসি জাহেদুল কবির বলেন, শহীদুল ইসলাম বুইস্যার বিরুদ্ধে ২১টি ও তার ভাই আয়ুব আলীর বিরুদ্ধে ২০টি মামলা রয়েছে। ইতিমধ্যে শহীদুলের ৩৩ সহযোগীকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি। গতকাল অস্ত্রসহ আয়ুব আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২০২৩ সালের ২৩ মে কালুরঘাট এলাকা থেকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হয়েছিল শহীদুল। তিন মাসের মাথায় জামিনে বের হয়ে ফের জড়ায় নানা অপারাধে। শহীদুলকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।