বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলা নেত্রকোনা। হাওর-বাঁওড়, নদী, খাল আর পাহাড়ে সমৃদ্ধ। এই জেলার বিভিন্ন স্থান আপনাকে মুগ্ধ করবে তার বৈচিত্র্যপূর্ণ সৌন্দর্যে। যদি হাতে থাকে দুদিনের ছুটি, তাহলে ঘুরে আসুন নেত্রকোনা থেকে।
চলুন, দুদিনে ঘুরে দেখা যায় নেত্রকোনার এমন কিছু মনকাড়া দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে যেনে নেই।
১. চীনা মাটির পাহাড়
নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলায় অবস্থিত বিজয়পুরের সাদা মাটির পাহাড়টি বাংলাদেশের একমাত্র চীনা মাটির পাহাড়। বর্তমানে এটি দেশের অন্যতম একটি দর্শনীয় স্থান।
পাহাড়টি তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের কারণে অনন্য। এর একেক অংশে মাটির রং একেক রকম। কোথাও লাল, কোথাও সাদা আবার কোথাও নীলাভ। দেখে মনে হবে যেন নানা রঙের খেলা। পাহাড়ের পাদদেশেই একটি লেক। পাহাড়ের ছায়া ও আকাশের রঙের ওপর ভিত্তি করে লেকের পানির রং পরিবর্তন হয়।
২. সোমেশ্বরী নদী
বিজয়পুরের কাছাকাছি বয়ে চলা সোমেশ্বরী নদী এই অঞ্চলের প্রাণ। বর্ষায় নদী ফুলে-ফেঁপে ওঠে, আর শুষ্ক মৌসুমে থাকে ঝিলের মতো শান্ত। গ্রামের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া এই নদীতে আপনি চাইলে নৌকায় চড়ে ঘুরে দেখতে পারেন চারপাশের পাহাড়, প্রাকৃতিক দৃশ্য আর মানুষের জীবনচিত্র।
৩. রানীখং গির্জা
নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলায় অবস্থিত রানীখং গির্জাটি বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন ক্যাথলিক চার্চ। গির্জাটি ‘সাধু যোসেফের ধর্মপল্লী’ নামে পরিচিত। পাহাড়ের কোল ঘেঁষে থাকা শান্তিপূর্ণ এই স্থানে এলেই মনে হয় সময় যেন থমকে গেছে। ১৯১৫ সালে নির্মিত এই গির্জায় এখনো নিয়মিত প্রার্থনা হয়, আর এর চমৎকার কাঠামো ও নিস্তব্ধ পরিবেশ পর্যটকদের কাছে এক আকর্ষণ হয়ে উঠেছে।
৪. সাত শহীদের সমাধি
নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলায় অবস্থিত সাত শহীদের সমাধি এক ঐতিহাসিক স্থান। এটি সপ্তশিখা নামেও পরিচিত। স্থাপনাটি বাংলাদেশ-ভারতের নো ম্যান জোনে অবস্থিত।
প্রকাণ্ড মেহগনি গাছের বাগানের ছায়ায় আচ্ছাদিত মাজারটি। এখানে সমাধিস্থ ও দাহ করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধে পাক বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হওয়া সাত মুক্তিযোদ্ধাকে। এ মাজারের পাশ দিয়েই বয়ে গেছে ভারতের মেঘালয়ের পাহাড় থেকে নেমে আসা গনেস্বরী নদী। সেখান থেকেই দেখা মিলবে ভারতের পাহাড়গুলোর।
৫. পাঁচগাঁও
নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলা ও ভারতের সীমান্তঘেঁষা গ্রাম পাঁচগাঁও। এটি যেনো এক নৈসর্গিক সৌন্দর্যের আঁধার। যেনো ছবির মতো গ্রাম। গাড়ো সবুজ পাহাড়ের পাদদেশে ছোট ছোট ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের বাড়ি, ঝরনা – সবকিছু মিলিয়ে জায়গাটি যেন প্রকৃতির কোনো লুকানো কবিতা। বিশেষ করে বিকেলের সূর্য যখন পাহাড়ের আড়ালে ঢলে পড়ে, তখনকার দৃশ্য ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। বর্তমানে বাংলাদেশের তুমুল জনপ্রিয় এক দর্শনীয় স্থান এটি।
চাইলে কাছাকাছি আদিবাসী পল্লীতেও যাওয়া যায়। তারা এখনো অনেকটা নিজেদের সংস্কৃতিতেই বাস করেন। তাদের জীবনযাপন, খাবার বা ভাষা – সবকিছুতেই এক নিজস্বতা আছে।
ঢাকা থেকে যেভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে সরাসরি নেত্রকোনা শহরে যাওয়ার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো ট্রেন। কমলাপুর বা বিমানবন্দর রেলস্টেশন থেকে প্রতিদিন একাধিক ট্রেন চলে, যেমন- মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ও হাওর এক্সপ্রেস। সময় লাগে গড়ে ৫-৬ ঘণ্টা।
বাসে যেতে চাইলে গাবতলী বা মহাখালী থেকে সরাসরি নেত্রকোনাগামী নন-এসি ও এসি বাস পাওয়া যায়। ব্যক্তিগত গাড়ি থাকলে ময়মনসিংহ হয়ে নেত্রকোনা সড়কে যাওয়া সবচেয়ে সুবিধাজনক।
নেত্রকোনা শহর থেকে দুর্গাপুর, কলমাকান্দা বা রানীখং এলাকার জন্য স্থানীয় যানবাহন নিতে পারেন। এছাড়া সিএনজি বা মোটরসাইকেলও ভাড়া করে ঘুরা যায়। ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় চাইলে সারাদিনের জন্য মোটরসাইকেল ভাড়া নিতে পারেন।
যেখানে থাকবেন
নেত্রকোণায় ফাইভ স্টার হোটেল নেই। তবে বেশ কিছু বেসরকারি ও সরকারি রেস্ট হাউজ আছে। এসব হোটেলে এক থেকে দুই হাজার টাকায় রাত্রীযাপন করতে পারবেন।
যা খাবেন
নেত্রকোনার বালিশ মিষ্টি খুবই বিখ্যাত। তাই বালিশ মিষ্টি খেতে একদম ভুলবেন না। আর স্থানীয় খাবার যেমন পাহাড়ি মাংস, মাছের ঝোল আর পিঠা মিস করবেন না।
নেত্রকোনায় চাইলে একদিনও ঘুরতে পারেন। একদিনে অনেক কিছু ঘোরার পরিকল্পনা করলে সকাল সকাল রওনা দিন। বিজয়পুর বা সোমেশ্বরী নদী ঘোরার জন্য হালকা কাপড় ও সানগ্লাস সঙ্গে রাখুন। পাহাড়ি ও নদী পথে হাঁটতে হতে পারে, তাই স্নিকার বা আরামদায়ক জুতা পরা ভালো।