নারী আসন নির্ধারণ হবে ঘূর্ণায়মানভাবে, সীমানায় আসতে পারে পরিবর্তন

জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে সাধারণ আসনের মতো সরাসরি নির্বাচন বা ‘ফার্স্ট পাস্ট দ্য পোস্ট’ পদ্ধতি চালুর কথা ভাবছে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। এ পদ্ধতিতে দেশের অনেক আসনের সীমানা পাল্টে যেতে পারে। যে আসনগুলো নারীদের জন্য নির্ধারণ করা হবে সে আসনে নারীরাই প্রার্থী হবেন। কোনো পুরুষ সেখানে প্রার্থী হতে পারবেন না। রাজনৈতিক দলগুলোকে ওই সব আসনে নারী প্রার্থীকেই মনোনয়ন দিতে হবে। বিদ্যমান পদ্ধতি অনুসারে আসনপ্রাপ্তির অনুপাতে বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এসব আসন বণ্টন এবং প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারের কিছু নারীর জন্য এটি সীমাবদ্ধ থাকবে না। অন্য নারীরাও প্রার্থী হতে পারবেন। কোনো দলের ইচ্ছা বা দয়ায় নয়, জনপ্রিয়তার মাপকাঠিতে ভোটারদের ভোটে নির্বাচিত হবেন তারা।

সাধারণ আসনের অন্য সংসদ সদস্যের মতো নিজ নির্বাচিত এলাকার প্রতিনিধিত্ব করবেন। আবার এসব আসন নির্দিষ্টও থাকবে না। ঘূর্ণায়মানভাবে এসব আসন এলাকা পাল্টে যাবে। পর্যায়ক্রমে দেশের প্রতিটি এলাকায় এসব আসন নির্ধারণ করা হবে।

কোনো আসন আগামী নির্বাচনে নারী প্রার্থীদের জন্য নির্ধারণ করা হলে পরেরবারের নির্বাচনে ওই আসন নারী-পুরুষ সব প্রার্থীর জন্যই উন্মুক্ত হবে।এ বিষয়ে  গতকাল ৩০ নভেম্বর নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য ড.  মো. আব্দুল আলীম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের কমিশন থেকে প্রতিটি জেলায় একটি করে নারী আসন নির্ধারণের প্রস্তাব করা যায় কি না—সেই বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন যেহেতু ৫০টি এবং সব জেলার জনসংখ্যা ও আয়তন এক নয়, সে কারণে এটি এখন সম্ভব না বলেই মনে হয়েছে।’

ঘূর্ণায়মানভাবে নারী আসন নির্ধারণ এবং সীমানা পরিবর্তন সম্পর্কে উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘ধরেন একটি জাতীয় সংসদের আসন দুটি। আগামী নির্বাচনে ওই জেলার সীমানা পুনর্নির্ধারণ করে তিনটি আসন করা হবে।

এই তিনটি আসনের একটি নির্ধারণ করা হবে নারীদের জন্য। পরের বছর ওই জেলায় নারীদের জন্য কোনো আসন থাকবে না। তিনটি আসনই সাধারণ আসন হিসেবে নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এভাবে পর্যায়ক্রমে দেশের সব জেলায়ই নারী আসন নির্ধারণ করা হবে। প্রতিবেশী দেশ ভারতের কয়েকটি রাজ্যেও এ পদ্ধতি চালু আছে।’

নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের মতে, এ পদ্ধতি বাস্তবায়ন করতে বিদ্যমান জাতীয় সংসদ (সংরক্ষিত মহিলা আসন) নির্বাচন আইন-২০০৪’, জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ আইন এবং সংবিধানেও পরিবর্তন আনতে হবে। কারণ  বিদ্যমান সংবিধানের  ৬৫(৩) অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘…তাহারা আইনানুযায়ী পূর্বোক্ত (সরাসরি ভোটে নির্বাচিত) সদস্যদের দ্বারা সংসদে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির ভিত্তিতে একক হস্তান্তরযোগ্য ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হইবেন।’ যদিও এ পদ্ধতিতে ভোট দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। দলের সিদ্ধান্ত অনুসারে একক প্রার্থী

হিসেবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা ঘটে।

ড. মো. আব্দুল আলীম এ বিষয়ে আরো বলেন, ‘নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনে সরাসরি ভোটের পদ্ধতি চালুর বিষয়টি সময়সাপেক্ষ। বিষয়টি যেহেতু সংবিধান সংশ্লিষ্ট বিষয়, সে কারণে আমরা সংবিধান সংস্কার কমিশনের সঙ্গেও আলোচনা করব। দেশের নারী নেত্রীরাও দীর্ঘদিন ধরে সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছেন। নির্বাচন সংস্কার কমিশন এ বিষয়ে সুপারিশ জানাতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলো এতে সম্মত হলে দেশের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই পদ্ধতি চালু হওয়া সম্ভব। কিন্তু প্রয়োজনীয় সংস্কারের আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠান হলে পরবর্তী নির্বাচনে এই পদ্ধতি চালুর কথা ভাবতে হবে।’ নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারের আরেক সদস্য বেগম জেসমিন টুলি কালের কণ্ঠের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘আমার মনে হয়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বড় পরিবর্তন হতে পারে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনের নির্বাচনে ‘ফার্স্ট পাস্ট দ্য পোস্ট’ পদ্ধতি চালু করা। এতে নারীর ক্ষমতায়ন বাড়বে। বিদ্যমান পদ্ধতিতে সংসদে সংরক্ষিত আসনে কোটার ভিত্তিতে যে নারীরা আসছেন তাদের বেশির ভাগই প্রকৃত অর্থে রাজনীতিক নন। এতে নারীর ক্ষমতায়ন হচ্ছে না। বিদ্যমান পদ্ধতি নারীদের স্বার্থ রক্ষা না করে বড় দলগুলোর স্বার্থ রক্ষা করে।