নিষ্পাপ নাগরিকদের রক্তই ইসরাইলের পতন ঘটাবে

পূর্বের অন্যান্য সব নেতার মতোই বর্তমান ইসরাইলি প্রেসিডেন্ট বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর হাতও রক্তে রঞ্জিত। মাত্র ২০ মাসে তার নেতৃত্বে মৃত্যু হয়েছে ৬০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনির।পাশাপাশি ইসরাইলের অবিরত বোমা হামলায় ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হয়েছে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা।

নারী-শিশুসহ বেসামরকিদের ‘ইচ্ছাকৃতভাবে’ লক্ষ্যবস্তু করার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে কেবল উদাসীনতা ও তার আত্মরক্ষার অধিকারের কথা বলেন।

ইসরাইলিদের মতো আর কেউ এভাবে হত্যাযজ্ঞ চালায় না। আবার তাদের এ জন্য পুরষ্কৃতও করা হয়। মার্কিন কংগ্রেসে তাদের দাঁড়িয়ে করতালি দিয়ে স্বাগত জানানো হয়, দেওয়া হয় অফুরন্ত তহবিলও। ইউরোপে তাদের ‘গণতান্ত্রিক বীর’ হিসেবে প্রশংসা করা হয। অন্যদিকে সন্ত্রাসবাদ দমনের নামে নীরব করে দেওয়া হয় ভিন্নমত পোষণকারীদের কণ্ঠস্বর। এমনকি, এরইমধ্যে আরব বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য প্রস্তুত।

সব মিলিয়, একজন ইসরাইলি নেতার পক্ষে গণহত্যা চালানো যেন খুবই সহজ। হয়তো সে কারণেই গত শুক্রবার, গাজা, লেবানন এবং সিরিয়ার রক্তপাত চালানোর পর নেতানিয়াহু সিদ্ধান্ত নেয় তার পরবর্তী হত্যা অভিযানে ইরানে চালানো উচিত। তিনি হত্যা চালিয়ে যাবেন আর কেউ তাকে বাধা দেবে না।

কিন্তু ইরান গাজা, লেবানন বা সিরিয়া নয়। ইরান বিশ্বের প্রাচীনতম সভ্যতা নিয়ে গর্ব করে। গত কয়েক দশক ধরে দেশটির সামরিক বাহিনী স্বাধীনভাবে অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র তৈরি করেছে এবং একটি নীতিমালা তৈরি করেছে: স্বদেশের জন্য মৃত্যুকে চূড়ান্ত সম্মান হিসেবে। ইরানে আক্রমণ করা কেবল কোনো সামরিক বাহিনী বা সরকারকে আঘাত করা নয়; এটি এমন একটি ভূমিতে আক্রমণ করা যেখানে প্রতিটি ইঞ্চি মাটিতে সেই সৈন্যদের দেহাবশেষ রয়েছে, যারা জাতির বেঁচে থাকার জন্য তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন।

ইরানের জনগণও নিষ্ক্রিয় নাগরিক নয়। বিদেশী আগ্রাসনের সময়ে, তারা এক হয়ে যায়। ইরানকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে, কোনও রাজনৈতিক, আদর্শিক বা সামাজিক বন্ধন তাদের ঐক্য ভাঙতে পারে না।

গত ১৩ জুন ইরানের আবাসিক ভবন, সামরিক স্থাপনা এবং পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলার ফলে শত শত বেসামরিক মানুষ নিহত হলেন, বর্তমানেও তা অব্যাহত আছে। এই ক্ষয়ক্ষতিতে নেতানিয়াহু ও তার মন্ত্রীরা আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে উঠে। তারা এই আক্রমণকে একটি অসাধারণ সাফল্য ঘোষণা করে।

তবে নেতানিয়াহুর ভুল ভাঙতে ২৪ ঘণ্টারও কম সময় লেগেছে। ইরান ১৩ জুনই প্রতিশোধমূলক হামলা শুরু করে, অধিকৃত অঞ্চলগুলোতে অবিরাম আঘাত হানার প্রতিশ্রুতি দেয় এবং তারা এই হামলা অব্যাহত রেখেছে।

ইরানি জনগণের মধ্যে, ক্ষোভ এবং শোক স্পষ্ট, কিন্তু নেতানিয়াহু যখন ইসরাইল-ভিত্তিক ফার্সি-ভাষী সাংবাদিককে বলেন, তার লড়াই ইরানি সরকারের সঙ্গে, ইরানি জনগণের সঙ্গে নয়, তখন যে সহানুভূতি আশা করেছিলেন তার কোনো লক্ষণ নেই।

তেহরানের একজন বেকারি বলেন,‘ইসরাইলকে উপযুক্ত শিক্ষা দিতে আমরা এত সময় নিচ্ছি, আমার এটি পছন্দ করিনা। ভবিষ্যতে আবার আমাদের ওপর হামলা চালানোর ক্ষমতা তাদের থাকতে দেওয়া উচিত নয়।’