বিনম্র‍ শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি।

আবদুল গফুর হালীকে মনে রাখেনি কেউ!

আজ তাঁর ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী।

১৯৮৯ সনে চট্রগ্রামের পটিয়া থানার রশিদাবাদ গ্রামে ‘জার্মানির হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন শাস্ত্রের সহকারী অধ্যাপক’ ‘হানস হারডার’ আসেন এক মহান ব্যক্তির লিখিত আধ্যাত্মিক গান নিয়ে গবেষণা করার জন্য। প্রথমবারের মত কেউ এটা শুনলে অবাক না হয়ে পারবেন না। কিন্তু যে মহান ব্যক্তির আধ্যাত্মিক গান তথা মারফতি গান নিয়ে গবেষণা করতে হানস হারডার জার্মানি থেকে এসেছিলেন তিনি আর কেউ নন তিনি হলেন আবদুল গফুর হালী।

আবদুল গফুর হালী ১৯২৮ সালের ৬ আগস্ট চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার রশিদাবাদ গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তার পিতার নাম আবদুস সোবহান এবং মাতার নাম গুলতাজ খাতুন। রশিদাবাদ প্রাথমিক বিদ্যালয় ও জোয়ারা বিশ্বম্বর চৌধুরী উচ্চবিদ্যালয় থেকে তিনি শিক্ষা গ্রহণ করেন। তবে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত একাডেমিক শিক্ষা অর্জনের পর তিনি আর পড়ালেখা করেন নি। একজন ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত পড়া মানুষের জ্ঞানের পরিধি এত বিশাল কিভাবে হল তা সত্যি গবেষণার বিষয়। চট্রগ্রামের প্রখ্যাত লেখক ও গবেষক শামসুল আরেফীন তার ‘বাঙলাদেশের লোককবি ও লোকসাহিত্য ২য়-৪র্থ খণ্ডে’ উল্লেখ করেন, “আবদুল গফুর হালী নিজেকে শুধুমাত্র বাঙলা সাহিত্যের দিকে সরাসরি ধাবিত না করে, তাঁর সাহিত্য ও দর্শন সাধনা চট্টগ্রামের একটি ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে এবং সেই উৎসবে ক্রমাগত যাতায়াতের মাধ্যমে। তাঁর দীর্ঘ বছরের রচিত গ্রন্থ হতে নবী, পয়গম্বর ও অলি আল্লাহর জীবনী, দর্শন ও ইসলাম ধর্মের জীবন ধারণের রীতি-নীতি ও সারমর্ম খুঁজে পাওয়া যায়। ৬৫ বছর বয়সের আবদুল গফুর হালী ৩০ বছর যাবৎ চট্টগ্রামের পবিত্র মাইজভাণ্ডার শরীফে আসা যাওয়া করেছেন”

বস্তুত তার গানে আধ্যাত্মিকতার ছোঁয়া এসেছে মাইজভান্ডারি দর্শন থেকে। গফুর হালী ছিলেন আস্কর আলী পণ্ডিতের ভাবশিষ্য। তাছাড়া ও মওলানা বজলুল করিম কাঞ্চনপুরী, মাওলানা আবদুল হাদি এবং রমেশ শীলের মতো মাইজভান্ডারী সুফি গায়কদের দ্বারা তিনি প্রভাবিত হন। গফুর হালী নিজের রচিত অধিকাংশ গানে নিজেই সুরারোপ করেন। এছাড়াও তিনি রচনা করেছেন একাধিক আঞ্চলিক নাটক। সোনাবন্ধু তুই আমারে করলিরে দিওয়ানা’, ‘পাঞ্জাবিঅলা মনে বড় জ্বালারে’, ‘মনের বাগানে ফুটিল ফুল গো’, ‘‘অ শ্যাম রেঙ্গুন ন যাইও, বানুরে অ বানু’, কিংবা মাইজভান্ডারি গান ‘দেখে যারে মাইজভান্ডারি হইতাছে নূরের খেলা’, মোহছেন আউলিয়ার গান ‘চল যাই জিয়ারতে মোহছেন আউলিয়ার দরবারে’ সহ মারফতি ধারায় দুই হাজারের অধিক গান লিখেছেন।

২০১০ সালে তাকে নিয়ে নির্মিত হয়ে প্রামাণ্য চলচ্চিত্র মেঠোপথের গান। তিনি ২০১৬ সালের ২১ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের মাউন্টেন হাসপাতালে মারা যান। তিনি ফুসফুসের ক্যানসার ও বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন। নিজ বাড়ির আঙ্গিনায় চিরতরে শায়িত আছেন ক্ষণজন্মা এই কীর্তিমান পুরুষ।