বেড়েছে খুন-ডাকাতি-অপহরণ, তবে চুরি-ধর্ষণ-নারী নির্যাতন কমেছে

রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উদ্বেগজনক অবস্থার মধ্যেও কিছু অপরাধ কমেছে। এর মধ্যে রয়েছে ধর্ষণ, নারী নির্যাতন ও চুরির মতো অপরাধ। তবে চলতি বছর সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে খুন বেড়েছে উদ্বেগজনক হারে

পুলিশের তথ্য বলছে, খুন ছাড়াও ছিনতাই, ডাকাতি, দস্যুতা, শিশু নির্যাতন, অপহরণ, সিঁধেল চুরির ঘটনা গতবারের তুলনায় এবার বেড়েছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পেশাগত অপরাধীদের তৎপরতা বেড়ে যাওয়া এবং ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর কারণেই আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পুলিশের কাজের গতিহীনতা।

পুলিশ অবশ্য বলছে ৫ আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের বিদায়ের পর ব্যাপক হামলা, অনাস্থা আর আন্দোলনের সময় বিতর্কিত ভূমিকার জন্য পুলিশ কিছুটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ায় কেউ কেউ সুযোগ নিয়ে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটায়।

আবার নতুন করে বিরূপ পরিস্থিতিতে পড়ার ভয়েও অনেক ক্ষেত্রে তাত্ক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে গড়িমসি করেছেন অনেক পুলিশ সদস্য। এসব কারণে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। গত অক্টোবর মাসে ঢাকার মোহাম্মদপুর যেন সন্ত্রাসের রাজ্যে পরিণত হয়। প্রকাশ্য দিবালোকে দোকানে ঢুকে ডাকাতির তথ্য পাওয়া যায়।

 

এক তরুণীকে চাপাতি হাতে দৌড়ানোর ভিডিও চিত্রও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। মিনি সুপারশপে চাপাতি হাতে কয়েকজন ঢুকে সবাইকে বেরিয়ে যেতে বলছে—এমন দৃশ্য দেখে আঁতকে উঠেছে মানুষ। কয়েক দিনের মধ্যে অন্তত ১২ জন খুনের শিকার হন মোহাম্মদপুরে। এলাকাবাসী অপরাধ দমন করতে থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ করে। এরপর যৌথ বাহিনীর অভিযানে ৪৫ জনকে আটক করা হয়েছিল।

মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, এলাকায় খুনখারাবি, ডাকাতির মতো ঘটনা কমলেও এখনো দলবদ্ধ হয়ে কিশোর তরুণরা ঘোরাঘুরি করছে। মাঝেমধ্যেই হামলার ঘটনা ঘটছে। ভয়ে তাদের কেউ কিছু বলতে পারছে না।

গত ১৬ নভেম্বর পশ্চিম ধানমণ্ডি এলাকায় বাসায় ঢুকে যুক্তরাজ্যপ্রবাসী এক চিকিৎসককে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। একই দিন আজিমপুর এলাকার এক বাসা থেকে টাকা, স্বর্ণালংকার লুটের পাশাপাশি গৃহকর্ত্রীর ছোট্ট শিশুকেও তুলে নিয়ে যায় ডাকাতরা। বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর দেশে ব্যাপক ভীতি ছড়ায়। পরে অবশ্য শিশুটিকে উদ্ধার এবং অপহরণকারী নারীকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। পুলিশ সদর দপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে সারা দেশে মামলা করা হয়েছে ২৫ হাজার ৪৫৬টি। এর মধ্যে খুনের মামলা করা হয়েছিল ৪৮৮টি। চলতি বছর ওই দুই মাসে খুনের মামলা করা হয়েছে ৫২২টি, যা আগের বছরে তুলনায় ৩৪টি বেশি।