Search
Close this search box.

মাঠে নামলেও সংঘাতে জড়াবে না বিএনপি

জাতীয় সংসদ নির্বাচন হলে ক্ষমতার খরা কাটানোর আশাবাদী বিএনপি আগামী ডিসেম্বরে নির্বাচন দাবি করছে। দাবি আদায়ে মাঠের কর্মসূচি শুরু করেছে। করণীয় নিয়ে বিভিন্ন দলের সঙ্গে বৈঠক করছে। তবে ভোটের জন্য অপেক্ষা দীর্ঘ হলেও অন্তর্বর্তী সরকারকে বেকায়দায় ফেলার মতো কোনো কর্মসূচি দেবে না দলটি। কোনো সংঘাতেও জড়াবে না।

বিএনপির নীতিনির্ধারণী মহল এমন চিন্তাভাবনা করছে বলে কয়েকজন নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে। তাঁরা বলছেন, বিএনপি এবং সমমনা দলগুলো ডিসেম্বরে নির্বাচন দাবি করলেও অন্তর্বর্তী সরকার ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন করার কথা বলছে। সরকার এখনো সুনির্দিষ্ট তারিখ না বলায় নির্বাচন নিয়ে দলে অনিশ্চয়তা ও অস্বস্তি রয়ে গেছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের পরও সংশয় পুরোপুরি কাটেনি। এ অবস্থায় কাঙ্ক্ষিত সময়ে নির্বাচন আদায়ে সমমনা দল ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোকে নিয়ে মাঠের কর্মসূচি পালন শুরু হয়েছে।

বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সূত্র বলছে, সবদিক চিন্তা করেই ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান সবার জন্য মঙ্গলজনক মনে করছে বিএনপি। এ জন্যই বারবার সরকারের কাছে এ দাবি জানানো হচ্ছে। তবে দাবি আদায় করতে গিয়ে বিএনপি এমন কিছু করতে চায় না, যাতে সরকার বেকায়দায় পড়ে এবং দেশে খারাপ কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। যা তৃতীয় কোনো পক্ষ সুযোগ নিতে পারে। তাই নির্বাচন বিলম্বিত হলেও কর্মসূচি ঘিরে যেকোনো ধরনের সংঘাত এড়িয়ে চলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। গত সোমবার রাতে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়।

বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে ভূমিকা রাখা একাধিক নেতা এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। বিএনপির একটি সূত্র বলেছে, সোমবার রাতের সভার সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবে দায়িত্বশীল নেতাদের কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকমান্ড। বৈঠকে পরিস্থিতি জটিল করতে পারে অথবা সরকারের সঙ্গে দলের সম্পর্কের অবনতি ঘটাতে পারে—এমন কোনো কিছু না করতে ও বলতে নেতাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আগ বাড়িয়ে কিছু বলা ও উসকানিমূলক কোনো বক্তৃতা-বিবৃতি দেওয়া থেকে দায়িত্বশীল নেতাদের বিরত থাকতে বলা হয়েছে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। এই সরকারের কাছে দ্রুততম সময়ে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান ও রোডম্যাপের দাবি জানাচ্ছে বিএনপি। তবে আট মাসেও রোডম্যাপ দেওয়া হয়নি। বিএনপি দ্রুত নির্বাচন চাইলেও একসময়ের জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামী প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচন চায়। এ ছাড়া জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) রাষ্ট্র সংস্কার ও ফ্যাসিস্টদের বিচার শেষে নির্বাচনের পক্ষে।

বিএনপির নেতারা বলছেন, ডিসেম্বর শীতকাল। দেশে বেশির ভাগ জাতীয় নির্বাচনই শীতকালে হয়েছে। এই নির্বাচনের জন্য শীতকালকেই আদর্শ সময় মনে করছে নির্বাচন কমিশনও। নতুন বছরের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হবে রমজান মাস। এরপর পবিত্র ঈদুল ফিতর। এপ্রিলে এসএসসি পরীক্ষা হওয়ার কথা। এ সময় নির্বাচন হলে পরীক্ষা পেছাতে হবে। মে মাসের শেষ দিকে পবিত্র ঈদুল আজহা। ফলে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা থেকে শুরু করে ভোট গ্রহণ পর্যন্ত যে দু-তিন মাস সময় প্রয়োজন, সেটা এ সময়ে বের করা সম্ভব নয়। এতে নির্বাচন জুনের পর চলে যেতে পারে। এসব চিন্তা থেকেই চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চাইছে বিএনপি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘চিন্তাভাবনা করেই আমরা ডিসেম্বরে নির্বাচন দাবি করেছি।’ ডিসেম্বরে নির্বাচন না হলে বিএনপি কী করবে—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা তো সরকারকে সময় দিয়েছি, নির্বাচনের দিন-তারিখ পরিষ্কার ঘোষণা দিতে হবে। একটা সময় পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করব। তারপর আমরা এই দাবিতে (ডিসেম্বরে নির্বাচন) হয়তো নানা রকম কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারি।’

ডিসেম্বরে নির্বাচনের দাবি আদায়ে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে গত ১৭ এপ্রিল থেকে বিভিন্ন দলের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করছে বিএনপি। এখন পর্যন্ত ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপি, সিপিবি, বাসদ, লেবার পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ, এনডিএম, গণফোরাম, বাম গণতান্ত্রিক ঐক্য এবং জন অধিকার পার্টি, এনপিপি, বাম গণতান্ত্রিক ঐক্য, জাতীয় পার্টি (বিজেপি), ন্যাপ ভাসানী, আমজনতার দল, পিপলস পার্টিসহ বিভিন্ন দলের সঙ্গে বৈঠক করেছে। এই দলগুলোও ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছে বিএনপি।

ডিসেম্বরের মধ্যে ভোটের দাবি আদায়ে সরকারকে চাপে রাখার কৌশল হিসেবে তরুণসমাজকে সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। এর অংশ হিসেবে সারা দেশে বিভাগীয় পর্যায়ে সেমিনার ও সমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপির তিন অঙ্গসংগঠন—জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল। ওই তিন সংগঠনের ঘোষণা অনুযায়ী, ৯ মে এসব কর্মসূচি শুরু হচ্ছে। এর আগে আজ ১ মে আন্তর্জাতিক শ্রম দিবসে ঢাকায় বড় সমাবেশের আয়োজন করেছে বিএনপি। বিএনপির সূত্র বলেছে, আজ বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মীর সমাবেশ ঘটানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘জনগণ ভোট দেওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে। এ ছাড়া নির্বাচিত সরকার না থাকায় নানা সমস্যাও দেখা দিচ্ছে। জনগণের আকাঙ্ক্ষা এবং বিদ্যমান পরিস্থিতি আমলে নিয়ে যত দ্রুত সম্ভব সরকারকে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করতে হবে। এ বিষয়টি বিএনপির পক্ষ থেকে সরকারকে বোঝানোর চেষ্টা করছি।’