জীবনের কোনো মূল্য নেই অবরুদ্ধ গাজায়। ইসরাইলি নৃশংসতায় পদে পদে মৃত্যুর ভয়। কিন্তু মুক্তির স্বাদ পাওয়ার ঠিক আগেই যদি ঝরে যায় তাজা প্রাণ-সেই কষ্ট মেনে নেওয়া দুঃসহ। করুণ এই কাহিনী গাজার আল-কিদরা পরিবারের।
অবরুদ্ধ অঞ্চলটিতে প্রথমে যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার কথা ছিল রোববার স্থানীয় সময় সকাল ৮.৩০ মিনিটে। আল-কিদরা পরিবার ১৫ মাস ধরে ইসরাইলি আক্রমণ সহ্য করেছে। যুদ্ধ চলাকালে তারা একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছিল। সে সময় একটি তাঁবুতে বসবাস করছিল তারা।
অবশেষে যুদ্ধবিরতি হলে আর কিছু না ভেবে নিজের বাড়িতে ফিরতে চেয়েছিল পরিবারটি। কিন্তু যুদ্ধবিরতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর টালবাহানার সময় শেষ মুহূর্তে নিহত হয় সেই পরিবারের তিন সদস্য। আল-জাজিরা।
যুদ্ধবিরতির খবর পেয়ে আহমেদ আল-কিদরা তার সাত সন্তানকে একটি গাধার গাড়িতে চড়িয়ে পূর্ব খান ইউনিসের দিকে রওনা দিলেন। কারণ, ওই অঞ্চল তখন নিরাপদ ছিল। সেখানে যুদ্ধবিরতির সময় অনুযায়ী হামলা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা।
কিন্তু পরিবারটি জানত না যে, ইসরাইল এবং হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি বিলম্বিত হয়েছে। তারা জানত না, ইসরাইলি বিমানগুলো তখন গাজার আকাশে উড়ছিল এবং সেগুলো থেকে বোমা ফেলা হতে পারে। হঠাৎ একটি বিস্ফোরণ হলো। আহমেদের স্ত্রী হানান তা শুনতে পান। তিনি শহরের কেন্দ্রস্থলে এক আত্মীয়ের বাড়িতে ছিলেন, তাদের জিনিসপত্র গুছিয়ে নিচ্ছিলেন। কয়েক ঘণ্টা পরে তার স্বামী এবং সন্তানদের সঙ্গে তার যোগ দেওয়ার কথা ছিল।
হানান বলেন, ‘মনে হলো বিস্ফোরণটা আমার হৃদয়ে এসে লাগল।’ তিনি উপলব্ধি করতে পারছিলেন, সদ্য বিদায় দিয়ে আসা সন্তানদের সঙ্গে কিছু একটা ঘটেছে।
‘আমার বাচ্চারা, আমার বাচ্চারা’! বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে তিনি চিৎকার করে উঠলেন। হানানের আশঙ্কাই ঠিক হলো। তার বাচ্চাদের গাড়িটি হামলার শিকার হলো। হানানের বড় ছেলে, ১৬ বছর বয়সী আদলি ও তার ছোট ছেলে ছয় বছরের সামা মারা গেল। ১২ বছর বয়সী ইয়াসমিন জানায়, যুদ্ধবিরতি উদযাপনকারী লোকজনকে বহনকারী একটি চার চাকার গাড়ি তাদের গাড়িটির সামনে ছিল। সম্ভবত সেই কারণেই ক্ষেপণাস্ত্রটি আঘাত হানে।
‘আমি সামা এবং আদলিকে মাটিতে লুটিয়ে থাকতে দেখলাম। আর আমার বাবা রক্তাক্ত অবস্থায় গাড়িতে অচেতন অবস্থায় পড়ে আছেন। তারা যেখানে ছিল সেখানে দ্বিতীয় ক্ষেপণাস্ত্রটি আঘাত করার আগে সে তার আট বছর বয়সী বোন আসিলকে টেনে বের করে। এগারো বছর বয়সী মোহাম্মদও বেঁচে যায়।’ বলেন ইয়াসমিন।
কিন্তু হানানের স্বামী আহমেদ হাসপাতালে মারা যান। খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে তার আহত মেয়ে ইমানের বিছানার পাশে বসে থাকা হানান তখনও হতবাক। রোববার স্থানীয় সময় সাড়ে আটটায় যুদ্ধবিরতি কার্যকরের কথা থাকলেও তা পিছিয়ে যায়। হামাসের মুক্তিপ্রাপ্ত জিম্মিদের তালিকা নিতে দেরি করায় নেতানিয়াহু যুদ্ধবিরতি স্থগিত করেন। পরে তালিকা দেওয়া হলে কয়েক ঘণ্টা পর গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলের সীমান্তে প্রবেশ করে আকস্মিক হামলা চালায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এরপরেই গাজায় পালটা আক্রমণ চালায় ইসরাইল। এক বছরের বেশি সময় ধরে গাজায় ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে দখলদার সেনারা।
গাজার হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সেখানে এখন পর্যন্ত ৪৭ হাজার ৩৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছে আরও ১ লাখ ১১ হাজার ৯১ ফিলিস্তিনি। হতাহতদের মধ্যে অধিকাংশই নারী এবং শিশু।
Post Views: ৪৬
যুদ্ধবিরতির কয়েক মিনিট আগে নিঃশেষ পরিবার
জীবনের কোনো মূল্য নেই অবরুদ্ধ গাজায়। ইসরাইলি নৃশংসতায় পদে পদে মৃত্যুর ভয়। কিন্তু মুক্তির স্বাদ পাওয়ার ঠিক আগেই যদি ঝরে যায় তাজা প্রাণ-সেই কষ্ট মেনে নেওয়া দুঃসহ। করুণ এই কাহিনী গাজার আল-কিদরা পরিবারের।
অবরুদ্ধ অঞ্চলটিতে প্রথমে যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার কথা ছিল রোববার স্থানীয় সময় সকাল ৮.৩০ মিনিটে। আল-কিদরা পরিবার ১৫ মাস ধরে ইসরাইলি আক্রমণ সহ্য করেছে। যুদ্ধ চলাকালে তারা একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছিল। সে সময় একটি তাঁবুতে বসবাস করছিল তারা।
অবশেষে যুদ্ধবিরতি হলে আর কিছু না ভেবে নিজের বাড়িতে ফিরতে চেয়েছিল পরিবারটি। কিন্তু যুদ্ধবিরতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর টালবাহানার সময় শেষ মুহূর্তে নিহত হয় সেই পরিবারের তিন সদস্য। আল-জাজিরা।
যুদ্ধবিরতির খবর পেয়ে আহমেদ আল-কিদরা তার সাত সন্তানকে একটি গাধার গাড়িতে চড়িয়ে পূর্ব খান ইউনিসের দিকে রওনা দিলেন। কারণ, ওই অঞ্চল তখন নিরাপদ ছিল। সেখানে যুদ্ধবিরতির সময় অনুযায়ী হামলা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা।
কিন্তু পরিবারটি জানত না যে, ইসরাইল এবং হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি বিলম্বিত হয়েছে। তারা জানত না, ইসরাইলি বিমানগুলো তখন গাজার আকাশে উড়ছিল এবং সেগুলো থেকে বোমা ফেলা হতে পারে। হঠাৎ একটি বিস্ফোরণ হলো। আহমেদের স্ত্রী হানান তা শুনতে পান। তিনি শহরের কেন্দ্রস্থলে এক আত্মীয়ের বাড়িতে ছিলেন, তাদের জিনিসপত্র গুছিয়ে নিচ্ছিলেন। কয়েক ঘণ্টা পরে তার স্বামী এবং সন্তানদের সঙ্গে তার যোগ দেওয়ার কথা ছিল।
হানান বলেন, ‘মনে হলো বিস্ফোরণটা আমার হৃদয়ে এসে লাগল।’ তিনি উপলব্ধি করতে পারছিলেন, সদ্য বিদায় দিয়ে আসা সন্তানদের সঙ্গে কিছু একটা ঘটেছে।
‘আমার বাচ্চারা, আমার বাচ্চারা’! বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে তিনি চিৎকার করে উঠলেন। হানানের আশঙ্কাই ঠিক হলো। তার বাচ্চাদের গাড়িটি হামলার শিকার হলো। হানানের বড় ছেলে, ১৬ বছর বয়সী আদলি ও তার ছোট ছেলে ছয় বছরের সামা মারা গেল। ১২ বছর বয়সী ইয়াসমিন জানায়, যুদ্ধবিরতি উদযাপনকারী লোকজনকে বহনকারী একটি চার চাকার গাড়ি তাদের গাড়িটির সামনে ছিল। সম্ভবত সেই কারণেই ক্ষেপণাস্ত্রটি আঘাত হানে।
‘আমি সামা এবং আদলিকে মাটিতে লুটিয়ে থাকতে দেখলাম। আর আমার বাবা রক্তাক্ত অবস্থায় গাড়িতে অচেতন অবস্থায় পড়ে আছেন। তারা যেখানে ছিল সেখানে দ্বিতীয় ক্ষেপণাস্ত্রটি আঘাত করার আগে সে তার আট বছর বয়সী বোন আসিলকে টেনে বের করে। এগারো বছর বয়সী মোহাম্মদও বেঁচে যায়।’ বলেন ইয়াসমিন।
কিন্তু হানানের স্বামী আহমেদ হাসপাতালে মারা যান। খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে তার আহত মেয়ে ইমানের বিছানার পাশে বসে থাকা হানান তখনও হতবাক। রোববার স্থানীয় সময় সাড়ে আটটায় যুদ্ধবিরতি কার্যকরের কথা থাকলেও তা পিছিয়ে যায়। হামাসের মুক্তিপ্রাপ্ত জিম্মিদের তালিকা নিতে দেরি করায় নেতানিয়াহু যুদ্ধবিরতি স্থগিত করেন। পরে তালিকা দেওয়া হলে কয়েক ঘণ্টা পর গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলের সীমান্তে প্রবেশ করে আকস্মিক হামলা চালায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এরপরেই গাজায় পালটা আক্রমণ চালায় ইসরাইল। এক বছরের বেশি সময় ধরে গাজায় ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে দখলদার সেনারা।
গাজার হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সেখানে এখন পর্যন্ত ৪৭ হাজার ৩৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছে আরও ১ লাখ ১১ হাজার ৯১ ফিলিস্তিনি। হতাহতদের মধ্যে অধিকাংশই নারী এবং শিশু।
চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধীদের উপর ছাত্রদলের হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ
নালায় পড়ে নিখোঁজ মায়ের কোলের শিশু
কাজাখস্তানকে উড়িয়ে দারুণ সূচনা বাংলাদেশের
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে উত্তরায় বিক্ষোভ
ভারতে মুসলিমদের ‘পূর্ণ নিরাপত্তা’ নিশ্চিত করার আহ্বান বাংলাদেশের
আমিনুল হকের জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে এনসিপি অপপ্রচার করছে- বিএনপি