রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থায় পিতৃতান্ত্রিকতা

আব্রাহাম লিংকন ভেবেছিলেন, সব আমেরিকানকে নিয়ে তিনি একটি ঐক্যবদ্ধ জাতি গড়ে তুলবেন। পদ্ধতিটি হবে রাজনৈতিক, ঘটনাটি ঘটবে আমেরিকা মহাদেশের রাষ্ট্রগুলোকে একটি একক সংঘে পরিণত করার ভেতর দিয়ে। সেটি অনেকটা ঘটেছে। মহাদেশের উত্তর ও দক্ষিণের অনেকগুলো রাষ্ট্র একত্র হয়ে ইউনাইটেড স্টেটস অব আমেরিকা প্রতিষ্ঠা করেছে। কিন্তু আমেরিকান নামে একটি জাতির গঠন কি সম্ভব হয়েছে? হয়নি। চেষ্টা হয়েছিল ওই যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী সবাইকে নিয়ে একটি ‘মহৎ’ জাতি তৈরি করার। সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে যোগাযোগের ভাষা অভিন্ন বটে, রাষ্ট্রের ভাষাও ইংরেজিই।

কিন্তু জাতি গঠনের জন্য ভাষা প্রধান উপাদান হলেও একমাত্র উপাদান নয়। যুক্তরাষ্ট্রে সাংস্কৃতিক বিভাজন রয়েছে এবং সব যুক্তরাষ্ট্রবাসীর মাতৃভাষা যে ইংরেজি, তা-ও তো নয়। আরো বড় সত্য এটি যে দেশটিতে শ্রেণিবিভাজন প্রকট। বর্ণবিভাজন তো দানবীয়রূপেই বিদ্যমান।
যুক্তরাষ্ট্র এখন একটি বহু সংস্কৃতির দেশ বলেই স্বীকৃত। 

জাতি থাকলে জাতীয়তাবাদও থাকে। লিংকন শুধু জাতির কথাই ভেবেছেন। জাতীয়তাবাদ নিয়ে তার চিন্তা বা দুশ্চিন্তা কোনোটিই ছিল না। যুক্তরাষ্ট্রে জাতি সৃষ্টি না হলেও জাতীয়তাবাদী উত্তেজনা সজীব রাখার চেষ্টা অহর্নিশ চলছে। বস্তুত সারা বিশ্বে এটিই এখন বাস্তবতা যে আগেরকালের জাতি রাষ্ট্রের ধারণাকে বাদ না দিয়ে এখন আর উপায় নেই। এক দেশে শুধু একটি জাতিই থাকবে, অন্যরা গণ্য হবে অভিবাসী, বহিরাগত, দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক ইত্যাদি হিসেবে—রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থায় পিতৃতান্ত্রিকতাএই মনোভাব মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। আব্রাহাম লিংকন নিশ্চয়ই ওই রকমের জাতীয়তাবাদের কথা ভাবেননি। তিনি উদারনীতি, এমনকি যে দাসব্যবস্থাকে তিনি মনেপ্রাণে ঘৃণা করতেন, সেটিরও তিনি পুরোপুরি অবলোপ চাননি, চেয়েছিলেন তার সম্প্রসারণ প্রতিরোধ করতে। নিজেকে তিনি গণতন্ত্রী হিসেবেই দেখতেন এবং গণতন্ত্রের একটি শর্ত যে পারস্পরিক সহনশীলতা, সেটির অভাব তার ক্ষেত্রে ঘটেনি