রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা অনিশ্চিত, বন্ধ হওয়ার পথে স্কুল

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে মানবিক সহায়তা সংকটে বন্ধ হয়ে গেছে বা ব্যাপকভাবে কমে গেছে প্রায় ৬ হাজার ৪০০ অনানুষ্ঠানিক স্কুলের পাঠদান। এতে চার লাখের বেশি শিশু শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

জাতিসংঘের সহযোগিতায় ইউনিসেফ ও সেভ দ্য চিলড্রেন পরিচালিত এসব শিক্ষাকেন্দ্রে চলতি বছরের ৩ জুন থেকে কিন্ডারগার্টেন থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাস স্থগিত রয়েছে। শিক্ষক সংকট এর মূল কারণ-সহায়তা কমে যাওয়ায় ছাঁটাই করা হয়েছে প্রায় ১ হাজার ১০০ শিক্ষক।

বর্তমানে মাত্র পঞ্চম থেকে সপ্তম শ্রেণির ক্লাস মাসে চার দিন এবং অষ্টম থেকে দশম শ্রেণির ক্লাস সপ্তাহে পাঁচ দিন চলছে। অথচ রোহিঙ্গা শিশুদের বড় অংশ ষষ্ঠ শ্রেণির নিচে অধ্যয়নরত।

কুতুপালংয়ের শিক্ষক এহসান উল্লাহ বলেন, যেসব শিক্ষক ছাঁটাই হয়েছেন, তাদের পুনর্বহাল না করলে শিক্ষার ভবিষ্যৎ অন্ধকার। আমরা ক্লাস পুরোপুরি বন্ধ না করে সময় কমিয়ে চালু রাখার প্রস্তাব দিয়েছি।

জানা গেছে, শিক্ষাখাতে চলতি বছরে প্রয়োজন ৭২ মিলিয়ন ডলার। এখন পর্যন্ত মিলেছে ১০ মিলিয়নেরও কম। আর রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের জন্য প্রয়োজনীয় মোট ৯৩৪ মিলিয়ন ডলারের বিপরীতে পাওয়া গেছে মাত্র ৩২ শতাংশ। সহায়তার এই ঘাটতির প্রধান কারণ যুক্তরাষ্ট্রের অনুদানে বড় আকারের কাটছাঁট।

রোহিঙ্গা কমিউনিটির নেতা সাইফুল বলেন, আমাদের সন্তানেরা যেভাবে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, তাতে ভবিষ্যৎ পুরোপুরি অনিশ্চিত হয়ে যাচ্ছে। স্বপ্ন দেখে যে সন্তানরা একদিন নেতৃত্ব দেবে, সেই স্বপ্ন ছিন্নভিন্ন হচ্ছে।

বাংলাদেশ সরকার ২০২০ সালে রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য বার্মিজ কারিকুলামে শিক্ষা কার্যক্রম চালুর অনুমতি দেয়। তবে তা কার্যকর রাখতে এখন প্রয়োজন টেকসই সহায়তা ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জরুরি হস্তক্ষেপ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সংকট নিরসনে প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও মানবিক দায়িত্ববোধ-না হলে পুরো একটি প্রজন্ম হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রবল।