ষড়যন্ত্র করে নির্বাচন বিলম্ব করা যাবে না

ষড়যন্ত্র করে নির্বাচন বিলম্ব করা যাবে না

চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির (সিসিসিআই) পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন স্থগিত ও নির্বাচন প্রক্রিয়া বানচালের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ।

সমাবেশ থেকে নির্বাচন বিলম্বকারীদের লাল কার্ড প্রদর্শন করে সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের প্যানেল লিডার এস. এম. নুরুল হক বলেন, আর কোনো ষড়যন্ত্র করে নির্বাচন বিলম্ব করা যাবে না। নির্বাচন বানচালের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে দিয়ে আপিল করা হয়েছে, যা ব্যবসায়ীদের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার সামিল। তাই চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা আর কোনো বিলম্ব মেনে নেবে না। দ্রুত নির্বাচনই এখন ব্যবসায়ী সমাজের একমাত্র দাবি।

তিনি সমাবেশ থেকে ঘোষণা দেন-আগামী ১৫ দিনের মধ্যে হাইকোর্টের রুল নিষ্পত্তি করে নির্বাচন দিতে হবে। অন্যথায় চট্টগ্রামের সর্বস্তরের ব্যবসায়ীদের নিয়ে গণআন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

শনিবার (১ নভেম্বর) সকালে আগ্রাবাদের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের সামনে চেম্বার ভবনের নিচে আয়োজিত মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে এই ঘোষণা দেন এস. এম. নুরুল হক।

কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া ব্যবসায়ীরা নির্বাচন বানচালকারীদের বিরুদ্ধে লাল কার্ড প্রদর্শন করেন এবং অবিলম্বে হাইকোর্টের রুল নিষ্পত্তি করে দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানান। তারা অভিযোগ করেন, চেম্বারের কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী অটো পরিচালক হওয়ার উদ্দেশ্যে নির্বাচন স্থগিতে ভূমিকা রাখছেন।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, নির্বাচন প্রক্রিয়া বিলম্ব ও আদালতকে প্রভাবিত করে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে চেম্বারের নেতৃত্বে স্বৈরাচারী প্রভাব বজায় রাখার অপচেষ্টা চলছে। তারা ঘোষণা দেন, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন না হলে চট্টগ্রামের সর্বস্তরের ব্যবসায়ীদের নিয়ে বৃহত্তর গণআন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান শাহজাহান মহিউদ্দিন এবং পরিচালনা করেন সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের প্যানেল লিডার এস. এম. নুরুল হক।

এস. এম. নুরুল হক আরো বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী অবৈধ ট্রেড গ্রুপ ও টাউন এসোসিয়েশন বাদ দিয়ে অর্ডিনারি ও এসোসিয়েট শ্রেণির নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। কোনো ষড়যন্ত্র করে নির্বাচন বিলম্ব করা যাবে না। সাধারণ ব্যবসায়ীরা নিরপেক্ষভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে প্রস্তুত।

তিনি আরও বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা নতুন উদ্যোমে স্বাধীন ও স্বচ্ছ চেম্বার গড়তে চাই। গত এক বছর ধরে ব্যবসায়ীদের নিয়ে ফ্যাসিবাদী প্রভাবমুক্ত চেম্বারের আন্দোলন করছি। যারা দীর্ঘ ১৫ বছর ভুয়া ভোটার দিয়ে পরিবারতন্ত্র ও ব্যক্তিস্বার্থ রক্ষা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত লড়াই করে ভুয়া ভোটার বাতিল করিয়েছি। এখন ফ্যাসিবাদের দোসররা নির্বাচন বানচালের চক্রান্তে নেমেছে, তাদের কোনোভাবেই সফল হতে দেওয়া হবে না

তিনি অভিযোগ করেন, চেম্বারের ছয়টি সংগঠন ভুয়া সদস্য দেখিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পরিচালক হতে চায়। তাদের জন্যই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসকে প্রভাবিত করে হাইকোর্টের রুলের বিরুদ্ধে আপিল করে নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে।

বক্তারা বলেন, চেম্বারের নেতৃত্ব কে হবে তা ব্যবসায়ীরাই নির্ধারণ করবে। কোনো প্রভাবশালী গোষ্ঠীর প্রভাব নয়। অটো পরিচালক বানানোর টাউন এসোসিয়েশন ও ট্রেড গ্রুপ পদ্ধতি বাতিল করতে হবে।

পাশাপাশি রোববার (২ নভেম্বর) আন্দরকিল্লা থেকে টেরিবাজার, চাক্তাই, খাতুনগঞ্জসহ বাণিজ্যের কেন্দ্রস্থলগুলোতে পদযাত্রা কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়। এছাড়া নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত ধারাবাহিক কর্মসূচি অব্যাহত রাখারও ঘোষণা দেন ব্যবসায়ীরা।

মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন মো. কামরুল হুদা, মো. আইয়ুব, মো. রফিকুল ইসলাম, মোস্তাক আহমদ চৌধুরী, এস. এম. কামাল উদ্দিন, আহমেদ-উল আলম চৌধুরী (রাসেল), ইমাদ এরশাদ, কাজী ইমরান এফ. রহমান, মো. আবচার হোসেন, মো. আরিফ হোসেন, মো. হুমায়ুন কবির পাটোয়ারী, মো. আজিজুল হক, মো. রাশেদ আলী ও মো. মুছাসহ অন্যান্য ব্যবসায়ী নেতারা।

উল্লেখ্য, শতবর্ষী বাণিজ্য সংগঠন চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন গতকাল শনিবার অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তবে গত বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) এক আদালত আদেশে দুই সপ্তাহের জন্য নির্বাচন স্থগিত করা হয়।