প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও তার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাম্প্রতিক
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও তার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাম্প্রতিক সময়ে বন্দর নিয়ে যেসব বক্তব্য দিয়েছেন তা থেকে অনেকেই ইঙ্গিত পাচ্ছেন যে নিউমুরিং টার্মিনালের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব বিদেশি প্রতিষ্ঠানকেই দেয়া হচ্ছে।
বন্দরের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ করে যে ধারণা পাওয়া গেছে তাতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) ডিপি ওয়ার্ল্ড নামক একটি প্রতিষ্ঠানকে সরকারি–বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) মাধ্যমে জিটুজি ভিত্তিতে টার্মিনালটি পরিচালনার ভার দেয়া হতে পারে।
গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই তাদের এ টার্মিনাল দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিলো। কিন্তু কয়েক বছরেও সেটি তারা চূড়ান্ত করতে পারেনি।
এখন বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ওই প্রতিষ্ঠানটির সাথে আলোচনা আবার গতি পেয়েছে।
আবার এ টার্মিনালকে নিয়ে আলোচনা বেশি হওয়ার মূল কারণ হলো এটি চট্টগ্রাম বন্দরের চারটি টার্মিনালের মধ্যে সবচেয়ে বড়, যাতে এক সাথে চারটি সমুদ্রগামী জাহাজ ভিড়তে পারে। আবার এর সাথে স্বয়ংক্রিয় ক্রেন থাকায় দ্রুতগতিতে কন্টেইনার ওঠানো ও নামানো যায়।
অন্যদিকে বন্দরের হিসাবে, গত বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে তিন লাখ কন্টেইনার বেশি ওঠানামা হয়েছে এই টার্মিনালে।
গত বুধবার চট্টগ্রাম গিয়ে এ টার্মিনাল পরিদর্শন করেছেন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
সেখানে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের অর্থনীতির হৃৎপিণ্ড হলো চট্টগ্রাম বন্দর। তাহলে যে সাইজের হৃৎপিণ্ড আছে, ওই সাইজে চলে না। এই হৃৎপিণ্ড বিশ্ব সাইজের হৃৎপিণ্ড হতে হবে।”
“কাজেই আমরা বললাম যে পৃথিবীর সেরা বন্দর ব্যবস্থাপক যারা আছে, তাদের ডাকো। দেখলাম যে আগেই ডাকা হয়েছে, কিন্তু কাজটা হচ্ছে না। বারবার সবার কাছে আবেদন করছি– এটা তাড়াতাড়ি করে দাও। যতই দিন যাবে, এই হৃৎপিণ্ডকে আর ওইভাবে স্থাপন করতে পারব না। এটা পরিবর্তন না করে বাংলাদেশে অর্থনীতি পরিবর্তন সম্ভব নয়,” বলেছেন তিনি।
ওই অনুষ্ঠানেই প্রধান উপদেষ্টা জানান যে তিনি নৌপরিবহন উপদেষ্টাকে বলেছেন, “যারা বন্দরের ব্যবস্থাপনায় অভিজ্ঞ, পৃথিবীর সেরা যারা, তাদের দিয়ে এই কাজ করাতে হবে– যেভাবেই হোক।”
তারও আগে চলতি মাসের শুরুতে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছিলেন, বন্দরের দক্ষতা বাড়াতে তারা “বিশ্বের সেরা ও অভিজ্ঞ বন্দর ব্যবস্থাপনা কোম্পানিগুলোর” সঙ্গে আলোচনা করছেন।
তিনি বলেছেন, “আমরা সেই কোম্পানিগুলোর সাথে কথা বলছি যাদের পুরো পৃথিবীতে স্ট্যাবলিশড রেকর্ড আছে। কোনো ফালতু কোম্পানি না। যারা ৭০-৮০টা পোর্ট হ্যান্ডেল করছেন, বিভিন্ন মহাদেশে কাজ করছেন, তাদের সাথেই আমরা কথা বলছি। আমরা চাইছি এটা সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ করতে।”
বন্দর কর্মকর্তারা বলছেন, বিদেশি কোনো কোম্পানিকে টার্মিনাল ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দিতে সরকারের নির্বাহী বিভাগ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। কিন্তু এটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব হবে পিপিপি কর্তৃপক্ষের। তারা এর মধ্যেই এ নিয়ে কয়েকটি বৈঠক করেছে বলে জানা গেছে।
এসব কারণেই বন্দরের সাথে বিভিন্ন খাতে যারা জড়িত তারা মনে করেন, দুবাইভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের কাছে টার্মিনাল ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেয়ার দিকেই অগ্রসর হচ্ছে সরকার।