Search
Close this search box.

সাবেক থাই প্রধানমন্ত্রীর মুসলিম গণহত্যার ঘটনায় ক্ষমা প্রার্থনা

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ থাইল্যান্ডের ইতিহাসে এক ভয়াবহ অধ্যায় হলো ‘তাক বাই গণহত্যা’। দুই দশক আগে ঘটে যাওয়া এই হৃদয়বিদারক ঘটনায় বহু নিরপরাধ মুসলিম নিহত হয়েছিলেন। দীর্ঘ সময় পর এবার সেই ঘটনার জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইলেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রা।

২০০৪ সালের ২৫ অক্টোবর, থাইল্যান্ডের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দক্ষিণাঞ্চলীয় তাক বাই শহরে এক ভয়ংকর হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। মালয়েশিয়ার সীমান্তবর্তী নারাথিওয়াত প্রদেশের এই শহরে স্থানীয় মুসলিমরা একটি থানার সামনে বিক্ষোভ করছিলেন। নিরাপত্তা বাহিনী তাদের ওপর গুলি চালায়, এতে সাতজন নিহত হন। পরবর্তীতে আটক ৭৮ জনকে হাত-পা বেঁধে সামরিক ট্রাকে গাদাগাদি করে তোলার সময় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে তাদের মৃত্যু হয়। এই মর্মান্তিক ঘটনার পর বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে।

সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সংবাদমাধ্যম এএফপি ও দ্য ডন জানায়, থাকসিন সিনাওয়াত্রা এই গণহত্যার জন্য প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়েছেন। ক্ষমা প্রার্থনার ঘটনা এমন এক সময় সামনে এলো, যখন মাত্র চার মাস আগে ওই গণহত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত সাত সন্দেহভাজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে। থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চল, যা ‘ডিপ সাউথ’ নামে পরিচিত, সেখানে দীর্ঘদিন ধরেই বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন চলছে। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এই অঞ্চলটি বৌদ্ধ-প্রধান থাইল্যান্ডের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় দিক থেকে বেশ আলাদা।

থাকসিন সিনাওয়াত্রা জানান, তিনি যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তখন স্থানীয় মানুষের প্রতি যত্নশীল ছিলেন। তিনি বলেন, “আমি যদি কোনও ভুল করে থাকি বা কারও মনে কষ্ট দিয়ে থাকি, তবে আমি তার জন্য দুঃখিত এবং ক্ষমা চাইতে চাই।” তার এই বক্তব্যের পর মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, ক্ষমা চাওয়ার পাশাপাশি ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর প্রতি সরাসরি দুঃখপ্রকাশ করাই উচিত।

মানবাধিকার সংগঠন দুয়ে জাই-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা আঞ্চনা হেইমিনা বলেন, “তিনি (থাকসিন) যদি সত্যিই অনুতপ্ত হন, তবে শুধু প্রকাশ্যে নয়, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর সামনাসামনি গিয়ে ক্ষমা চাওয়া উচিত।” গণহত্যার পর দীর্ঘদিন ধরে এই অঞ্চলের জনগণ ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রকৃত দায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

‘তাক বাই গণহত্যা’ থাইল্যান্ডের মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর হওয়া নিপীড়নের একটি নির্মম উদাহরণ হিসেবে ইতিহাসে স্থান পেয়েছে। যদিও দীর্ঘ সময় পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী ক্ষমা চেয়েছেন, তবে সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলোর ন্যায়বিচার এখনো প্রশ্নের মুখে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজর এখন থাইল্যান্ড সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে।