সাবেক মন্ত্রীর মৃত্যু: নেপথ্যে বিএসএমএমইউ পরিচালক ডা. নোমান

স ম জিয়াউর রহমান :
চিকিৎসা অবহেলার তীব্র বিতর্কের মধ্যেই হাসপাতালে মারা গেলেন কারাবন্দী সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও নরসিংদী-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন (৭৫)। আজ ২৯ সেপ্টেম্বর সোমবার সকাল ৮টা ১০ মিনিটে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর এই মৃত্যুকে কেন্দ্র করে চিকিৎসা নিয়ে গাফিলতি এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসার পুরোনো অভিযোগটি নতুন করে জোরালো হয়েছে, যা রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মো. ফারুক সাবেক এই মন্ত্রীর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

জানা গেছে, কিছুদিন আগে কারাগারে থাকা অবস্থায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান এই নেতা। পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তবে তাঁর পরিবার ও অনুসারীদের অভিযোগ, নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের চিকিৎসা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই বিএসএমএমইউর পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. আবু নোমান মো. মোসলেউদ্দিনের নির্দেশে তাঁকে জোরপূর্বক কারাগারে ফেরত পাঠানো হয়।

সে সময় হুমায়ূনের অনুসারীরা অভিযোগ তুলেছিলেন যে, হাসপাতালের পরিচালক রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত হয়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তারা দাবি করেন, অতীতে ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকা ডা. নোমান উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আওয়ামী লীগপন্থী কারাবন্দিদের যথাযথ চিকিৎসায় বাধা দিচ্ছেন এবং “পেশাগত দায়িত্ব ভুলে কসাইয়ের ভূমিকা পালন করছেন।”

সূত্রমতে, বিএসএমএমইউ থেকে কারাগারে ফেরত পাঠানোর পর সাবেক এই মন্ত্রীর শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি হতে থাকে। তাঁর অবস্থা গুরুতর আকার ধারণ করলে কারা কর্তৃপক্ষ তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করে। সেখানেই নোংরা পরিবেশে রেখে তাঁর চিকিৎসা চলছিল, এভাবেই তাকে পরিকল্পিত হত্যা করে জামায়াত শিবির।

নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের এই মৃত্যুকে ‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’ বলে আখ্যা দিয়েছেন তাঁর সমর্থক ও আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী। তাঁরা অভিযোগ করে বলেন, “জামায়াত-শিবিরের এজেন্টরা পরিকল্পিতভাবে আওয়ামী লীগের নেতাদের হত্যা করে যাচ্ছে।” এই ঘটনায় রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

একজন সাবেক মন্ত্রীর এমন মৃত্যুতে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠেছে। তাঁর চিকিৎসা প্রক্রিয়ায় কোনো অবহেলা ছিল কি না এবং এর পেছনে কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য কাজ করেছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে একটি নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এখন সবার দৃষ্টি সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে।