সিরিয়ায় ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনায় গোপন অভিযান চালিয়েছিল ইসরায়েল

সেপ্টেম্বরের প্রথমদিকে সিরিয়ার মায়সাফ শহরের কাছে ভূগর্ভস্থ একটি ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন কারখানায় গোপন কমান্ডো অভিযান চালিয়ে সেটি ধ্বংস করে দিয়েছিল ইসরায়েল।
ইসরায়েলি সংবাদপত্র জেরুজালেম পোস্ট সোমবার জানিয়েছে, এই অভিযানের কথা তারা সেপ্টেম্বরেই জানতে পেরেছিল, কিন্তু তখন খবরটি প্রকাশ করার অনুমতি পায়নি।
রোববার রাতে রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম কান নিউজে প্রকাশিত খবরে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) ওই অভিযানের দায় স্বীকার করে।
তবে ওই স্থাপনায় যে একটি হামলা হয়েছে তা ইসরায়েলের কোনো মন্তব্য ছাড়াই গণমাধ্যম অ্যাক্সিওস ১২ সেপ্টেম্বর প্রথম প্রকাশ করেছিল।
আসাদ সরকারের পতনের পর সিরিয়ায় আইডিএফের বিভিন্ন অভিযানের বিষয়ে এখন ইসরায়েলের সেন্সর ও গোপনীয়তা আইন অনেকটা শিথিল হয়ে উঠেছে বলে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে, জানিয়েছে জেরুজালেম পোস্ট।
ইসরায়েলি কমান্ডোদের ওই গোপন অভিযানে দু’টি উল্লেখযোগ্য স্থাপনাকে লক্ষ্যস্থল করা হয়েছিল। এর একটি সিরিয়ার প্রতিরক্ষা শিল্পের বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান ও গবেষণা কেন্দ্র এবং অপরটি ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের পরিচালনায় ওই ভূগর্ভস্থ ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন কারখানা।
ইসরায়েল বেশ কয়েক বছর ধরে ওই স্থাপনার ওপর নজর রাখছিল। অভিযানের আগেই যুক্তরাষ্ট্রকে বিষয়টি জানানো হয়।
ইরান নির্ভুলভাবে লক্ষ্যে আঘাত হানার মতো প্রকল্পের উপাদান ওই কারখানায় পাঠাচ্ছে, এমনটি শনাক্ত করার পর আইডিএফ এই অভিযান পরিকল্পনা প্রস্তুত করে। ইসরায়েল তখন এই ‘বাড়তে থাকা হুমকি’ মোকাবেলার সিদ্ধান্ত নেয়।
চলমান যুদ্ধ নিয়ে উদ্বেগ থেকে প্রভাবিত হয়ে এই হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে বিশ্বাস। ইসরায়েলের আশঙ্কা ছিল, কারখানাটিতে ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যাপক উৎপাদন শুরু হতে পারে আর তা শেষ পর্যন্ত হিজবুল্লাহর হাতে গিয়ে পড়তে পারে।
অ্যাক্সিওসের প্রতিবেদনে দু’টি সূত্রের বরাত দিয়ে জানানো হয়, ৮ সেপ্টেম্বরের ওই হামলায় ইরানি ভূগর্ভস্থ ক্ষেপণাস্ত্র কারখানটি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়।
একটি সূত্র জানায়, ইসরায়েলের স্পেশাল ইউনিটের কমান্ডোরা কারখানাটির সিরীয় রক্ষীদের পুরোপুরি হতবাক করে দেয় আর অভিযান চলাকালে তাদের বেশ কয়েকজনকে হত্যা করে। কিন্তু এই অভিযান ইরানি বা হিজবুল্লাহর কোনো যোদ্ধা আঘাত পায়নি।
ইসরায়েলি কমান্ডোর তাদের সঙ্গে আনা বিস্ফোরক ব্যবহার করে প্রথমে কারাখানাটির অত্যাধুনিক মেশিনপত্র সব উড়িয়ে দেয়, তারপর ভূগর্ভস্থ পুরো কারখানাটি ধ্বংস করে দেয়।
ইসরায়েলের ভূখণ্ড থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে সিরিয়ার ভেতরে গিয়ে অভিযানটি চালানো হয়। এই অস্বাভাবিক অভিযানটি কয়েক বছরের মধ্যে সিরিয়ার ভেতরে গিয়ে ইরানি লক্ষ্যস্থলে ইসরায়েলি বাহিনীর চালানো প্রথম হামলা ছিল।
সিরিয়ার সামরিক বাহিনী যেন ওই এলাকায় অতিরিক্ত বাহিনী পাঠাতে না পারে বা তাদের ঠেকাতে সেখানে বিমান হামলাও চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। ইসরায়েলের স্থল অভিযানকে কভার দিতে এ বিমান হামলা চালানো হয়।
ওই হামলার পর সিরিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম জানায়, হামলায় অন্তত ১৮ জন নিহত ও ৪০ জন আহত হয়েছেন। সিরিয়া ও ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হামলার তীব্র নিন্দা জানায়।
এই স্পর্শকাতর অভিযানের বিষয়ে ইসরায়েল জো বাইডেনের প্রশাসনকে আগেই অভিহিত করেছে, ওই সূত্র দু’টি অ্যাক্সিওসকে এমনটি জানায়। এরপর অ্যাক্সিওসের পক্ষ থেকে এ হামলার বিষয়ে হোয়াইট হাউজের মন্তব্য চেয়ে অনুরোধ জানানো হলেও তারা সাড়া দেয়নি।