কাশিমপুর কারাগার থেকে আরও ৮ বিডিআর জওয়ানের মুক্তি দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ৯টার দিকে তাদের মুক্তি দেওয়া হয়। এর আগে ১২৬ জনের মুক্তি দেওয়া হয়। এ নিয়ে মোট ১৩৪ জন বিডিআর জওয়ান মুক্তি পেলেন কাশিমপুর কারাগার থেকে।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিডিআর জওয়ানদের মুক্তি দেওয়া শুরু করেন কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ ও হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১ থেকে ২৪ জন, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ থেকে ৮৯ জন, হাইসিকিউরিটি কারাগার থেকে ১৩ জন মুক্তি লাভ করেছেন বলে জানিয়েছেন কারা কর্তৃপক্ষ। রাতে আরও ৮ জনকে মুক্তি দেওয়া হয়।
কারাগারে বিডিআর জওয়ানদের জামিননামা পৌঁছার পর তাদের মুক্তি দেওয়া হবে- এমন সংবাদে সকাল থেকেই কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে তাদের স্বজনরা ভিড় জমান। তারা ফুলের তোড়া, ফুলের মালা নিয়ে তারা স্বজনদের বরণ করে নেন। স্বজনরা আনন্দসিক্ত চোখে কাশিমপুর কারাগারের সামনে এলে এক আবেগঘন পরিবেশ তৈরি হয়।
কারাগারে আরও ১০ জন বিডিআর জওয়ানের জামিননামা পৌঁছেছে বলে কারা কর্তৃপক্ষ জানালেও বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত তাদের মুক্তির ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত জানা যায়নি। পরে রাত সাড়ে ৮টার পর আরও ৮ জন মুক্তি লাভ করেছেন। তারা কারামুক্তির পরপরই তাদের আবেগ অনুভূতির কথা জানিয়েছেন।
কারামুক্ত বিডিআর শহিদুল ইসলাম জানান, যেদিন ওই হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল সেদিন আমি ওখানে ছিলাম না, তারপরও ১৬টি বছর বিনা অপরাধে আমাকে কারাভোগ করতে হলো। আবেগঘন এ মুহূর্তে তিনি তার চাকরির পুনর্বহাল দাবি করেন।
কারামুক্ত বিডিআর রবিউল বলেন, মিথ্যা মামলায় কারাভোগের এই ১৬ বছরে আমি আমার বাবা-মাকে হারিয়েছি। এই অভাব পূরণ হবার মতো নয়। এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, অনেক সময় ভেতরে আমাদের অনেক নির্যাতনের শিকারও হতে হয়েছে। ছাত্র আন্দোলনের কারণে স্বৈরাচার সরকারের পতন ঘটেছে; ফলে আমাদের মুক্তি হলো। ছাত্র আন্দোলনকারী সব ভাই-বোনদের জন্য আমি দোয়া করছি।
কারামুক্ত বিডিআর সদস্য ইউনুস আলীর স্ত্রী ডালিয়া বলেন, এই ১৬ বছর আমার স্বামী কারাগারে থাকা অবস্থায় একদিকে স্বামীর জন্য টেনশন, অপরদিকে অর্থনৈতিক সমস্যায় সন্তানদের নিয়ে খুব কষ্টে দিন পার করেছি। বিনা দোষে যারা আমার স্বামীকে এবং আমাদের পরিবারকে এত কষ্ট দিয়েছে তাদের যেন বিচার হয়, কঠিন বিচার। এ সময় তিনি তার স্বামীর চাকরির পুনর্বহাল দাবি করেন।
বিডিআর সদস্য আসিফ উজ্জ্বলের বড় ভাই আলমগীর হোসেন বলেন, ছাত্র আন্দোলনে হাসিনা সরকারের পতনের কারণেই আমার ভাইয়ের মুক্তি হলো। এ সময় তিনি মিথ্যা মামলাকারীদের কঠিন বিচার কামনা করেন এবং চাকরির পুনর্বহাল দাবি করেন।
কারামুক্ত বিডিআর জামাল উদ্দিন খানের ছোট বোন শাহনাজ পারভীন জানান, আমার ভাইয়ের মুক্তিতে আমি খুব খুশি হয়েছি; কিন্তু ছেলের শোকে আমার মা ২ বছর আগে মারা যান। বড় দুঃখের বিষয় আমার মা তার ছেলে জামালকে একটিবার দেখে যেতে পারল না। আজ মা বেঁচে থাকলে অনেক খুশি হতেন।
এ সময় কারামুক্ত বিডিআর সদস্য এবং তাদের স্বজনরা এই ১৬ বছরে মিথ্যা মামলায় কারাভোগের কারণে যে ক্ষতি হয়েছে সেই ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি সবার চাকরিতে পুনর্বহালের জন্য বর্তমান সরকারের কাছে অনুরোধ জানান।