আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি। সেটাও কী দারুণ একটা মুহূর্তে। দলের যখন প্রয়োজন, ঠিক সে সময়ে। মাত্র ৩৫ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে দল যখন ধুঁকছে, সেখান থেকেই জাকের আলী অনিককে নিয়ে প্রথমে প্রতিরোধ গড়ে পরে প্রতি আক্রমণ চালান তাওহিদ হৃদয়। জাকের ৬৮ রান করে আউট হলেও অন্যপ্রান্ত আগলে ছিলেন ডানহাতি এ ব্যাটসম্যান।
শরীরে একটা পর্যায়ে ক্র্যাম্প করেছে। বারবার শুয়ে পড়ছিলেন উইকেটের পাশে। তবুও হাল ছাড়েননি হৃদয়। ইনিংসের শেষ ওভারে যখন মোহাম্মদ শামির বলে হারশিত রানার ক্যাচে পরিণত হলেন, তখন তাঁর নামের পাশে জ্বলজ্বল করছে ১১৮ বলে ৬ চার ও ২ ছক্কায় ১০০ রান! আর বাংলাদেশও ততক্ষণে পেয়ে গেছে লড়াই করার মতো ২২৮ রানের সংগ্রহ।
তবে এ রান দিয়ে ভারতকে আটকানো যায়নি। শুবমান গিলের সেঞ্চুরিতে ভারত ম্যাচটা জিতেছে ইনিংসের ২১ বল আর ৬ উইকেট হাতে রেখে। ক্যারিয়ারের প্রথম তিন অঙ্ক ছোঁয়ার দিনে হৃদয়কে তাই থাকতে হয়েছে পরাজিত দলেই। স্বাভাবিকভাবেই এটা ভালো লাগার কথা নয় এ ব্যাটসম্যানের। ম্যাচ শেষে মন খারাপের কথা জানিয়ে হৃদয় বলেছেন, দল হেরে গেলে সবই বৃথা। পরের ম্যাচে চোট কাটিয়ে দলে ফিরতে সব কষ্ট করতেও রাজি বলে জানিয়েছেন।
গতকাল রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া পোস্টে হৃদয় লিখেছেন, ‘আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের প্রথম শতক, তবে সবটুকুই বৃথা হয় যখন দল হেরে যায়।’
সেঞ্চুরির জন্য খুশি থাকলেও আরেকটু বেশি রান করার আক্ষেপ থেকে গেল তাঁর কথায়, ‘শতরানের জন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়ার শেষ নেই, তবে মন খারাপ হয়তো আমি আর একটু ভালো খেললে দলের জন্য আরও ভালো হতো। পরের ম্যাচে ফিরতে চাই, তার জন্য যত কষ্টই সহ্য করতে হোক না কেন।’
শুধু যে ফেসবুক পোস্টে এমনটা বলেছেন, তা নয়। ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনেও একই আক্ষেপের কথা উল্লেখ করেছেন হৃদয়, ‘(এখন) আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আমার কাছে মনে হয়, আমার ক্র্যাম্পিংটাই (রান কমের জন্য দায়ী)। আমি ঠিক থাকলে ২০-৩০ রান বেশি করতে পারতাম।’
হৃদয় যখন উইকেটে নেমেছিলেন, তখন স্কোরবোর্ড ছিল রীতিমতো ধ্বংসস্তূপ। সে পরিস্থিতিতে রান করাটা মোটেও সহজ ছিল না বলে জানালেন ডানহাতি এ ব্যাটসম্যান, ‘(বাইরে থেকে হয়তো ব্যাটিং) সহজ মনে হয়েছে, তবে অতটাও সহজ ছিল না ৫ উইকেট যাওয়ার পরে। ওই সময়ে ধৈর্য ধরেছি, নিজের সাথে কথা বলেছি। কীভাবে এখান থেকে বের হওয়ার যায়। আমার ইচ্ছা ছিল ক্যারি করতে পারি যদি। একটা সময় ডট দিয়েছি অনেক, তবে বিশ্বাস ছিল আমি সেটা কাভার দিতে পারব।’
ঘুরে ফিরে আবারও ক্র্যাম্পের জন্য ২০-৩০ কম হওয়ার আক্ষেপ ঝরে হৃদয়ের কণ্ঠে, ‘আমার ক্র্যাম্পটা না হলে হয়ত দলের জন্য ২০-৩০ রান বেশি করে দিতে পারতাম। ওই সুযোগ সামনে আসলে সেই চেষ্টা করব ইনশাল্লাহ।’
৩৫ রানে ৫ উইকেট যাওয়ার পর জাকেরের সঙ্গে ১৫৪ রানের জুটিতে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। সেজন্য জাকেরকেও কৃতিত্ব দিতে ভোলেননি হৃদয়, ‘মাইন্ডসেট একদম ক্লিয়ার ছিল। শুরুতে কিছু উইকেট হারিয়েছি। জাকেরের সাথে বলেছি আমরা চেষ্টা করব ব্যাট করে যেতে ভালো জুটি গড়তে, এটাই আর কিছু না। উইকেট কিছুটা ট্রিকি ছিল তখন। স্পিনারদের বল গ্রিপ করছিল।’
হৃদয় যোগ করেন, ‘আমি ভেবেছিলাম কীভাবে জুটি গড়তে পারি। আমি ভেবেছিলাম বড় জুটি লাগবে এখান থেকে। কাজে লাগাতে পেরেছি সেই প্ল্যান। এরপর আমি আর জাকের মিলে যেভাবে কামব্যাক করেছি। আর একজন যদি খেলাটা শেষ করতে পারতাম তাহলে ২৭০ পর্যন্ত যেতে পারতাম। তারা ৪৭ ওভারে চেইজ করেছে, খুব বেশি সহজও ছিল না। আমরা ৩০-৪০ রান কম করে ফেলেছি।’