অফিসের কাজ থেকে শুরু করে পড়াশোনা সবক্ষেত্রেই বাড়ছে প্রযুক্তিনির্ভরতা। ব্যবহারের সাথে সাথে সবসময় ইন্টারনেটে সংযুক্ত থাকটিা একসময় আসক্তিতে পরিণত হয়ে য্য়। সকালে ঘুম থেকে শুরু করে রাত পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে এর ব্যবহার মস্তিষ্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই এর নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার একান্ত কাম্য। মেডিকেল সায়েন্স এর এক প্রতিবেদনে গবেষণা অনুযায়ী, স্মার্টফোনে ইন্টারনেট সাময়িকভাবে বন্ধ রাখলে মানসিক স্বাস্থ্যে উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক পরিবর্তন হয়।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার একদল গবেষক জানিয়েছেন, স্মার্টফোনে ইন্টারনেট সাময়িকভাবে বন্ধ রাখলে মানসিক স্বাস্থ্যে উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক পরিবর্তন হয়। গবেষণায় অংশ নেওয়া ৯১% ব্যক্তি স্মার্টফোনে সাময়িকভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার না করায় নিজেদের আগের তুলনায় আরও সুস্থ অনুভব করেছেন।
পিএনএএস নেক্সাস সাময়িকীতে প্রকাশিত ‘ব্লকিং মোবাইল ইন্টারনেট অন স্মার্টফোনস ইমপ্রুভস সাসটেইন্ড অ্যাটেনশন, মেন্টাল হেলথ অ্যান্ড সাবজেকটিভ ওয়েল-বিং’ শীর্ষক গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, ২ সপ্তাহ স্মার্টফোনে ইন্টারনেট বন্ধ রাখলে ব্যবহারকারীদের মানসিক স্বাস্থ্য, মনোযোগের স্থায়িত্ব এবং জীবনমানে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হতে পারে। এ বিষয়ে গবেষকদলের সদস্য এবং ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অ্যাট অস্টিনের মনোবিজ্ঞানী অ্যাড্রিয়ান এফ ওয়ার্ড বলেন, ‘আমরা দেখেছি, স্মার্টফোনে ইন্টারনেট বন্ধ রাখার পর গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মানসিক স্বাস্থ্য, ব্যক্তিগত সন্তুষ্টি এবং মনোযোগ ধরে রাখার ক্ষমতা অনেকটাই বেড়ে গেছে।’
এই গবেষণা চলাকালে প্রথমে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার ৪৬৭ জন ব্যক্তিকে ‘ইন্টারভেনশন’ ও ‘কন্ট্রোল’ নামের আলাদা দুটি গ্রুপে বিভক্ত করা হয়। ‘ইন্টারভেনশন’ গ্রুপের অংশগ্রহণকারীদের স্মার্টফোনের একটি বিশেষ অ্যাপ ইনস্টল করা হয়, যা দুই সপ্তাহের জন্য তাদের মোবাইল ইন্টারনেট (ওয়াই-ফাই ও মোবাইল ডেটা) সম্পূর্ণ বন্ধ রাখে। তবে প্রয়োজন হিসেবে তারা ফোনকল, মেসেজ এবং ডেস্কটপ বা ল্যাপটপে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ পেয়েছেন।
অপরদিকে ‘কন্ট্রোল’ গ্রুপের সদস্যদের প্রথম ২ সপ্তাহ স্মার্টফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়। এরপর তাদেরও একই ধরনের নিষেধাজ্ঞার আওতায় নিয়ে আসা হয়। এরপর গবেষকেরা অংশগ্রহণকারীদের স্থায়ী মনোযোগ, মানসিক স্বাস্থ্য এবং ব্যক্তিগত সন্তুষ্টি পর্যালোচনা করেন।
গবেষণায় দেখা যায়, যারা মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট বন্ধ রেখেছিলেন, অংশগ্রহণকারীদের মানসিক স্বাস্থ্য, জীবনমান এবং মনোযোগের স্থায়িত্বে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে।
গবেষকদের মতে, মোবাইলের স্ক্রিন টাইম কমে যাওয়ায় অংশগ্রহণকারীরা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী নানা কাজে যুক্ত হন। এমনকি এই ইতিবাচক প্রভাব অনেক ক্ষেত্রে কিছু বিষণ্নতা প্রতিরোধী ওষুধের চেয়েও বেশি কার্যকরী হয়।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, ইন্টারনেট বন্ধ রাখা অংশগ্রহণকারীরা নিজেদের জীবনের প্রতি আরও সন্তুষ্ট ও আগের তুলনায় ভালো মেজাজে ছিলেন এবং নেতিবাচক অনুভূতি কম প্রকাশ করেছেন।