Search
Close this search box.

চট্টগ্রামে ৬ মাসে খুন-ছিনতাই ও চাঁদাবাজি বেড়েছে ৪০ শতাংশ

পুলিশি তৎপরতা কমে যাওয়ায় গত ছয় মাসে চট্টগ্রামে বেড়েছে খুন, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, কিশোর গ্যাং, অপহরণের মতো অপরাধ। পুলিশের অপরাধ পরিসংখ্যানের তথ্য মতে, গত ছয় মাসে এসব অপরাধ আগের ছয় মাসের তুলনায় বেড়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ। বিশেষ করে রাতে অপরাধের হটস্পটে পরিণত হয়েছে নগরীর ফ্লাইওভারগুলো।

পর্যাপ্ত সড়কবাতি না থাকায় চারটি ফ্লাইওভার ও একটি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে যানবাহন থামিয়ে অস্ত্র দেখিয়ে ছিনতাই, ডাকাতির ঘটনা বাড়ছে। দেশে পুলিশি তৎপরতা কমে যাওয়ার পাশাপাশি এলাকাভিত্তিক আধিপত্য স্থাপনকে সামনে রেখে অপরাধ বাড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

চট্টগ্রাম মহানগরী এলাকায় প্রায় ৮০ লাখ মানুষের জন্য রয়েছে ১৬টি থানা। এ বিশাল এলাকার জন্য পুলিশ সদস্য রয়েছে প্রায় সাত হাজার। ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে পুলিশ এখনো সক্রিয় হয়ে ওঠেনি। পাশাপাশি পুলিশের ওপর হামলাসহ রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় অপরাধের হার বেড়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

পুলিশের অপরাধ পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকায় আগস্ট থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত মোট মামলা হয়েছে ২ হাজার ৬৭টি। এর মধ্যে হত্যা মামলা হয়েছে ৪৪টি, ডাকাতির মামলা হয়েছে ৪২, নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা ১৬৭, অপহরণের ২৩, পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় ৩৪ ও চুরির ঘটনায় মামলা হয়েছে ১৫৯টি। ২০২৪ সালের আগস্টে মেট্রোপলিটনের ১৬টি থানায় ২৪৬টি মামলা হলেও সেপ্টেম্বর থেকে মামলার পরিমাণ বেড়েছে। এর মধ্যে সেপ্টেম্বরে ৩৮০টি মামলা, অক্টোবরে ৩৫৬, নভেম্বরে ৩৭৬, ডিসেম্বরে ৩৩৮ ও জানুয়ারিতে মামলা হয়েছে ৩৭১টি।

বিশ্লেষণে আরও দেখা গেছে, আগস্ট থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত চট্টগ্রাম মহানগরীতে শুধু ছিনতাই, ডাকাতি, অপহরণ ও খুনের ঘটনা ঘটেছে ১১৮টি; যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৪টি বেশি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে খুন ও অপহরণের ঘটনা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফাঁড়ি ও থানার টহল পুলিশের কার্যক্রম কমে যাওয়ায় অপরাধের মাত্রা বাড়ছে।

যদিও অপরাধ বৃদ্ধির বিষয়টি মানতে নারাজ চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার হাসিব আজিজ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সারা দেশের সঙ্গে তুলনা করলে চট্টগ্রামে অপরাধের হার তুলনামূলক কম। বিদ্যমান জনবল কাঠামো দিয়ে সামর্থ্য অনুযায়ী অপরাধীদের ঠেকানোর চেষ্টা করছে পুলিশ। অপরাধ কমিয়ে আনতে এলাকাভিত্তিক সিটিজেন ফোরাম গঠন করা হয়েছে। বিশেষ করে রমজান মাসে শপিংমল ও নগরীর সড়কগুলোয় বাড়তি টহল দেয়া হচ্ছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের সঙ্গে সমন্বয় করে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগ পেলেই দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজ করছে পুলিশ।’

এদিকে ছিনতাই, অপহরণসহ বেশ কয়েকটি অপরাধের হটস্পটে পরিণত হয়েছে চট্টগ্রামের ফ্লাইওভারগুলো। রাতের বেলায় চট্টগ্রামের চারটি ফ্লাইওভার ও একটি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে যানবাহন থামিয়ে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ছিনতাই, ডাকাতির ঘটনা বাড়ছে। পর্যাপ্ত সড়কবাতি না থাকায় অপরাধীরা অবাধে ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধের সুযোগ পাচ্ছে।

এমনকি ফ্লাইওভারের পিলারের নিচে গার্ডার অংশেও কিশোর গ্যাংসহ অপরাধীরা নির্বিঘ্নে অপরাধ ঘটিয়ে চলেছে। ফ্লাইওভারের বৈদ্যুতিক বাতি, কেবল, রেলিংসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ চুরির হার বেড়েছে। এ কারণে মেরামত করেও ফ্লাইওভারগুলোয় সড়কবাতি নিয়মিত জ্বালাতে হিমশিম খাচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন সংস্কারবিহীন থাকার পাশাপাশি নানা অব্যবস্থাপনায় দুর্ঘটনা, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে ফ্লাইওভারগুলোয়। চসিকের পক্ষ থেকে নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চালানোর কথা থাকলেও তারা তেমন কোনো দায়িত্বই পালন করছে না। সড়কবাতি না থাকা, ট্রাফিক সাইন নষ্ট হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়া ও ছিনতাইয়ের কারণে ফ্লাইওভার এড়িয়ে চলেন চালকরা।

চট্টগ্রামের ফ্লাইওভারগুলোর অব্যবস্থাপনা ও ঝুঁকি সম্পর্কে জানতে চাইলে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বিষয়টি অস্বীকার করে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ফ্লাইওভারের বৈদ্যুতিক বাতি, কেবলসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম প্রতিনিয়ত চুরি হয়ে যায়। এ কারণে রাতে কিছু কিছু বৈদ্যুতিক বাতি বন্ধ থাকে। চসিকের পক্ষ থেকে নিয়মিত তদারকির মাধ্যমে মেরামত, সড়ক কার্পেটিংসহ বিভিন্ন সংস্কার কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। ঈদের মধ্যেই সংস্কারকাজ শেষ করে ফ্লাইওভারগুলো নিরাপদ করতে চসিক কাজ করছে।’

চসিকের প্রকৌশল ও বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের দাবি, অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় ফ্লাইওভারে চুরিসহ বিভিন্ন অপরাধ বেড়েছে। মেরামতের পর আবারো একই স্থানে চুরির ঘটনা ঘটছে। নিয়মিত লাইট ও কেবল চুরির কারণে ফ্লাইওভারগুলোর বৈদ্যুতিক বাতির অধিকাংশই বন্ধ থাকে। ফ্লাইওভারের মতো স্থাপনা অন্ধকারে থাকলে অপরাধের হার বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।