পায়ের মাংসপেশিতে টান লাগা (যা আমরা ‘লেগ ক্র্যাম্প’ বা মাংসপেশির সংকোচনও বলি) একটি সাধারণ সমস্যা, যা হঠাৎ করে মাংসপেশির অস্বস্তিকর সংকোচন বা টান অনুভব করায়। এটি সাধারণত সাময়িক হলেও বেশ বেদনাদায়ক হতে পারে। রোগীরা তাঁদের ভাষায় সমস্যা সম্পর্কে বলেন, ‘পায়ের মাংসপেশি চাবায় বা কামড়ায়’, ‘রগ টেনে ধরে’।
এ বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মেডিসিন কনসালট্যান্ট ডা. সাইফ হোসেন খান।
যাঁদের বেশি হয়
এটি সাধারণত বয়স্ক মানুষদের বেশি হয়। বয়সের কারণে মাংসপেশির গঠন ও কার্যকারিতা পরিবর্তন হয়ে এ রকম হতে পারে। কম বয়সীদেরও হতে পারে। কায়িক শ্রম কম করলে এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাবেও হতে পারে। তুলনামূলকভাবে নারীদের লেগ ক্র্যাম্প বেশি হয়।
পায়ের মাংসপেশি টান লাগার কারণ
ডিহাইড্রেশন: শরীরে পানির অভাব মাংসপেশির কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করে।
ইলেকট্রোলাইটের ঘাটতি: পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি মাংসপেশি সংকোচনের কারণ হতে পারে।
অতিরিক্ত পরিশ্রম বা ব্যায়াম: দীর্ঘ সময় ধরে একই মাংসপেশি ব্যবহার করলে টান লাগতে পারে।
অতিরিক্ত ঠান্ডা: শীতল পরিবেশে রক্ত সঞ্চালন হ্রাস পাওয়ার কারণে মাংসপেশি টান ধরে।
অস্বাস্থ্যকর বসার বা দাঁড়ানোর ভঙ্গি: দীর্ঘক্ষণ ভুল ভঙ্গিতে থাকলে মাংসপেশিতে চাপ পড়ে।
রক্ত সঞ্চালনের সমস্যা: রক্ত চলাচলে বাধা থাকলে মাংসপেশি সংকুচিত হতে পারে।
গর্ভাবস্থা: বিশেষ করে শেষ তিন মাসে ক্র্যাম্প হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
বয়স: বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মাংসপেশি দুর্বল হয়ে যায়।
স্বাস্থ্যগত সমস্যার প্রভাব: ডায়াবেটিস, থাইরয়েড সমস্যা বা নার্ভজনিত সমস্যার কারণে এমন হতে পারে।
করণীয়
লেগ ক্র্যাম্প প্রতিরোধে অন্যতম কার্যকরী পন্থা হলো পুষ্টিকর খাবার খাওয়া। পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার খুব কার্যকর। এ ক্ষেত্রে কিছু খাবার নিয়মিত খেতে পারেন—
১. কলায় প্রচুর পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম থাকে।
২. পালংশাক ম্যাগনেশিয়াম, ফলিক অ্যাসিড, পটাশিয়াম, ভিটামিন সি, অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ।
৩. মিষ্টি আলু পটাশিয়াম, ভিটামিন এ, ম্যাগনেশিয়ামের ভালো উৎস।
৪. কাঠবাদামেও প্রচুর ম্যাগনেশিয়াম পাবেন।
পায়ের কিছু ব্যায়াম পেশিতে টান লাগা কমাতে সাহায্য করে। রাতে অনেক সময় পা তুলে রাখলেও ভালো উপকার মেলে। এরপরও না কমলে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ খেতে হতে পারে।
কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন?
যদি মাংসপেশির টান বারবার হয়। দীর্ঘ সময় ধরে ব্যথা থাকে বা প্রচন্ড অস্বস্তি হয়। মাংসপেশিতে ফোলা বা লালচে ভাব দেখা দেয়। অন্য কোনো শারীরিক সমস্যার (যেমন: ডায়াবেটিস বা নার্ভের সমস্যা) কারণে মাংসপেশিতে টান লাগছে বলে মনে হয়। এই সমস্যাটি সাধারণত সহজ পদক্ষেপে নিরাময়যোগ্য হলেও নিয়মিত হলে এর পেছনের কারণ খুঁজে বের করা জরুরি।