ফেসবুকে কনটেন্ট তৈরি করে অর্থ উপার্জন করেন অনেকেই। কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের উৎসাহ দিতে এবার ফেসবুক ‘স্টোরিজ’ থেকেও টাকা আয়ের পথ খুলে দিয়েছে মালিক প্রতিষ্ঠান মেটা। সম্প্রতি (১৪ মার্চ) মেটা ঘোষণা করেছে যে, কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের মধ্যে যারা ইতোমধ্যেই ফেসবুকের কনটেন্ট মনিটাইজেশন প্রোগ্রামে আছেন তাঁরা এবার থেকে তাঁদের ফেসবুক স্টোরিজে শেয়ার করা কনটেন্টের ভিউ থেকেও অর্থ উপার্জন করতে পারবেন।
অর্থাৎ, কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের জন্য ফেসবুকে আয়ের একটি অতিরিক্ত পথ তৈরি হলো। ভিডিও, ইমেজ ও টেক্সট- তিন ধরণের কনটেন্টকেই ফেসবুকে মনিটাইজ করা যায়, অর্থাৎ এগুলো থেকেই অর্থ উপার্জন করা যায়। তবে এতদিন ফেসবুকে রিলস ও সাধারণ পোস্ট থেকে আয় করা গেলেও ‘স্টোরিজ’ ফিচারটির মাধ্যমে অর্থ আয়ের সুযোগ ছিল না। এবারে এই বন্ধ দরজাটিও কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের আয়ের জন্য খুলে দিল মেটা।
ফেসবুক স্টোরিজ কী?
ফেসবুকে কনটেন্ট শেয়ার করার একটি মাধ্যম হচ্ছে ‘স্টোরিজ’। এই ফিচারটির মাধ্যমে একজন ব্যবহারকারী স্বল্প সময়ের জন্য এক বা একাধিক ছবি ও ভিডিও’র একটি কালেকশন শেয়ার করতে পারেন। ফেসবুকের নিউজফিডের একেবারে ওপরে থাকে স্টোরিজগুলো। এক একটি স্টোরিজ ২৪ ঘন্টা স্থায়ী হয়, এরপর নিজে থেকেই এগুলো মুছে যায় বা অদৃশ্য হয়ে যায়। তবে ব্যবহারকারী চাইলে ‘স্টোরি আর্কাইভ’ ফিচারটি ব্যবহার করে নিজের তৈরি স্টোরিগুলো ভবিষ্যতের জন্য আর্কাইভ বা সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন।
‘স্টোরিজ’ ফিচারটি এমনিতেই বেশ জনপ্রিয়। ফেসবুক ব্যবহারকারীরা সাধারণত নিজেদের সাম্প্রতিক কর্মকান্ড (অ্যাকটিভিটিজ) বা ইভেন্ট সম্পর্কে বন্ধুদের জানাতে এই ফিচারটি ব্যবহার করে থাকেন। কনটেন্ট ক্রিয়েটররাও তাঁদের অনুসারীদের (ফলোয়ার) সাথে এনগেজমেন্ট বাড়াতে দিনে একাধিক স্টোরিজ তৈরি করে থাকেন। অর্থাৎ, স্টোরিজ ফিচারটি ব্যবহারে ইতোমধ্যেই বেশ অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন ক্রিয়েটরসহ সাধারণ ফেসবুক ব্যবহারকারীরা।
ফেসবুকে উপার্জনের নতুন এক উৎস হয়ে উঠেছে অতিপরিচিত ‘স্টোরিজ’ ফিচারটি। এক্ষেত্রে সুবিধা হচ্ছে, স্টোরি করার জন্য আলাদা করে কনটেন্ট তৈরি করতে হয় না ক্রিয়েটরদেরকে। ফেসবুক পোস্ট ও রিলসের জন্য তৈরি কনটেন্টই তাঁরা ‘স্টোরি’ আকারে শেয়ার করতে পারছেন। ফলে স্টোরিজ থেকে অর্থ উপার্জনের জন্য আলাদা করে খুব বেশি সময় ও শ্রম দেওয়ার প্রয়োজন পড়বে না।
মেটা জানিয়েছে যে, বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকেই স্টোরিজ-এর মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন ক্রিয়েটররা। তবে উপার্জনের পরিমাণ নির্ভর করবে তাঁদের পারফরম্যান্সের ওপর। উল্লেখ্য, টাকা আয় করতে হলে ক্রিয়েটরদের তৈরি স্টোরিগুলো পাবলিক হতে হবে এবং ক্রিয়েটরদের অবশ্যই ফেসবুকের কনটেন্ট মনিটাইজেশন প্রোগ্রামে যুক্ত থাকতে হবে।
‘স্টোরিজ’ মনিটাইজেশন কেন নিয়ে এল মেটা?
কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের আকৃষ্ট করতেই ফেসবুক স্টোরিজকে মনিটাইজেশনের আওতায় নিয়ে এসেছে মেটা। ক্রিয়েটররা যাতে টিকটকের মতো প্রতিদ্বন্দ্বী প্ল্যাটফর্মগুলোর পরিবর্তে মেটার প্ল্যাটফর্মে সক্রিয় থাকে এবং কনটেন্ট তৈরি করে সেজন্য ফেসবুকে আয়ের নতুন সংস্থান করে দিয়েছে মার্ক জাকারবার্গের প্রতিষ্ঠান।
ক্রিয়েটরদের আকৃষ্ট করতে মেটা গত জানুয়ারিতে নতুন এক প্রোগ্রাম চালু করে যার নাম ‘ব্রেকথ্রু বোনাস প্রোগ্রাম’। এই প্রোগ্রামের অধীনে অন্য প্ল্যাটফর্মের সক্রিয় ক্রিয়েটরদেরকে অতিরিক্ত ৫ হাজার ডলার অফার করে মেটা। শর্ত হচ্ছে, ফেসবুক ও ইন্সটাগ্রামে নির্দিষ্ট সংখ্যক ছবি ও ভিডিও পোস্ট করতে হবে তাঁদেরকে। আমেরিকায় নিষেধাজ্ঞার কবলে থাকা অ্যাপ টিকটকের ক্রিয়েটরদেরকে ফেসবুক, ইন্সটাগ্রামে নিয়ে আসতেই আকর্ষণীয় এই বোনাসের ঘোষণা দিয়েছে মেটা।
উল্লেখ্য, মার্কিন মুলুকে টিকটকের ভাগ্য এখনও দোদুল্যমান, ফলে টিকটকারদের ফেসবুকমুখী করতে চেষ্টা অব্যাহত রাখতে পারে মেটা।