নিজস্ব প্রতিবেদক।
চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভূল চিকিৎসা দেওয়ায় শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে স্বজনদের অভিযোগ। একটি ইনজেকশন পুশ করার পরপরই মোহাম্মদ ইফতেখার (১২) নামের শিশুটির মৃত্যু হয়েছে।তবে এ ঘটনা পরপরই দায়িত্বরত শিশু ওয়ার্ডের চিকিৎসক ও নার্স গা ঢাকা দিয়েছেন।
আজ বুধবার বেলা ১টার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দ্বিতীয় তলার শিশু ওয়ার্ডে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
শিশু ইফতেখার উপজেলার হাইলধর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মাইজপাড়ার নাজিম চেয়ারম্যান বাড়ির মোহাম্মদ ইসহাক মিয়ার ছেলে। সে হাইলধর পীরখাইন মৌলানা আসরাফ আলী চৌধুরী উচ্চবিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র।
দুই বোন এক ভাইয়ের মধ্যে শিশু ইফতেখার সবার ছোট। শিশুর মৃত্যুর খবরে স্বজন ও স্থানীয়রা ভিড় করতে থাকলে জরুরী ভিত্তিতে হাসপাতালে পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
মৃত শিশুর বাবা মোহাম্মদ ইসহাক মিয়া বলেন, ‘আজ দুপুরবেলায় আমার সঙ্গে আমার ছেলে শ্বাসকষ্ট নিয়ে হেঁটে হাসপাতালে এসেছিল। বহির্বিভাগে দেখালে চিকিৎসকের পরামর্শে পার্শ্ববর্তী ঔষধের ফার্মেসি থেকে একটি ইনজেকশন নিয়ে দ্বিতীয় তলায় শিশু ওয়ার্ডে আসি। সেখানে চিকিৎসক ও নার্স ইনজেকশন পুশ করার সঙ্গে সঙ্গে ছেলে বমি করে এবং তার কিছুক্ষণের মধ্যে আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে মারা যায় আমার ছেলে।’
ইসহাক মিয়া আরও বলেন, ‘চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় আমার ছেলের মৃত্যু হয়েছে। একমাত্র ছেলের মৃত্যুর বিচার দাবি করছি।’
ভাইকে হারিয়ে হাসপাতালে আহাজারি করেন ইফতেখারের দুই বোন—সানজু ও আরজু। তাঁরা বলেন, ‘চিকিৎসক ও নার্সের অবহেলার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। ইনজেকশন পুশ করার পর যখন আমার ভাইয়ের বমি হয়, নার্স তখনই তার শরীর থেকে ইনজেকশন খুলে চলে যায়। সে আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে মারা যায়।’
স্থানীয়রা জানায়, এ হাসপাতালের চিকিৎসকেরা প্রতিদিন দুপুর গড়াতেই উপজেলার বিভিন্ন অবৈধ ক্লিনিক ও ল্যাবে চেম্বার করার জন্য চলে যান। দুপুরের পর নার্সরাই হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়। এ ছাড়া হাসপাতালের প্রধান কর্মকর্তাও অবৈধ ক্লিনিক ও ল্যাবে চিকিৎসা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন।
জানতে চাইলে আনোয়ারা স্বাস্থ্য ও পরিবার কর্মকর্তা মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘শিশুটি এ্যজমা রোগ নিয়ে ঈদের আগে ২২ মার্চ অসুস্থ থাকায় ভর্তি হয়েছিল হাসপাতালে। দুই দিন পর সুস্থ হয়ে বাড়িতে চলে গিয়েছিল । আজ দুপুরে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এলে শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ রুবেলের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নেওয়া অবস্থায় মারা যায়। মৃত্যুর পর তার স্বজনেরা ভুল চিকিৎসার অভিযোগ তুলছেন। বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি এবং তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আনোয়ারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনির হোসেন বলেন, ‘হাসপাতালে চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় শিশুমৃত্যুর খবর শুনেছি। হাসপাতালে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় অভিযোগ পেলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।