‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে ভারতের সরকারি ব্রিফিংয়ে প্রতিরক্ষা বাহিনীর যে দুই নারী অংশ নেন, সোফিয়া কুরেশি তাদের একজন। অন্যজন উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং। বুধবার (৭ মে) মধ্যরাতে চালানো এই অভিযান নিয়ে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ব্রিফ করেন তিনি।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, এবারই প্রথমবার দেশটির কোনো বড় সামরিক অভিযানের ওপর আনুষ্ঠানিক প্রেস ব্রিফিংয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন কোনো নারী সেনা অফিসার।
সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে বলছে, ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে তাদের দৃঢ় বক্তব্য কেবল সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের দৃঢ়প্রতিজ্ঞতাই নয়, বরং সশস্ত্র বাহিনীতে নারীদের ক্রমবর্ধমান শক্তির প্রতিফলনেরই প্রকাশ।
কে এই সোফিয়া কুরেশি?
কর্নেল সোফিয়া কুরেশি ভারতীয় সেনাবাহিনীর সামরিক যোগাযোগ ও ইলেকট্রনিকস অভিযান সহায়ক শাখা সিগন্যাল কোরের অন্যতম শীর্ষ কর্মকর্তা। ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ২০২০ সালে এক বার্তায় সোফিয়া সম্পর্কে জানিয়েছিল, ২০১৬ সালে তিনি ১৮টি দেশের উপস্থিতিতে সামরিক মহড়া ‘এক্সারসাইজ ফোর্স ১৮’–এ ৪০ সদস্যের ভারতীয় বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তখন তিনি ছিলেন লে. কর্নেল পদমর্যাদার সেনা কর্মকর্তা। বহুজাতিক মহড়ার ভারতীয় দলের নেতৃত্ব দেওয়া প্রথম নারী কর্মকর্তা তিনিই।
মহারাষ্ট্রের পুনেতে অনুষ্ঠিত সেই মহড়ায় অংশ নিয়েছিল চীন, জাপান, রাশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশ। সেই মহড়ায় অন্য কোনো দেশের নেতৃত্বে কোনো নারী ছিলেন না। এদিকে, ২০০৬ সালে কঙ্গোয় জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা অভিযানে তিনি সামরিক পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
সোফিয়া কুরেশি ভারতের গুজরাট রাজ্যের বাসিন্দা। বায়োকেমিস্ট্রি নিয়ে এমএ পাস করার পর তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৯৯ সালে অফিসার্স ট্রেনিং অ্যাকাডেমি থেকে উত্তীর্ণ হন তিনি।
এদিকে, আজ বুধবারের আনুষ্ঠানিক ব্রিফিংয়ে সোফিয়ার সঙ্গী ছিলেন উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং। তিনি বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টার পাইলট হিসেবে কাজে যোগ দিয়ে ২০১৭ সালে উইং কমান্ডার হন।
উল্লেখ্য, জম্মু-কাশ্মিরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলার দুই সপ্তাহ পর বুধবার মধ্যরাতে পাকিস্তান ও পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মিরের অন্তত ৯টি স্থানে হামলা চালিয়েছে ভারতীয় সামরিক বাহিনী। ভারতীয় সামরিক বাহিনী মাত্র ২৫ মিনিটে অন্তত ২৪টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে পাকিস্তানে। এতে পাকিস্তানে কমপক্ষে ৭০ জন নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে ভারত।
যদিও পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী বলেছে, ভারতের হামলায় ২৬ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। অন্যদিকে, কাশ্মির সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) বরাবর ভারত ও পাকিস্তানের সেনাদের মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে ভারত-শাসিত কাশ্মিরে অন্তত ১০ জন নিহত ও ৩০ জনের বেশি আহত হয়েছেন।
পাকিস্তান দাবি করেছে, তারা ভারতীয় অন্তত পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। তবে ভারতীয় কর্মকর্তারা জম্মু-কাশ্মিরে এখন পর্যন্ত তিনটি ভারতীয় বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন।