হাসনাত আব্দুল্লাহকে এক সপ্তাহের আলটিমেটাম বিএনপির

কুমিল্লা শিল্পকলা একাডেমিতে জুলাই সমাবেশে জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহর দেওয়া বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপি (কুমিল্লা বিভাগ)।

সোমবার (১৯ মে) বিকেলে সাড়ে ৩টার দিকে কুমিল্লা প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলের বিভাগীয় নেতারা হাসনাতের বক্তব্যকে ‘শিশুসুলভ’, ‘রাজনৈতিক অপরিপক্বতা’ এবং ‘মানসিক ভারসাম্যহীনতার লক্ষণ’ বলেন আখ্যা দিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে কুমিল্লা বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ মো. সেলিম ভূঁইয়া বলেন, ‘সম্প্রতি হাসনাত আব্দুল্লাহ একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন—কুমিল্লার বিএনপি নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগের টাকায় রাজনীতি করেন। এ ধরনের বক্তব্য শুধু মিথ্যাচার নয়, এটি একটি রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত, দায়িত্বজ্ঞানহীন ও বিভ্রান্তিকর উক্তি।

এটি আমাদের নেতাকর্মীদের ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ করেছে। রাজনীতিতে অপরিপক্বতার কারণে হাসনাত আব্দুল্লাহ এ ধরনের মন্তব্য করেছেন। তার মানসিক চিকিৎসা প্রয়োজন। একজন দলীয় মুখপাত্র হিসেবে তার এ ধরনের বক্তব্য শুধু লজ্জাজনক নয়, রাজনৈতিক পরিবেশ বিনষ্ট করার অপচেষ্টা বলেও আমরা মনে করি।

সেলিম ভূঁইয়া আরো বলেন, ‘যে ব্যক্তি কিংস পার্টি নামে পরিচিত এনসিপির মুখপাত্র হয়ে এমন দায়িত্বহীন ও উসকানিমূলক বক্তব্য দেন, তার রাজনৈতিক অবস্থান প্রশ্নবিদ্ধ। আমরা মনে করি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচিত হবে এ ধরনের ছেলেমানুষি, অপরিপক্ব রাজনীতিবিদদের মাঠ থেকে সরিয়ে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করা।’
কুমিল্লায় বিএনপির রাজনৈতিক ঐতিহ্য ও বিএনপির অবদান তুলে ধরে তিনি বলেন, কুমিল্লা জেলা বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত। এই জেলার নেতারা অতীতে দলীয় নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, এম কে আনোয়ার, কর্নেল আকবর হোসেন, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়ার মতো নেতারা কুমিল্লা থেকে উঠে এসেছেন। দেশের বিভিন্ন সংকটে কুমিল্লার বিএনপি নেতাকর্মীরা জীবন বাজি রেখে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে কুমিল্লায় বিএনপি যে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছে, তা ঐতিহাসিক। এই আন্দোলনে আমাদের নেতাকর্মীরা শহীদ হয়েছেন, গ্রেপ্তার হয়েছেন, কিন্তু পিছপা হননি। সেই বিপ্লব ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের লক্ষ্যে জনগণকে জাগিয়ে তোলে।

হাসনাত আব্দুল্লাহকে এক সপ্তাহের আলটিমেটাম দিয়ে সেলিম ভূঁইয়া বলেন, ‘তাকে আমাদের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। যদি তিনি তার বক্তব্য প্রত্যাহার না করেন ও ক্ষমা না চান, তাহলে কুমিল্লায় তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালানো কঠিন হয়ে পড়বে। আমরা তাকে এই সুযোগ দিচ্ছি, কিন্তু সময়সীমা অতিক্রান্ত হলে কুমিল্লার রাজপথে তার জায়গা থাকবে না।’

বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাজী আমিনুর রশিদ ইয়াছিন, কুমিল্লা বিভাগীয় বিএনপিরসহ সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী মোস্তাক মিয়া, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাকারিয়া তাহের সুমন, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আমিরুজ্জামান আমীর, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আশিকুর রহমান মাহমুদ ওয়াসিম, কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সভাপতি উদবাতুল বারী আবুসহ কুমিল্লা মহানগর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

 

গত ১৬ মে কুমিল্লা শিল্পকলা একাডেমিতে জুলাই সমাবেশে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আপনারা ভুলে গেলে চলবে না আমরা আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে পেরেছি। কিন্তু তাদের যারা ডোনার, যে অর্থ ব্যবস্থা, সেটি এখনো ঠিকঠাক। আওয়ামী লীগের রাজনীতি এখনো তাদের টাকা চলে। বিএনপির রাজনীতিও এখন আওয়ামী লীগের টাকায় চলে।’

তিনি বলেন, ‘এখনে (সমাবেশে) বিএনপির আপনারা যারা রয়েছেন আমাদের শত্রু ভাইবেন না। এটা আমি আপনাদের ভালোর জন্যই বলছি। কুমিল্লার অনেক উপজেলা রয়েছে যেখানে সব দলের রাজনীতি এখন আওয়ামী লীগের টাকার কাছে বিক্রি হয়ে গিয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচিত আওয়ামী লীগের অর্থনৈতিক কাঠামো ধ্বংস করে দেওয়া। আওয়ামী লীগের সব অর্থ বাজেয়াপ্ত করা।’