মধ্যপ্রাচ্যে উত্তপ্ত ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের আবহে এবার নতুন এক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে ইরান। দেশটি টানা ৬০ ঘণ্টা ধরে আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট সংযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ফলে বিশ্বের সঙ্গে দেশটির যোগাযোগ কার্যত অচল হয়ে গেছে। এই বিচ্ছিন্নতা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে নানা প্রশ্ন উঠেছে—এর পেছনের রহস্য কী?
ইন্টারনেট পর্যবেক্ষণকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা নেটব্লকস জানিয়েছে, ইরানে গত ৬০ ঘণ্টা ধরে চলমান এই বিচ্ছিন্নতা মূলত বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট অ্যাক্সেস সীমিত করার মাধ্যমে তৈরি হয়েছে। ২০ জুনের পর থেকে এই সংযোগ বিচ্ছিন্নতা শুরু হয়। ইরানের সাধারণ জনগণ রাজনৈতিক মতপ্রকাশ, অবাধ যোগাযোগ এবং নিরাপত্তা সতর্কতা গ্রহণের সুযোগ হারিয়ে ফেলেছেন বলে জানানো হয়েছে।
ধারণা করা হচ্ছে, ইরান সরকার ইসরায়েলি সাইবার হামলার আশঙ্কা থেকে এই ব্যবস্থা নিয়েছে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে সরাসরি কোনো বিস্তৃত ব্যাখ্যা আসেনি, তবে সরকারি সূত্রগুলো এটিকে একটি “প্রতিরক্ষামূলক সিদ্ধান্ত” বলেই দাবি করেছে।
নেটব্লকসের গবেষণা পরিচালক ইসিক মাতের বলেন, “২০১৯ সালের নভেম্বরের পর এই প্রথম আমরা ইরানে প্রায় পুরোপুরি আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হতে দেখছি। এমনকি ২০২২ সালে মাহসা আমিনির মৃত্যুকে ঘিরে যে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছিল, তখনও এতটা সংযোগ বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়নি।”
ইরানের ভেতরে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া নতুন কিছু নয়। অতীতেও সরকার বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণ, রাজনৈতিক অস্থিরতা বা স্পর্শকাতর সময় ইন্টারনেট সাময়িকভাবে বন্ধ করেছে। তবে এবার যেহেতু একটি আন্তর্জাতিক সংঘাত (ইরান-ইসরায়েল) চলমান, তাই এমন সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্নতা “স্বাভাবিক ধারার বাইরে” বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বিবিসি জানিয়েছে, তারা ইরানে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না। ফলে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় সাধারণ মানুষের কণ্ঠ শুনতে না পারা, তথ্য যাচাই করতে না পারা এবং বাস্তব অবস্থা বুঝতে না পারার বিষয়টি তাদের জন্যও চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গত শুক্রবার (১৩ জুন) থেকে ইসরায়েল ইরানের বেশ কিছু পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালিয়ে আসছে। এর প্রতিক্রিয়ায় ইরানও ড্রোন ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইসরায়েলের বিভিন্ন অঞ্চল লক্ষ্য করে জবাব দিয়েছে। দু’পক্ষের এই পাল্টাপাল্টি হামলায় এখন পর্যন্ত বহু মানুষ নিহত ও আহত হয়েছেন।